আমরা বাঙালী অসম রাজ্য সচিব সাধন পুরকায়স্থ এক প্রেস বার্র্তয় বলেন---যারা অসমের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় ২৬টি দুর্গা মণ্ডপ আক্রমণ করল এরা বাঙালীর ভাষা,কৃষ্টি,সংস্কৃতির উপর আক্রমণ করে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চায়৷ একের পর এক পূজা মণ্ডপ থেকে বাংলায় লেখা বিভিন্ন ধরণের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হল৷ সরকারি তথা প্রশাসনিক মদত না থাকলে এই ধরনের বিদ্বেষমূলক কাজ করা সম্ভব নয়৷ ‘‘আমরা বাঙালী’’ অসম রাজ্য কমিটি, উগ্র বাঙালী বিদ্বেষী অসমীয়া তথাকথিত জাতীয়তাবাদীদের এই কুকর্মের নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছি৷ সেই সঙ্গে অসম সাহিত্য সভা সহ অসমীয়া বুদ্ধিজীবিদের এই ব্যাপারে নীরবতারও তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি৷
বাংলা ভাষা অসম রাজ্যের অন্যতম সরকারী ভাষা৷ সাংবিধানিক ভাবে স্বীকৃত ভাষা৷ মাতৃভাষার অধিকার বাঙালীর মৌলিক অধিকার৷ তার সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের৷ কিন্তু অসম সরকারের এ বিষয়ে আমরা নীরবতা পরিলক্ষিত করছি৷ আগামীতে আমাদের জন্মদাত্রী মাকে মা বলে ডাকার উপর নিষেধাজ্ঞা জারী হবে৷ পরিস্থিতি সেই দিকে এগিয়ে যাচ্ছে৷ এইভাবে যদি উগ্র জাতীয়তাবাদী কার্যকলাপ চলতে থাকে, তাহলে ভারতীয় জাতীয়তাবাদ থাকলো কোথায়?
এই সরকারের আমলে অসমে বসবাসকারী বাঙালীর কোন অধিকার নেই৷ আকারে ইঙ্গিতে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার উক্তি থেকে আমাদের তা বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না৷
এদিকে আহোম বীর লাচিত বরফুকনকে নিয়ে ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে৷ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেছিলেন অখণ্ড ভারতের স্বাধীনতার জন্য তাদের ইতিহাসকে আহোম রাজত্বের সঙ্গে গুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ আজকে অসম ব্রিটিশদের তৈরী অসম৷ আজ মিজোরাম, অরুণাচল, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, সিলেট-১৮৭৪ সালে ব্রিটিশের তৈরি অসমে নেই৷ এদিকে বড়োরা ও অন্যান্য এলাকায় পৃথক রাজ্যের দাবী উঠিয়েছে৷ দাবীগুলি অসাংবিধানিক নয়৷
অসম সরকার একদিকে হিন্দুত্ববাদের কথা বলছেন, আরেকদিকে উগ্র অসমীয়া জাতীয়তাবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন৷ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রমাণিত হয়েছে, এই সরকার অসমীয়া জাতীয়তাবাদী সরকার৷
অসমের মন্ত্রী রনজিৎ বরাক উপত্যকায় এসে বললেন, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় পুজো মণ্ডপে অসমীয়া ভাষার ব্যানার লাগানো উচিত ছিল!
‘আমরা বাঙালী অসম রাজ্য কমিটি তার এই বাংলা ভাষা বিদ্বেষী চিন্তাধারা তথা আগ্রাসী মানসিকতার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে৷ সংঘটনের অসম রাজ্য সচিব সাধন পুরকায়স্থ জানান--- বড়ো ভূমি বাদে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার সরকারি ভাষা অসমীয়া সেটা সকলের জানা৷ তা বলে বাঙালী তার নিজস্ব অনুষ্ঠানে উৎসবে বাংলা ব্যবহার করতে পারবে না এমন স্বেচ্ছাচারী বক্তব্য সংবিধানের নামে শপথ নেওয়া একজন মন্ত্রীর মুখ থেকে আশা করা যায় না৷ বাঙালীদের নিজস্ব বিবাহ ও শ্রাদ্ধ তথা বারো মাসে তেরো পার্বণেও কি বাংলার রীতিনীতি মানা যাবে না? আগামীতে আপনারা হয়তো বলবেন প্রকাশ্যে জন্মাদাত্রী মাকে আর মা বলে ডাকা যাবে না৷
ভারতবর্ষের বিভিন্ন শহরে অনেক সামাজিক অনুষ্ঠান বাঙালীরা যেমন করে আসছেন অসমিয়ারাও করেন৷ মুম্বাই দিল্লি ব্যাঙ্গালোরে কোন অনুষ্ঠানে কি সেখানকার সরকারি ভাষা কন্নড়, মারাঠি বা হিন্দ ব্যবহার করেন?
মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় লন্ডন সহ পৃথিবীর অনেক দেশে বাঙালিরা বসবাস করেন নিজস্ব ভাষায় নিজেদের সাংস্কৃতিক সামাজিক কাজের ব্যানার লাগান, সেখানে তো এই প্রশ্ণ আসে না৷
অসম একটি বহুভাষিক রাজ্য সেটা আপনাদের অজানা নয়৷ সাংবিধানিক রীতি-নীতি মেনে অসমের বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যায় কম হলেও বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয় আছে৷ তাহলে আপনারা কি ধীরে ধীরে বাঙালীর মৌলিক অধিকার হরণ করে স্কুলগুলো বন্ধ করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন! বাঙালীরা সংঘাত চায়না, সমন্বয় চায়৷ আমরা অসমীয়া ভাষা সংস্কৃতি বিরোধী নয়, কিন্তু বাংলা বাঙালী বিদ্বেষ ছড়িয়ে অসমীয়া জাতীয়তাবাদীরা যেভাবে নিজেদের অস্তিত্বকে বাঁচিয়ে রাখতে চাইছেন তা অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বলে আমরা মনে করি৷