বিদ্যাসাগরের জন্মদিবস অর্থাৎ ২৬শে সেপ্ঢেম্বরকে ‘শিক্ষক দিবস’ পালনের দাবী নিয়ে ‘বাঙালী ছাত্র যুব সমাজের’ পক্ষ থেকে বাঙলার বীর সন্তান ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ২০৩তম জন্মদিবস সমগ্র বাঙলা জুড়ে মহাসমারোহে পালন করা হল৷ কলকাতা থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংঘটনের কেন্দ্রীয় যুব সচিব তপোময় বিশ্বাস জানান, প্রতিবছরই আমরা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিবস পালন করে আসছি৷ পাশাপাশি আমাদের দাবী তাঁর জন্মদিবস অর্থাৎ ২৬শে সেপ্ঢেম্বর কেই ‘শিক্ষক দিবস’ ঘোষণা করে বাঙলার সমস্ত বিদ্যালয়ে পালন শুরু করতে হবে৷ স্বাধীনতার পর দেশের শাসনভার বাঙালী বিদ্বেষী হিন্দী সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হাতে যাওযায় তারা ইচ্ছাকৃতভাবে সমাজে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদানকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে উদ্যোগ না নিয়ে তাঁর সমাজসংস্কারমূলক কর্মকাণ্ড দেশের সমস্ত মানুষের কাছে পৌঁছানো থেকে ব্রাত্য করে যে সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণের বিরুদ্ধে তারই ছাত্র বাঙালী গবেষক যদুনাথ সিংহের গবেষণা নকল করে নিজের বলে চালানোর অভিযোগ আছে তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রমোট করে তার জন্মদিবসকে শিক্ষক দিবস পালন করানো হয়৷ হিন্দী সাম্রাজ্যবাদী সরকারের এহেন কর্মকাণ্ডকে ধিক্কার জানিয়ে ‘আমরা বাঙালী’ সংঘটন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবী রাখছে অবিলম্বে বিদ্যাসাগরের জন্মদিবসকেই ‘শিক্ষক দিবস’ ঘোষণা করতে হবে৷ আমরা সংঘটনের তরফে সারা বাঙলা জুড়ে বিদ্যাসাগরের জন্মদিবসকেই শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করেছি ও করব৷
তপোময় বিশ্বাস আরও বলেন যাঁর নৈতিক মানদণ্ড সুউচ্চ, যাঁর দ্বারা সমাজ উপকৃত হয়েছে বা হয়ে চলেছে, যে তাঁর আচরণের প্রভাবে অন্যকে ঘটনমূলক কাজে উৎসাহিত করতে তাকেই আমরা ‘আদর্শ শিক্ষক’ বলতে পারি৷ আমরা জানি উনবিংশ শতাব্দীতে যখন সমাজ এ ঘনান্ধকারে ছেয়ে গিয়েছিল, নারীদের অশিক্ষা-কুশিক্ষাতে জর্জরিত করে রেখে সমগ্র সমাজব্যবস্থাকে অধঃপতনে ঠেলে দেওয়া হচ্ছিল৷ সেই যুগসন্ধিক্ষণে শুধু বিদ্যা বা পাণ্ডিত্যের ভাণ্ডারকে নয় দয়ারসাগরকেও নিজের মধ্যে রেখে সমাজের নানা ক্ষেত্রে সংস্কার সাধন করে, সুশিক্ষার আলোয় সমাজকে আলোকিত করেছেন যিনি, সেই মহান দেবদূত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে স্মরণ করার দিন আজ এসেছে৷ গোঁড়া হিন্দুত্ব আগ্রাসনে নারীরা যখন শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়ে শোষণে নিষ্পেষিত হয়ে চলছিল তখন নারী শিক্ষার উদ্যোগে প্রথম নারীদের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা করা যা আজ বেথুন স্কুল নামে পরিচিত, শিক্ষার আলো প্রবেশ করিয়ে নারী সমাজকে অন্ধকার গহ্বর বের করে আলোর দিশা দেখানো সূচনার কৃতিত্বও তাঁর৷ স্বামীহারা অল্পবয়সী বিধবাদের চরম বেদনাময় জীবন থেকে উদ্ধার করতে তিনি একান্ত নিজের উদ্যোগে বহু বাঁধা পেরিয়ে বাল্যবিবাহ-বহুবিবাহ রদ ও বিধবা বিবাহের প্রচলন করেছিলেন৷ এছাড়াও বাংলা ভাষার সরলীকরণ সহ বিভিন্ন নবজাগরণ মূলক কর্মকান্ড তাঁর দ্বারা সম্পাদিত হয়েছিল৷ সংস্কৃত কলেজে অধ্যাপনাকালে নিজের উপার্জিত অর্থ দিয়েই বাঙলার বিভিন্ন অঞ্চলে নারীদের জন্য বিদ্যালয় তৈরী করেছিলেন, নিজের খরচে বহু বিধবা বিবাহ দিয়েছিলেন বিদ্যাসাগর মহাশয়৷ নিজের কথা না ভেবে অন্যের সাহায্য সর্বস্ব উজাড় করে দেওয়ার মানসিকতার জন্যেই তিনি ‘দয়ারসাগর’ নামে অভিহিত হন৷ শুধুমাত্র ‘বাঙালী’ হওয়াতেই স্বাধীনতা পরবর্তী অবাঙালী নেতাদের বাঙালী বিদ্বেষ হেতু তাঁকে উপেক্ষিত থাকতে হয়েছে৷ হিন্দী সাম্রাজ্যবাদী দিল্লীর সরকারের ইচ্ছাকৃত উদাসীনতার জন্যই সমাজে তাঁর অবদান গুটি কয়েক মানুষবাদে সমগ্র দেশের মানুষের কাছে অজ্ঞাত থেকে গেছে৷ উনবিংশ শতাব্দীর নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ বিদ্যাসাগরের জন্মদিবস অর্থাৎ ২৬শে সেপ্ঢেম্বরই আদর্শ শিক্ষক দিবস হিসেবে তার সার্থকতা লাভ করবে৷ তাই আমাদের দাবী যুক্তিসঙ্গত বলেই সাধারণ মানুষ মনে করছে, সাধারণ মানুষ আমাদের সমর্থন করেছে৷ ইতিমধ্যে এই দাবীতে পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষামন্ত্রকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে, অবিলম্বে আমাদের দাবী পূরণ না হলে বৃহত্তর আন্দোলন সংঘটিত করব৷