ভারতের জিডিপির হার বৃদ্ধি নিয়ে দেশের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর দাবিতে সরব হয়েছে কেন্দ্রীয় শাসক দল৷ কিন্তু অর্থনীতির এই তত্ত্ব কথার সঙ্গে দেশের সাধারণ মানুষের কোন সম্পর্ক নেই, ক’দিন আগেই তা স্পষ্ট করেছেন নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দোপাধ্যায়৷ সম্প্রতি গুজরাটের আমেদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ দেশের মানুষের চরম দুর্দশার কথা তুলে ধরেন৷
এবার ভারতের অর্থনীতির চরম বৈষম্যের কথা প্রকাশ করলো প্যারিস স্কুল অব ইকনমিকস্-এর ওয়ার্ল্ড ইনড্যুয়ালিটি ল্যাব৷ ল্যাবের এই প্রতিবেদন তৈরীর প্রধান দায়িত্বে ছিলেন ফ্রান্সের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ টমাস পিকেটি৷ প্রতিবেদনের ভূমিকা লিখেছেন নোবেলজয়ী দুই বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ এস্থার ডুফলো ও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ভূমিকায় তাঁরা লিখেছেন--- ভারত বিশ্বের চরম অর্থনৈতিক বৈষম্যের দেশগুলির মধ্যে পড়ে৷ ডুফলো ও অভিজিৎ মূলত এই আর্থিক বৈষম্যের জন্যে অর্থনীতির উদারীকরণকেই দায়ী করেছেন৷ অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্রের হাত থেকে পুঁজিপতিদের হাতে চলে গেছে, তারই পরিণতি চরম বৈষম্য৷ যদিও উদারীকরণনীতি চালুর সময় আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল বৈষম্য দূর করার৷
বিশ্ব অসাম্য প্রতিবেদনে-বলা হয়েছে ২০২১ সালে মোট আয়ের পাঁচ ভাগের একভাগই চলে গেছে দেশের ধনীতম এক শতাংশ মানুষের হাতে৷ নীচের দিকে অর্ধেক মানুষের হাতে প্রায় শূন্য বলাই চলে৷ মোট আয়ের মাত্র ১৩ শতাংশ সম্পদ নীচের দিকে অর্ধেক মানুষের হাতে৷ সম্পদের মাপকাঠিতে বৈষম্য আয়ের তুলনায় অনেক বেশী৷ প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে পরিবার পিছু গড় সম্পদের পরিমাণ ৯লক্ষ ৮৩ হাজার ১০টাকা৷ কিন্তু নিচের সারির পঞ্চাশ শতাংশ মানুষের গড় সম্পদ মাত্র ৬৬ হাজার ২৮০ টাকা৷
প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে কোভিড পরিস্থিতিতে লক্ডাউনের কবলে পড়ে মধ্যবিত্তের যখন নাভিশ্বাস উঠেছে সেই সময়ও ধনকুবেরদের সম্পদ বেড়ে গিয়েছে৷ প্রতিবেদনে মাথাপিছু গড় আয়ের ফাঁকির চিত্রটিও স্পষ্ট হয়েছে৷ ভারতের মানুষের মাথাপিছু গড় আয় ক্রয় ক্ষমতার নিরিখে ২ লক্ষ ৪ হাজার ২০০ টাকা৷ কিন্তু এখানেও বৈসম্য চরম৷ ১০ শতাংশ মানুষের গড় আয় ১১ লক্ষ ৬৬ হাজার ৫২০ টাকা৷ সেখানে নীচের দিকে অর্ধেক মানুষের গড় আয় ৫৩ হাজার ৬১০ টাকা৷
ওয়ার্ল্ড ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাব-এর প্রতিবেদনে ব্রিটিশ ভারতের প্রসঙ্গ তুলে বলা হয়েছে ব্রিটিশ শাসনে দেশের ১০ শতাংশ ধনীতম মানুষের হাতে ছিল মোট আয়ের অর্ধেক৷ স্বাধীনতারপর তা নেমে আসে ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশে৷ কিন্তু উদারীকরণ নীতির ফলে অর্থনীতিতে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ আলগা হতেই আয় বৈষম্য চরম আকার নিয়েছে৷ উদারীকরণের পুরো ফায়দা লুটছে দেশের এক শতাংশ ধনীতম মানুষ৷ প্রতিবেদনে আর্থিকক্ষেত্র নারী পুরুষের বৈষম্যের কথাও তুলে ধরা হয়েছে৷
মোদী জমানায় আর্থিক ক্ষেত্রে সরকার প্রকাশিত তথ্যের গুণগত মান নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে৷ বলা হয়েছে গত তিনবছরে অসাম্য নিয়ে সরকার যে তথ্য প্রকাশ করেছে তার গুণগত মান অত্যন্ত খারাপ৷ তাই মোদী জমানায় ধনবৈষম্যের প্রকৃত চিত্রটা তুলে ধরা অত্যন্ত কঠিন কাজ৷
প্রবীণ প্রাউটিষ্ট নেতা শ্রী প্রভাত খাঁ বলেন সরকার যে জিভিপি, জিভিপি করে উন্নয়নের চিৎকার করছে তার সঙ্গে সম্পর্ক দেশের ১০ শতাংশ মানুষের৷ আর্থিক উন্নয়ণের প্রকৃত মাপকাঠি হবে আধার মানুষের ক্রয় ক্ষমতার নিরিখে৷ সরকারের হাতে সে তথ্য নেই৷ থাকলেও তা প্রকাশ করে না৷