প্রবীন প্রাউটিষ্ট নেতা শ্রীপ্রভাত খাঁ গত২২শে নভেম্বর,অপরাধের উৎস সন্ধান বিষয়ে এক আলোচনায় বলেন---আজ সমাজের কোনায় কোনায় যে অশ্লীলতা যে ব্যাভিচার এর জন্যে শুধু অপরাধীকেই দায়ী করলে চলবে না৷ সমাজতাত্ত্বিক ও শাসককে অপরাধের উৎস খুঁজে বার করতে হবে৷ চটুল সাহিত্যরসের, চলচিত্র-সঙ্গীত ও বিজ্ঞানের অব্যবহার সমাজকে কলুষিত করছে, যুব সমাজের মানসিকতাকে হীন প্রবৃত্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷ সমাজে কোন নক্কারজনক ঘটনা ঘটলেই প্রশাসনের ব্যর্থতা নিয়ে ও অপরাধীর কঠোর শাস্তির দাবীতে সরগোল পড়ে যায়৷
শ্রী খাঁ বলেন--- অপরাধীর সাজা হওয়া অবশ্যই দরকার৷ রাষ্ট্রের আইনের শাসন থাকবেই৷ আইন-আদালত অপরাধীকে সাজা দিয়েছে, কিন্তু তাতে সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূল হয়ে যায়নে৷ বরং দিন দিন অপরাধ বাড়ছে, রাষ্ট্রে এর ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে৷ তাই সমাজকে অপরাধমুক্ত করতে হলে সমাজতাত্ত্বিক ও রাষ্ট্রের পরিচালকদের নূতন করে ভাবতে হবে৷ অপরাধীর শাস্তির পাশাপাশি অপরাধের উৎস খুঁজে বার করে তা বন্ধ করতে হবে৷ এ ব্যাপারে শিল্প-কলা-সাহিত্য ও বিজ্ঞান বিষয়ে প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব তথা প্রাউটের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে সমাজ সচেতন শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষকে জানতে হবে৷
প্রাউট প্রবক্তা বলেছেন---‘‘বিজ্ঞান অবশ্যই কলা হিসাবে ব্যবহার হওয়া উচিত, সাহিত্য যেমন সেবা ও কল্যাণের জন্যে তেমনি বিজ্ঞানকেও হতে হবে সেবা ও কল্যাণমূলক৷ বিজ্ঞান সর্বদাই মানব সমাজের যথার্থ প্রগতির জন্যে প্রযুক্ত হওয়া উচিত৷’’ শ্রীখাঁ আক্ষেপ করে বলেন দুর্ভাগ্যের বিষয় দুটোর কোনটাই হচ্ছে না৷ আজকের সাহিত্য শিল্পের কুশীলবদের মনে রাখতে হবে---‘আনন্দমঠ’ ‘নীলদর্পন’ পথের দাবী ব্রিটিশ শাসকরা নিষিদ্ধ করে ছিল৷ কারণ এইসব সাহিত্য শিল্প দেশপ্রেমিক তৈরীতে প্রেরণা যুগিয়ে ছিল৷ বন্দেমাতরম ধবনি দিয়ে সেদিনের তরুণরা হাসতে হাসতে দেশের জন্যে জীবন দিত৷ ঠিক তেমনি আজকের বিপরীতমুখী শিল্প সাহিত্য যুব সমাজকে অধঃপথে ঠেলে দিচ্ছে, নানা নক্কারজনক কাজে ইন্ধন যোগাচ্ছে৷ আর সেইসব কাজে রসদ যোগাচ্ছে বিজ্ঞানের নিত্যনূতন আবিষ্কার৷
এক প্রশ্ণের উত্তরে শ্রী খাঁ বলেন--- বিজ্ঞান ও শিল্প সাহিত্যচর্র্চ কখনই বন্ধ করা উচিত নয়৷ তাতে সমাজের গতি স্তব্ধ হয়ে যাবে৷ বিজ্ঞানের গবেষক ও শিল্প সাহিত্য স্রষ্টাদের মনে রাখতে হবে শুধুমাত্র সেবা ও কল্যাণের জন্যেই শিল্প সাহিত্য ও বিজ্ঞানের ব্যবহার হওয়া উচিত৷ এ সম্পর্কে প্রাউট প্রবক্তার স্পষ্ট কথা--- সাহিত্য ও বিজ্ঞান চর্র্চর পাশাপাশি শিল্পী সাহিত্যিক ও বৈজ্ঞানিকদের আধ্যাত্মিক অনুশীলনে মননিবেশ করতে হবে ও সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সেইপথে চলতে অনুপ্রাণিত করতে হবে৷ তবেই, সমাজ বাঁচবে৷ অপরাধীর সাজা হোক৷ পাশাপাশি অপরাধের উৎস বন্ধ করতেও হবে৷
তাই প্রয়োজন সমস্ত কিছুকে আধ্যাত্মিকতার দিকে চালিত করা৷ আদর্শের ক্ষেত্রে, কর্মেরক্ষেত্রে, শিক্ষারক্ষেত্রে ভাষার ক্ষেত্রে.... সর্বত্রই আধ্যাত্মিকতার উত্তরণ হওয়া প্রয়োজন৷ এটাই প্রাউট প্রবক্তার সুস্পষ্ট নির্দেশনা