তাদের মুদ্রাই বিশ্ব অর্থনীতির চালিকাশক্তি৷ বিশ্বের নানা প্রান্তে কোথাও কোনও দেশ বিপদে পড়লে আমেরিকা অর্থসাহায্য করে থাকে৷ বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতি রয়েছে আমেরিকায়৷ তাদের মুদ্রাই বিশ্ব অর্থনীতির চালিকাশক্তি৷ বিশ্বের নানা প্রান্তে কোথাও কোনও দেশ বিপদে পড়লে আমেরিকা অর্থসাহায্য করে থাকে৷ কিন্তু বিশ্ব অর্থনীতির এই ‘বটগাছ’ ও নাকি বিপন্ন৷ আমেরিকার আকাশে দেখা দিয়েছে মন্দার কালো মেঘ৷ দেশের অভ্যন্তরীণ বেশ কিছু সমস্যা অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের চিন্তায় ফেলেছে৷ বিশেষজ্ঞদের দাবি, একের পর এক অর্থনীতি সংক্রান্ত জট মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে আমেরিকায়৷ সরকার অর্থনীতি সামলাতে কিছুটা হলেও হোঁচট খাচ্ছে৷ এতে খুব শীঘ্র বিপদের আশঙ্কা না থাকলেও ভবিষ্যতের জন্য সিঁদুরে মেঘ ঘনাচ্ছে৷ ১৯২৯ সালে মন্দা আঘাত হেনেছিল আমেরিকার অর্থনীতিতে৷ টানা ১০ বছর পর্যন্ত সেই মন্দা চলেছিল৷ শুধু আমেরিকা নয়, বিশ্বের অনেক দেশকেই প্রভাবিত করেছিল সেই মন্দা৷ অত বড় মাপের না হলেও শীঘ্রই মন্দা আমেরিকার বাজার গ্রাস করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা৷ ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, শেয়ার বাজারের মন্দা, ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং ইউরোপ ও চিনের অর্থনীতির মন্থর বৃদ্ধি নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পিটার৷ অর্থনৈতিক মন্দা কী? অর্থবর্ষের পর পর দু’টি ত্রৈমাসিকে জিডিপি পতন হলে বিশেষজ্ঞ এবং অর্থনীতিবিদেরা মন্দার আশঙ্কা করেন৷ ‘ন্যাশনাল ব্যুরো অফ ইকোনমিক রিসার্চ’ মন্দাকে কোনও দেশের অর্থনৈতিক কার্যকলাপের উল্লেখযোগ্য পতন হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন৷ আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ফেডারাল রিজার্ভের নীতিনির্ধারণী সংস্থা ‘ফেডারেল ওপেন মার্কেট কমিটি’ জুন মাসে অনুমান করেছে, ২০২৪-’২৫ অর্থবর্ষে সে দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি হতে পারে মাত্র এক শতাংশ৷ ফেড রিজার্ভ ২০২৩ সালে চার বার সুদের হার বাড়িয়েছে ৷ যা আমেরিকা-সহ বিভিন্ন দেশের শেয়ার বাজারকে টেনে নামিয়েছে৷ পাশাপাশি অনুমান, আমেরিকার অনেক সংস্থার অর্থনৈতিক বৃদ্ধিও এ বছর কম হতে পারে৷ ফোর্বসের মতে, ২০২২ সাল থেকে অন্তত একটি ইঙ্গিত আমেরিকার আসন্ন আর্থিক মন্দাকে নির্দেশ করছে৷ দাবির সমর্থনে ট্রেজারি নোটের বৃদ্ধির বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করেছে তারা৷ বিভিন্ন সমীক্ষার মতে, আমেরিকার কর্মসংস্থানের অবস্থাও খুব একটা ভাল নয়৷ আমেরিকার বেকারত্বের হার ঐতিহাসিক ভাবে কম, মাত্র ৩.৮ শতাংশ৷ আমেরিকায় সরকারের অন্যতম মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ধর্মঘটও৷ গত বছরেই দেশের গাড়ি নির্মাণকারী সংস্থাগুলির কর্মীরা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন৷ ক্রমে ধর্মঘটের পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছিল৷ ফলে আমেরিকার অর্থনীতির একটা বড় ভরসার জায়গা নড়বড়ে হয়ে উঠেছে বলে খবর৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু গাড়ি নয়, সামগ্রিক ভাবে আমেরিকার নির্মাণশিল্পের গতিই সম্প্রতি শ্লথ হয়েছে৷ নতুন করে ডালপালা মেলতে পারছে না৷ উৎপাদন কমে এসেছে৷কোভিড অতিমারির ধাক্কাও আমেরিকা ঠিক মতো এখনও সামলে উঠতে পারেনি বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ৷
গত বছরের শেষে বিভিন্ন প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, আমেরিকার বিভিন্ন ব্যাঙ্কে সুদের হার ক্রমশ বাড়ছে৷ অর্থনীতিবিদেরা সেই বিষয়টিকেও খুব ভাল চোখে দেখছেন না৷ এতে ভবিষ্যতে সে দেশের অর্থনীতির উপর প্রভাব পড়তে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা৷ অর্থনীতিবিদেরা এই কারণগুলিকে তুচ্ছ করে দেখার পক্ষপাতী নন৷ আগামী দিনে এই ছোট সমস্যাগুলিই মন্দা ডেকে আনতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা৷ আমেরিকা বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি হওয়ায় সেখানে মন্দা দেখা দিলে তার প্রভাব পড়তে পারে ভারত-সহ অন্য দেশের উপরেও৷ সর্বত্র মূল্যবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতির মতো সমস্যা প্রকট হবে৷ সার্বিক ভাবে বিশ্ব অর্থনীতি মন্দার দিকে এগিয়ে যাবে৷ তাই আমেরিকার অর্থনীতির গতিপ্রকৃতির দিকে বিশেষ নজর রাখছেন বিশেষজ্ঞেরা৷