এটা খুবই উদ্বেগের বিষয় যে ভারত সরকার তার হাতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক উদ্যোগ বা শিল্প সংস্থাগুলিকে একে একে পুঁজিপতিদের হাতে বিক্রয় করে দিচ্ছে৷ মন্তব্য প্রবীন প্রাউটিষ্ট নেতা প্রভাত খাঁর৷
গত ১৩ই ডিসেম্বর লোকসভায় এক প্রশ্ণের উত্তরে অর্থমন্ত্রকের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে জানানো হয় বেঙ্গল কেমিক্যাল বেসরকারি হাতে বিক্রি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ সেইসঙ্গে বাঙলার আরও দুটি শিল্প দুর্গাপুর অ্যালয় স্টিল ও ব্রীজ এ্যাণ্ড রুফ বিক্রয়ের প্রক্রিয়া চলছে৷
শ্রী প্রভাত খাঁ বলেন--- প্রধানমন্ত্রী বড় গলা করে আত্মনির্ভরতার কথা বলেছিলেন তা যে কেবল কথার কথা, ফাঁকা আওয়াজ তা জনগণ বুঝে ফেলেছে৷ তিনি বলেন---শুধু আত্মনির্ভরতার কথাই নয়, প্রধানমন্ত্রীর জনগণকে দেওয়া সব প্রতিশ্রুতি ফাঁকা আওয়াজ৷ বেঙ্গল কেমিকেলের অবস্থা প্রধানমন্ত্রীর ভালোই জানা আছে৷ দীর্ঘ বছর লসে চলার পর সাম্প্রতিককালে বেঙ্গল কেমিকেল লাভের মুখ দেখছে, এই পরিস্থিতিতে সরকারের কৃতিত্ব নেওয়ার কথা৷ তা না করে বেসরকারী হাতে তুলে দেওয়ার সর্বনেশে সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এ থেকে একটা জিনিস স্পষ্ট এই সরকার জনগণের সরকার নয়, ধনকুবেরদের স্বার্থরক্ষার সরকার৷
শ্রী খাঁ বলেন--- সরকার, সরকারের মন্ত্রী বা সাংসদদের জনসাধারণের বোটে (ভোট) নির্বাচিত হতে হয়৷ তাই জনসাধারণের প্রতি তাদের অনেকটা দায়বদ্ধতা থাকে৷ কিন্তু বর্তমানে সংসদে যে কোন ভাবেই হোক বিপুল সংখ্যাধিক্যের জোরে আজ কেন্দ্রীয় সরকার এই জাতীয় সম্পত্তিটিকে যাদের হাতে তুলে দিচ্ছে জনসাধারণের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা থাকার কথা নয়৷ তারা শুধু দেখে তাদের মুনাফা৷ এক্ষেত্রে জনসাধারণের সুবিধা-অসুবিধা তারা ততটা নাও দেখতে পারে৷
তাই দেশের জনসাধারণের হাতে নির্বাচিত সরকারের এ হেন জাতীয় সম্পত্তিগুলির বেসরকারীকরণ দেশবাসীর আর্থিক দুর্দশাকে খাদের কিনারায় ঠেলে দেবে৷ সরকার দূর -ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করে সাম্প্রতিক অর্থের ঘাটতি মিটিয়ে রাজকোষ পূর্ণ করার জন্যে এই যে নীতি নিয়ে চলেছেন তা দেশবাসীর ক্ষেত্রে সর্বনেশে নীতি৷ আসলে একটা জনকল্যাণকামী সরকারের ক্ষেত্রে দেশের অর্থনৈতিক নীতি ঠিক কি হওয়া উচিত এ সম্পর্কে স্পষ্ট কোনও ধারণাই নেই বলেই মন্তব্য করলেন শ্রী খাঁ৷ তাই তারা আশু লাভটার দিকেই দৃষ্টি নিবদ্ধ করে চলেছেন, সুদূরপ্রসারী কোন পরিকল্পনাই নেই৷
শ্রী খাঁ প্রাউটতত্ত্বের উল্লেখ করে বলেন --- সর্বাধুনিক যুগান্তকারী প্রাউট দর্শনে বলা হয়েছে দেশের শিল্প বা অর্থনৈতিক উদ্যোগগুলিকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা উচিত৷ (১) ছোট ছোট অর্থনৈতিক উদ্যোগ যেমন কুটির শিল্প, অতি ক্ষুদ্র মাপের শিল্প বা ছোট ছোট দোকান এগুলো থাকবে ব্যষ্টিগত পরিচালনাধীনে৷
আর প্রাউটের মতে ক্ষুদ্র ও বৃহৎ শিল্প (মূল শিল্প) ছাড়া অন্যান্য মাঝের শিল্পগুলি সমবায় ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়াই দেশবাসীর পক্ষে মঙ্গলজনক৷ যদিও বর্তমানে সমবায়ের দিকে কি কেন্দ্র কি রাজ্য সরকার কারোর বিশেষ একটা ধ্যান নেই, সমবায় বলতে এরা বড়জোর সমবায় ব্যাঙ্কের কথা ভাবেন৷ কিন্তু না, দেশের কৃষি ও শিল্পের উৎপাদন ও বণ্টনের প্রধান মাধ্যম হওয়া উচিত সমবায়৷ সমবায় ছাড়া দেশের জনসাধারণের প্রকৃত কল্যাণ ও উন্নয়ন সম্ভব নয়৷ সমবায় পরিভূ বৃদ্ধি করা ছাড়া পুঁজিবাদী শোষণ থেকে সর্বসাধারণকে বাঁচানোর অন্য কোন রাস্তা নেই৷
এটা ভুললে চলবে না, ধন লোভী মুষ্টিমেয বৈশ্য শ্রেণী এখন সমস্ত দেশের অধিকাংশ সম্পদই কুক্ষিগত করে নিয়েছে৷ সরকারের লক্ষ্য সর্বসাধারণের অর্থনৈতিক মান বৃদ্ধি, সর্বসাধারণের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি৷ ভয়াবহ দারিদ্র ও বেকার সমস্যা থেকে দেশবাসীকে মুক্ত করতে হবে৷
শ্রী খাঁ বলেন---আজ দেশের মানুষের দ্রুত কর্মসংস্থান করাটাই সরকারের মুখ্য কর্তব্য৷ আমরা জানি বৃহৎ বৃহৎ পুঁজিপতি গোষ্টী দেশের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্যে যাদের ওপর সরকার অতি মাত্রায় নির্ভরশীল তারা কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পরিবর্তে আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তি ব্যবহার করে কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে যাবে৷
শ্রী খাঁর বলেন--- এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের পুঁজিবাদী ঘেঁষা নীতি অবিলম্বে পরিবর্তন করে সরকারী সম্পত্তি পুঁজিপতিদের হাতে বিক্রয়ের উদ্যোগ বন্ধ করে দেশকে বাঁচাতে বিকেন্দ্রিত পথে ও সমবায় ভিত্তিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা তৈরী করে জনগণের হাতে ক্রয় ক্ষমতা দিতে হবে, নাহলে জনসাধারণ আপনাদের ক্ষমা করবে না৷