শিলিগুড়িতে গত ১৯শে জুলাই দার্জিলিংয়ে গত একমাসের বেশি ধরে চলা হিংসাশ্রয়ী বিচ্ছিন্নতাবাদী ‘গোর্র্খল্যান্ড’ আন্দোলনের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ‘আমরা বাঙালী’র এক মহামিছিলের আয়োজন করা হয়৷ এই মহামিছিলে উত্তর বাঙলার বিভিন্ন জেলা থেকে ও দক্ষিণ বাঙলা থেকে হাজার হাজার ‘আমরা বাঙালী’ সমর্থক যোগদান করেন৷ মিছিলকারীদের মুখে শ্লোগান ছিল ‘‘বাঙলাভাগ হতে দেব না’’, ‘গোর্র্খল্যান্ড আন্দোলনের প্রতিবাদে সমস্ত বাঙালী ঐক্যবদ্ধ হও’’, ‘‘অবিলম্বে বিমল গুরুং , রোশন গিরিদের গ্রেফতার করতে হবে’’ ইত্যাদি৷
আনুমানিক দুপুর ১ টা ৩০ মিনিটে শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম থেকে এই মহামিছিল বের হয়৷ এখান থেকে মিছিল ভেনাস মোড়, হাওড়া পেট্রোল পাম্প, সেবক রোড, পানিট্যাঙ্কি মোড়, বিধান রোড ও কোর্ট মোড় হয়ে বাঘাযতীন পার্কে গিয়ে পৌঁছায়৷ মিছিলের দুপাশে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করে ‘আমরা বাঙালী’র আন্দোলনকে সমর্থন জানায়৷ তাদের মধ্যে ‘আমরা বাঙালীর’ বক্তব্য সম্বলিত প্রচারপত্রও বিলি করা হয়৷
মিছিলের পুরোভাগে একজনকে মোর্র্চ প্রধান বিমল গুরুং সাজিয়ে ও অন্য একজনকে সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবন চামলিং সাজিয়ে তাদের বেঁধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ও তাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোর্র্খল্যান্ড আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙলা ভাঙার চক্রান্ত করার দায়ে প্রতীকিভাবে তাদের শাস্তি দেওয়ার অভিনয় করা হয়৷
মিছিল শেষে অনুষ্ঠিত জনসমাবেশে শিলিগুড়ির সাধরণ মানুষও দলে দলে যোগদান করেন৷ জনসভায় গোর্র্খল্যান্ড আন্দোলনের প্রতিবাদে প্রথম স্বাগত ভাষণে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সাংঘটনিক সচিব খুশীরঞ্জন মন্ডল৷ এরপর বক্তব্য রাখেন আমরা বাঙালীর নেতা বিকাশ বিশ্বাস , কেন্দ্রীয় সচিব বকুল রায়, কেন্দ্রীয় সহসচিব তারাপদ বিশ্বাস, দাজিলিং জেলাসচিব বাসুদেব সাহা, মহিলা নেত্রী জয়া সাহা, উত্তরবঙ্গের সাংঘটনিক সচিব দলেন রায়, জয়ন্ত দাশ, রাজু প্রামাণিক, কেশব সিংহ প্রমুখ৷
কেন্দ্রীয় সচিব বকুল রায়, তাঁর ভাষণে বলেন, আমরা শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে বাঙলা বিভাগ রুখবই৷ তাঁকে অনুসরণ করে সমাবেশে উপস্থিত সবাই দাঁড়িয়ে এই শপথ গ্রহণ করেন৷
সমস্ত বক্তার বক্তব্যের মূল কথা ছিল, গোর্র্খরা নেপালের আদি বাসিন্দা নয়৷ এরা জীবিকা অর্জনের জন্যে নেপাল থেকে আগত, এখানে এসে এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা লেপচা, ভুটিয়া ও অন্যান্য বাঙালী জনগোষ্ঠীকে পাহাড় থেকে হটিয়ে--- পাহাড়ে তাদের অধিকারকে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করে দার্জিলিংয়ে পৃথক গোর্র্খল্যান্ড রাজ্য দাবী করে বাঙলা থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চায়৷
বাঙলা তাদের জীবিকা অর্জনের সুযোগ দিয়েছে, তার পরিবর্তে এরা বাঙলার বুকে ছুরি চালাতে চাইছে৷ এই বিশ্বাসঘাতকতাকে কোন মতেই বরদাস্ত করা যাবে না৷ নেতারা জিটিএকেও বাতিলের দাবী জানান, কারণ, ‘জিটিএ’ শব্দটির মধ্যে গোর্র্খল্যান্ড কথাটি রয়েছে যা পুরোপুরি অযৌক্তিক কারণ এটা কোন যুক্তিতেই গোর্র্খদের ল্যান্ড নয়৷ গোর্র্খদের ল্যান্ড নেপালে৷ তারা নেপালে গিয়ে গোর্র্খল্যান্ড আন্দোলন করুক৷ এখানে থাকতে গেলে বাঙালীদের সঙ্গে মিলেমিশে বাঙলার ভাষাসংসৃকতির সঙ্গে একাত্মভাবেই থাকতে হবে৷
বক্তারা সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবন চামলিং-এর গোর্র্খল্যান্ডের দাবীর প্রতি সমর্থনেরও তীব্র প্রতিবাদ জানান৷
বক্তারা আরো বলেন কেন্দ্রীয় সরকারের মদতে বিচ্ছিন্নতাবাদী বিমল গুরুংরা এতটা বাড় বেড়েছে৷ কারণ বিজেপি দার্জিলিংয়ে বিধানসভা ও লোকসভা নির্র্বচনে জিততে গুরুংদের অন্যায় দাবীকে সমর্থন জানিয়েছেন৷ কেন্দ্রীয় সরকার এখনো বুঝছে না দার্জিলিংয়ে অসাংবিধানিক ভাবে মাত্র আড়াইটি ব্লক নিয়ে এক অতিক্ষুদ্র ও দুর্বল পৃথক রাজ্য গড়লে তা হবে বিদেশী শক্তিদের অবাধ লীলাক্ষেত্র৷ এই গোর্র্খল্যান্ড আন্দোলনের পেছনে স্পষ্টতঃ চীনের মদত রয়েছে৷ নেপাল থেকে মাওবাদী জঙ্গীরা এদের হয়ে দাজিলিংয়ে হামলা চালাচ্ছে৷ দার্জিলিংকে বিদেশী শক্তির ক্রীড়াক্ষেত্র করতে দিলে ভারতের সার্র্বেভৌমত্ব বিপন্ন হবে৷ দার্জিলিংএ আরেকটা ‘কশ্মীর’ তৈরী হবে৷ সেজন্যে কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত অবিলম্বে দার্জিলিংয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকারীদের কঠোর হস্তে দমন করা৷
জনসভায় মহিলা নেত্রী জয়া সাহা গোর্র্খল্যান্ড আন্দোলনের প্রতিবাদে স্বরচিত কবিতাও পাঠ করেন ও ‘স্পান্দনিক’ শিল্পীগোষ্ঠী সঙ্গীত পরিবেশন করেন৷ সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন শুভেন্দু ঘোষ৷