ইয়াও রুইজুয়ানের বিরুদ্ধে খেলার সময় একটু বেশিই সতর্ক থাকতে হয় তাকে৷ চিনের টেবল টেনিস খেলোয়াড়ের টপ স্পিন সামলানোর জন্য আগে থেকেই কোচের সঙ্গে পরিকল্পনা ছকা থাকে৷ তার পরেও টেবিলে রুইজুয়ানের টপ স্পিনের মোকাবিলা করা মোটেই সহজ নয়৷ কলকাতার সিন্ড্রেলা দাস তাই কাজে লাগায় নিজের শক্তি৷ আক্রমণাত্মক শট৷ সার্ভিস ও তার পরের শটেই পয়েন্ট জিতে নেওয়া৷ বড় র্যাালির দিকে তাকিয়ে না থেকে দ্রুত পয়েন্ট জেতার চেষ্টা করে সে৷
অনূর্ধ-১৫ ও অনূর্ধ-১৭ রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হয়েছে৷ ডব্লিউটিটি ইয়ুথ কন্টেন্ডারে স্লোভেনিয়ায় অনূর্ধ-১৩ সোনা, ইটালিতে অনূর্ধ-১৩ সোনা, আলজেরিয়া, শ্রীলঙ্কা ও পেরুতে অনূর্ধ-১৫ সোনা জিতেছে সে৷ দোহায় যুব প্রতিযোগিতায় সোনা জিতে ফিরে গোয়ায় অনূর্ধ-১৭ জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কলকাতার মেয়ে৷ এখন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যে সুইডেনে খেলতে নেমেছে সিন্ড্রেলা৷ এ সবই হয়েছে মাত্র চার বছরে৷ ১১ বছর বয়সে অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হয়েছিল সিন্ড্রেলা৷ পরের চার বছরে একের পর এক প্রতিযোগিতা জিতে নজর কেড়েছে সে৷
অনূর্ধ-১৫ স্তরে এখন ভারতে যে কয়েক জন মেয়ে টেবল টেনিস খেলোয়াড় রয়েছে তাদের মধ্যে সিন্ড্রেলা অন্যতম৷ মহারাষ্ট্রের দিব্যাংশি ভৌমিকের সঙ্গে দেশের প্রায় সব প্রতিযোগিতার ফাইনালেই লড়াই হয় তার৷ গোয়ায় দিব্যাংশিকে হারিয়েই সোনা জিতেছে সিন্ড্রেলা৷ পিছিয়ে পড়ে ফিরেছে সে৷ একই ঘটনা ঘটেছে ডব্লিইটিটি ইয়ুথ কন্টেন্ডারেও৷ বার বার পিছিয়ে পড়ে ফেরার মন্ত্র কী? সিন্ড্রেলার কথায়, ‘‘আমি বেশি চাপ নিই না৷ পিছিয়ে পড়লেও ভাবি কী ভাবে ফিরব৷ আমি আক্রমণাত্মক খেলতে ভালবাসি৷ আমার সার্ভিস ভাল৷ চেষ্টা করি প্রথম কয়েকটা শটের মধ্যেই পয়েন্ট জিতে নিতে৷ এক বার ছন্দ পেয়ে গেলে সেটা বজায় রাখার চেষ্টা করি৷’’ সিঙ্গলস খেলতে সবচেয়ে বেশি ভালবাসে সিন্ড্রেলা৷ তার পরে ভালবাসে ডাবলস৷ সেখানে তাঁর জুটি সেই দিব্যাংশি৷ যার সঙ্গে সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা, তার সঙ্গেই জুটি বেঁধে খেলতে ভালবাসে কলকাতার মেয়ে৷
একটানা ম্যাচ খেলার ধকল অনেক সময় শরীর নিতে পারে না৷ দোহায় খেলার সময় হাতে একটা চোট পেয়েছিল সিন্ড্রেলা৷ কিন্তু সেই চোটও থামিয়ে রাখতে পারেনি তাকে৷ ব্যথা নিয়েই খেলেছে৷ মেয়ের এই লড়াকু মনোভাব ছোট বেলাতেই দেখেছিলেন সুস্মিতা৷ তিনি বললেন, ‘‘ছোট বেলায় এক বার ওর হাত ভেঙে গিয়েছিল৷ তাই সে বার ও রাজ্য প্রতিযোগিতায় নামতে পারেনি৷ দেখেছিলাম, ও কাঁদছে৷ হাতের ব্যথায় নয়৷ খেলতে না পারার জন্য৷ তখনই বুঝেছিলাম এই খেলাটা ও কতটা ভালবেসে ফেলেছে৷’’
অনুশীলনে কোনও রকম খামতি রাখতে চায় না সিন্ড্রেলা৷ কলকাতায় থাকলে গোটা সপ্তাহ জুড়ে অনুশীলন করে সে৷ অ্যাকাডেমিতে টানা পাঁচটি করে সেশনের পর একটি করে ছুটি থাকে৷ সোমবার সকাল, বিকাল, মঙ্গলবার সকাল, বিকাল আর বুধবার সকালে অনুশীলন হয়৷ সে দিন বিকালে ছুটি থাকে৷ আবার বৃহস্পতিবার সকাল, বিকাল, শুক্রবার সকাল, বিকাল আর শনিবার সকালে অনুশীলন করে সিন্ড্রেলা৷ শনিবার বিকাল ও রবিবার ছুটি থাকে৷
গত এশিয়ান গেমসে ভারতের প্রথম মহিলা জুটি হিসাবে পদক জিতেছেন ঐহিকা ও সুতীর্থা৷ প্যারিস অলিম্পিক্সেও আশা জাগিয়েছে ভারত৷ জিততে না পারলেও নক আউটে খেলেছেন মণিকা বাত্রা, শ্রীজা আকুলারা৷ সিন্ড্রেলারও লক্ষ্য অলিম্পিক্স৷ ২০২৮ সালের লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিক্সে দেশের হয়ে খেলতে চায় সে৷ তার আগে ২০২৬ সালের কমনওয়েলথ খেলতে চায় বাংলার ১৫ বছরের মেয়ে৷ সেই লক্ষ্যেই নিজের প্রস্তুতি শুরু করেছে সৌম্যদীপ রায়, পৌলমী ঘটক, মৌমা দাস, শরথ কমলদের আদর্শ মানা সিন্ড্রেলা৷
বছরভর ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ও দেশের বাইরে থাকায় বাড়িতে খুব একটা থাকা হয় না সিন্ড্রেলার৷ কিন্তু এখন আর ও বাড়িকে মিস্ করে না৷ কারণ, সিন্ড্রেলা জানে ওর আসল লক্ষ্য কী৷ তার জন্য যে ত্যাগ ওকে করতে হবে তার জন্য তৈরি ছোট্ট মেয়ে৷ আপাতত ব্যাট আর টেবল টেনিস বোর্ডই ওর ধ্যান-জ্ঞান৷ একটার পর একটা প্রতিযোগিতায় খেলছে সিন্ড্রেলা৷ লক্ষ্য অলিম্পিক্স৷ সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলেছে কলকাতার বাঘাযতীনের মেয়ে৷