আনন্দপূর্ণিমা নবজাগরণের দিন হোক

লেখক
আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

আগামী ২৩শে মে, বৈশাখী পূর্ণিমা, প্রাউট–প্রবক্তা শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার, যিনি ধর্মগুরু মহাসম্ভূতি শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী নামে বিশ্ববাসীর কাছে সমধিক পরিচিত–তাঁর শুভ ১০৩ তম আবির্ভাব তিথি৷ সারা বিশ্বের আনন্দমার্গীদের কাছে এই বৈশাখী পূর্ণিমা আনন্দপূর্ণিমা রূপে পরিচিত৷ এই পুণ্য তিথিতে মহাসমারোহে সর্বত্র মার্গগুরুদেবের ১০৩ তম জন্ম জয়ন্তী পালন করা হবে৷ এ বছর শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজীর জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষ্যে আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘের পক্ষ থেকে মার্গের দর্শন ও আদর্শের ব্যাপক প্রচার ও প্রসারের কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে৷

তিনি দিয়েছেন ধর্মের ক্ষেত্রকে সমস্ত অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার, গোঁড়ামী, সংকীর্ণতা ও ভাবজড়তা (ডগমা) থেকে মুক্ত করতে যুক্তি ও বিজ্ঞান ভিত্তিক আধ্যাত্মিক দর্শন–আনন্দমার্গ৷ এই আনন্দমার্গ বলছে, সমস্ত মানুষের ধর্ম এক–মানবধর্ম৷ সেখানে হিন্দু, মুসলমান, জৈন, খ্রীষ্টান প্রভৃতি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রশ্ণ ওঠে না৷ জাত–পাতের প্রশ্ণ ওঠে না৷ সবাই পরমপুরুষের অর্থাৎ বিশ্বস্রষ্টার সন্তান৷ তাই মানুষ মানুষ ভাই ভাই৷ মানব সমাজ এক ও অবিভাজ্য৷ তিনি যে আত্মোন্নতির জন্যে আধ্যাত্মিক সাধনার পথ দিয়েছেন, সেখানেও মানুষে মানুষে কোনও জাত–পাত–সম্প্রদায় বিভেদের অবকাশ রাখেননি৷ আজ সামাজিক–র্থনৈতিক– ক্ষেত্রেও যে ভয়াবহ সঙ্কট চলছে, তার সমাধানও তিনি দিয়েছেন তাঁর প্রাউট দর্শনে৷ তিনি বলেন, প্রচলিত গণতন্ত্র যা আজ পুঁজিবাদের সঙ্গে যোগসাজস রেখে মানুষের হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা বা ভোটাধিকার দেবার কথা বলছে–তা, বর্তমানে পুঁজিবাদীদের শোষণেরই উপযুক্ত মাধ্যমে পরিণত হয়েছে৷ এতে দরিদ্র জনসাধারণকে শোষণ করছে মুনাফাবাজ পুঁজিপতিরা, প্রাউটের সমবায়ভিত্তিক ‘অর্থনৈতিক গণতন্ত্রে’র মাধ্যমেই এই জটিল অর্থনৈতিক সংকট থেকে সমাজ মুক্ত হতে পারে–তা প্রাউট–প্রবক্তা তাঁর দর্শনে বিস্তারিত ভাবে ব্যাখ্যা করে দেখিয়েছেন৷ সমাজ আন্দোলনের কর্মসূচীর মাধ্যমে এই দর্শনের বাস্তবায়নেরও পথ তিনি দেখিয়েছেন৷ সামাজিক ক্ষেত্রে আজ যে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ প্রভৃতি অজস্র অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্র থেকে শুরু করে শিক্ষাক্ষেত্রে, ক্রীড়াক্ষেত্রে–সর্বক্ষেত্রেই যে আজ দুর্নীতির রাজ্যপাট চলেছে–এ ভয়ঙ্কর সমস্যার জন্যে তিনি দায়ী করেছেন সমাজের পুঁজিবাদ ও জড়বাদ আশ্রিত ভোগবাদকে৷ তিনি বলেছেন এই আত্মসুখ–কেন্দ্রিক, জড়বাদ–কেন্দ্রিক বা ডগমা–কেন্দ্রিক জীবনবাদ থেকেই এই ধরনের সমস্ত দুর্নীতি ও অপরাধের সৃষ্টি৷ তাই আজ দরকার আধ্যাত্মিকতা ভিত্তিক জীবনাদর্শ–আর মূল কথা হ’ল আত্মবিকাশ ও জগতের হিতসাধনা৷ সমাজে সমস্ত প্রকার ডগমা তথা কুসংস্কারমুক্ত আধ্যাত্মিকতার বন্যা বইয়ে দিয়ে সমাজে নীতিবাদী, সেবাব্রতী ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামী মানুষ তৈরী করতে হবে– প্রাউটে যাঁদের বলা হয়েছে সদ্বিপ্র৷ সদ্বিপ্র সমাজের উত্থানের মাধ্যমে সমাজ সমস্ত কলুষতা, পাপাচার ও শোষণের হাত থেকে মুক্তি পাবে৷ গড়ে উঠবে এক সর্বাঙ্গসুন্দর নোতুন পৃথিবী৷ আসুন আনন্দপূর্ণিমার পুণ্য তিথি স্মরণ করে আমরা এই সর্বকলুষমুক্ত সর্বাঙ্গসুন্দর ‘নোতুন পৃথিবী’ গড়ার সংকল্প গ্রহণ করি৷