প্রবীণ প্রাউটিষ্ট নেতা শ্রী প্রভাত খাঁ বলেন--- নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দলগুলো বোটের (ভোটের) প্রচারে এসে অনেক গালভরা আশ্বাস দিয়ে যায়৷ কিন্তু অর্থনীতিকে স্ব-নির্ভর করে গড়ে তোলার কোন বাস্তবমুখী পরিকল্পনার কথা বলেন না৷ তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন দেশের রাজনৈতিক দলগুলো পুঁজিপতি নির্ভর হয়ে আছে সেই স্বাধীনতার জন্মলগ্ণ থেকেই৷ তাই দেশে এখন চলছে চরম পুঁজিবাদী শোষণ৷ জমিদার জোতদারদের দিন চলে গেছে৷ এখন কর্ষককুলকে পুঁজিপতি নির্ভর করতে আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে৷ পাশাপাশি যুব সমাজকে বিপথগামী করতে রাজ্যের সর্বত্র মদ, জুয়া ও নিম্নরুচির সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ জনগণ আর্থিক ও মানসিক শোষণের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছেন৷ শ্রী খাঁকে প্রশ্ণ করা হয়---একটি রাজনৈতিক দল যে সোনার বাঙলা গড়ার প্রচার করছে- তা কি সম্ভব হবে?
শ্রী খাঁ বলেন--- সোনার বাঙলা মানে তো রাজ্যটাকে সোনায় মুড়ে দেওয়া নয়৷ প্রতিটি মানুষের হাতে ক্রয়ক্ষমতা দিতে হবে জীবন ধরণের ন্যুনতম প্রয়োজন পূর্তির জন্যে৷ অর্থনৈতিক দিক থেকে বাঙলা যেদিন স্ব-নির্ভর হবে সেই দিনই সোনার বাঙলা বলা যাবে৷ এরজন্যে চাই বাস্তবমুখী ও প্রয়োগভিত্তিক আর্থিক পরিকল্পনা, যা বর্তমান পুঁজিবাদ নির্ভর অর্থনৈতিক সংরচনায় সম্ভব নয়৷
শ্রী খাঁর কথায় পুঁজিবাদ নির্ভর কেন্দ্রীত অর্থনীতি বাতিল করে প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব তথা ‘প্রাউটে’র বিকেন্দ্রীত অর্থনৈতিক পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে৷ তবেই গড়ে উঠবে সোনার বাঙলা৷
তবে সবার আগে রাজনৈতিক নেতা ও অর্থনীতির রূপকারদের শুভবুদ্ধির প্রয়োজন৷ মনে রাখতে হবে উন্নত শুভবুদ্ধিই সামাজিক অর্থনৈতিক সকল সমস্যার সমাধান করে দিতে পারে৷ কিন্তু বর্তমান সমাজের সর্বস্তরে দুর্নীতি বাসা বেঁধে আছে৷ এই দুর্নীতি দূর না হলে কোন সমস্যারই সমাধান সম্ভব নয়৷ শ্রী খাঁকে প্রশ্ণ করা হয়- এই দুর্নীতি কি দূরকরা সম্ভব? তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন অবশ্যই সম্ভব৷ দস্যু রত্নাকর যদি মহাকবি বাল্মিকী হতে পারেন তাহলে এই দুর্নীতি দূর করা কেন সম্ভব হবে না৷ তিনি বলেন প্রাউট প্রবক্তাও দুর্ধর্ষ কালি ডাকাতকে মহাসাধক কালিকানন্দ অবধূতে রূপান্তরিত করেছিলেন৷
তাঁর কথায় মানুষকে আধ্যাত্মিক নীতিবাদে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে৷ আজকের মানুষ মানবধর্ম থেকে দূরে সরে গিয়ে উপধর্ম নিয়ে মেতে আছে৷ ধর্মের নামে নানা ব্যভিচার অনাচারে লিপ্ত হচ্ছে৷ ফলে মানুষের নৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে৷ মানুষকে মানবধর্ম তথা ভাগবত ধর্মের অনুশীলন করে আধ্যাত্মিক নীতিবাদে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে৷ প্রাউটের প্রবক্তা এই নেতৃত্বের নাম দিয়েছেন সদবিপ্র নেতৃত্ব৷ এই সদ্বিপ্র নেতৃত্বের হাতে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিলে তবেই সোনার বাঙলা গড়া সম্ভব হবে৷
আত্মনির্ভরতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন মানুষকে আগে আর্থিক স্ব-নির্ভরতা দিতে হবে৷ এই বিষয়ে তিনি বলেন--- প্রথমত খাদ্যে স্ব-নির্ভর হতে হবে ও অর্থকরী ফসল উৎপাদনের দিকে জোর দিতে হবে৷ প্রতিটি মানুষ যাতে খাদ্য, বস্ত্র,বাসস্থান চিকিৎসা ও শিক্ষার সুযোগ পায় সে বিষয়ে নিশ্চিততা দিতে হবে৷ এর জন্যে সমবায়ের মাধ্যমে কৃষি ও শিল্প পরিকল্পনা গড়ে তুলতে হবে৷ স্থানীয় মানুষের হাতে অর্থনৈতিক পরিকল্পনার দায়িত্ব দিতে হবে৷ এটাই ‘প্রাউট’ তথা প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্বের বাস্তবমুখী পরিকল্পনা৷ কিন্তু ভারতবর্ষের মত বৈশ্যশাসিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রাউটের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে কে? রাষ্ট্রে রাজনীতি, অর্থনীতি সমাজব্যবস্থা এমনকি শিক্ষা সাহিত্য সংস্কৃতির অঙ্গনেও পুঁজিপতিদের আনাগোনা৷ শ্রী খাঁ বলেন শেষ কথা জেনে রাখুন --- এই পুঁজিবাদ নির্ভরতা ত্যাগ না করলে আত্মনির্ভরতার কথা অসার বুলি হয়েই পড়ে থাকবে৷ দেশ আরও পিছিয়ে যাবে৷ পরিশেষে তিনি বলেন মানুষের শুভবুদ্ধির উদয় হোক৷ সঠিক পথে চলতে শিখুক৷ প্রাউট প্রবক্তার কথায় ‘মানুষের উন্নত শুভবুদ্ধিই সকল মানবীয় সমস্যার একমাত্র সমাধান৷’