অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড সমস্যার সমাধান নয়---দায় এড়িয়ে যাচ্ছে শাসক ও সুশীল সমাজ

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

ধর্ষন জনিত অপরাধে অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড চেয়ে গত ৩রা সেপ্ঢেম্বর সর্বসম্মতিতে বিধানসভায় বিল পাশ হল৷ আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক এদিন বিধান সভায় দ্য অপরাজিতা উইমেন এণ্ড চাইল্ড (ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্রিমিনাল লজ অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল পেশ করেন৷ শাসক বিরোধী সব পক্ষই এই বিলে সমর্থন করেন৷ মুখ্যমন্ত্রী দেশের সমস্ত ধর্ষিতা নির্যাতিতার প্রতি শোক জানিয়ে বলেন---ধর্ষনের মত নিকৃষ্ট অপরাধে কঠোরতম শাস্তির কথা বলা হয়েছে এই বিলে৷

এদিন প্রবীন প্রাউটিষ্ট নেতা শ্রী প্রভাত খাঁ বলেন রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ প্রশাসন আইন-আদালতের প্রয়োজন আছে৷ যোগ্য পুলিশ প্রশাসক ও বিচার ব্যবস্থা অপরাধীদের চরম দণ্ড দিয়ে নির্যাতিতাদের ন্যায় বিচার পাইয়ে দিতে পারে৷ কিন্তু সমাজকে অপরাধমুক্ত করতে পারে না৷ শ্রী খাঁ বলেন প্রাউটের দৃষ্টিতে সকল মানুষের জীবনে কতকগুলি সহজাত বৃত্তি আছে৷ কিছু বৃত্তি যেমন মানুষকে বিকাশের পথে নিয়ে যায়, আবার কিছু বৃত্তি মানুষকে নৈতিক অধোগতির দিকে ঠেলে দেয়৷ যে বৃত্তি মানুষকে অধোগতির দিকে নিয়ে যায় তাকে নিরুৎসাহিত করা উচিত৷ কিন্তু আজ ব্যাপক নগ্ণ চিত্র সিনেমা অশ্লীল সাহিত্য মানুষকে নৈতিক অধোগতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে৷

তাছাড়া অর্থেরও একটা ব্যাপার আছে৷ অর্থের অভাব যেমন মানুষকে অধোগতির দিকে ঠেলে দেয়৷ তেমনি উপযুক্ত পথ নির্দেশনা না পেলে অর্থের প্রাচুর্য মানুষকে হীণবৃত্তির পথে নিয়ে যায়৷ মানুষকে অধোগতির দিকে বা বিকাশের দিকে নিয়ে যেতে শিল্প, সাহিত্য সংস্কৃতির একটা ভূমিকা আছে৷ শ্রী খাঁ বলেন রুশ বিপ্লব, ফরাসী বিপ্লব ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কবি সাহিত্যিক শিল্পীদের ভূমিকা কেউ অস্বীকার করতে পারেন না৷ ঠিক তেমনি আজও মানুষকে এই অধোগতির দিকে ঠেলে দেওয়ার পিছনে তথাকথিত সুশীল সমাজের কবি সাহিত্যিক শিল্পীদের একটা ভূমিকা আছে৷ তেমনি রাষ্ট্রের শাসকও শুধুমাত্র অপরাধীর চরমদণ্ডের আইন করে দায় সারতে পারেন না৷ সমাজ আজ একদল মানুষরূপী দানবের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে৷

শ্রী খাঁ আরও বলেন---প্রাউট অপরাধীর চরমদণ্ড চায় না৷ প্রাউটেরমতে প্রতিটি অপরাধীকেই সংশোধনের সুযোগ দেওয়া দরকার৷ তাছাড়া পুলিশ প্রশাসন বিচার ব্যবস্থা এতটা ত্রুটিমুক্ত নয় যে সব সময় প্রকৃত অপরাধীকে চিহ্ণিত করতে পারে৷ তাই কখনও কোন নির্র্দেষ যেন সাজা না পায়৷ ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের ফাঁসী নিয়েও বিতর্ক আছে৷ তাই প্রকৃত অপরাধীকে শনাক্ত করায় প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থাকে কঠোর সজাগ থাকতে হবে৷ আবার সমাজকে অপরাধ প্রবণতা থেকে মুক্ত করে উন্নত মানসিকতা গড়ে তুলতে সাংস্কৃতিক জগতের একটা দায়িত্ব আছে৷ সুশীল সমাজ সে দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না৷