বিশ্বরেকর্ড গড়ল ক্ষুদে দাবাড়ু বাঙলার অনীশ

সংবাদদাতা
ক্রীড়াপ্রতিনিধি
সময়

বছর ৮ মাস ১৮ দিনের অনীশ সরকারের এটাই দাবি৷ সে দাবাড়ু৷ বিশ্বের কনিষ্ঠতম হিসেবে ফিডে রেটিং পেয়ে বিশ্বরেকর্ড করা দাবাড়ু৷ ভেঙে দিল ভারতেরই তেজস তিওয়ারির রেকর্ড৷ সে পাঁচ বছর বয়সে ফিডে এলো রেটিং পেয়েছিল৷ কৈখালির অনীশকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত তার কোচ দিব্যেন্দু বড়ুয়া৷ গত বছর পুজোর সময় অনীশের মামা তাকে উপহার দিয়েছিলেন দাবা বোর্ড৷ এই বছর জানুয়ারি মাসে তিন বছরে পা দেওয়া অনীশের সেই উপহার বোধ হয় জীবনটাই বদলে দিল৷ সেন্ট জেমস স্কুলের লোয়ার নার্সারির ছাত্র অঙ্ক কষতে ভালবাসে৷ সেই কারণেই তাকে দাবা বোর্ড উপহার দেন মামা৷ পরিবারের লোকজনের মনে হয়েছিল দাবা খেলে অনীশের বুদ্ধি আরও ক্ষুরধার হবে৷ সেই ভাবনায় যে ভুল ছিল না তা প্রমাণ করে দিয়েছে সে৷ এখন দাবাই তার ধ্যানজ্ঞান৷ সারা দিন কেটে যায় পড়াশোনা আর দাবা নিয়েই৷ অনীশ ১৫৫৫ ফিডে এলো রেটিং পেয়েছে৷ রাজ্যের অনূর্ধ-৯ দাবা প্রতিযোগিতায় রেটিং থাকা দুই দাবাড়ুকে হারিয়ে দেয় সে৷ তাতেই বাজিমাত৷ তার থেকে বয়সে প্রায় ছ’বছর বড় দুই দাবাড়ুকে হারিয়ে চমকে দেয় অনীশ৷ সে এতই ছোট যে চেয়ার বসে ঘুঁটিতে হাত পায় না৷ চেয়ারের উপর হাঁটু মুড়ে বসে খেলতে হয়৷ উচ্চতা কম হলেও ইতিমধ্যেই আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ণ দেখা শুরু হয়ে গিয়েছে তাকে নিয়ে৷ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম অনীশের৷ বাবা স্কুলে অঙ্কের শিক্ষক৷ মা গৃহবধূ৷ অনীশকে নিয়েই সময় কাটে মায়ের৷ নাম প্রকাশ্যে আনতে অনিচ্ছুক তাঁরা৷ ছেলের কৃতিত্বে উচ্ছ্বসিত হলেও চান না তাঁদের পরিচয় জানুক সকলে৷ নেপথ্যে থেকেই ছেলেকে এগিয়ে দিতে চাইছেন তাঁরা৷ আনন্দবাজার অনলাইনকে অনীশের মা বললেন, ‘‘অন্য কোনও খেলনার থেকে দাবাটাই মনে হয়েছিল বেশি সুরক্ষিত৷ ও তো খুব ছোট, কোনও কিছু পেলেই মুখে দেওয়া অভ্যেস৷ দাবার ঘুঁটিগুলো বড়, তাই মুখে দিলেও গিলে ফেলতে পারবে না৷ সেই কারণেই দাবা নিয়ে বসিয়ে দেওয়া হত ওকে৷ ইউটিউব দেখে দেখে খেলা শিখত৷ আমি খেলতে বসলে ওর সঙ্গে পাঁচ দানও খেলতে পারি না৷ দাবার প্রতি এই ভালবাসা দেখেই দিব্যেন্দু বড়ুয়ার কাছে নিয়ে যাই৷ ওঁর হাতেই তৈরি হচ্ছে অনীশ৷’’

ছাত্রের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত দিব্যেন্দু৷ বাংলার গ্র্যান্ডমাস্টার প্রথমে অনীশকে নিতে চাননি৷ কারণ অ্যাকাডেমিতে পাঁচ বছরের কম বয়সি কাউকে নেওয়া হয় না৷ কিন্তু দিব্যেন্দু অবাক হয়ে যান অনীশের খেলা দেখে৷ অ্যাকাডেমিতে নেওয়ার আগে তার পরীক্ষা নিয়েছিলেন দিব্যেন্দু৷ সব পরীক্ষাতেই পাশ করে অনীশ৷ এখন তো কোচকেই বিভিন্ন পরীক্ষার মুখে ফেলে দেয় সে৷ দিব্যেন্দু বললেন, ‘‘প্রথম দিন আমি পরীক্ষা নিয়েছিলাম, এখন সেই ছেলে আমাকে বিভিন্ন ঘুঁটি সাজিয়ে দিয়ে পরীক্ষা নেয়৷’’ ছাত্রের কাণ্ডের কথা বলতে বলতে দিব্যেন্দুর গলায় গর্বের হাসি৷ ৩ বছর ৮ মাস ১৮ দিন বয়সে পাওয়া সাফল্যে অনীশকে নিয়ে খুশি সকলেই৷ দিব্যেন্দু বললেন, ‘‘ও বিস্ময় বালক৷ মাত্র ক’মাস হয়েছে খেলছে৷ তাতেই বুঝিয়ে দিচ্ছে ও কতটা প্রতিভাধর৷ তবে ফিডে রেটিং পাওয়াটাই তো সব নয়৷ এখন অনেকটা পথ যাওয়া বাকি৷ অনীশ সেটা পারবে৷ ওর শেখার ইচ্ছা আছে৷ এখন ও জানতে চায় বিভিন্ন জিনিস৷ শিখতে চায়৷ আমাকে জিজ্ঞেস করে দাবা খেলার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন শব্দের মানে৷ ও হয়তো এখনই সবটা বোঝে না৷ কিন্তু বোঝার ইচ্ছেটা রয়েছে পুরো৷ দিনে সাত-আট ঘণ্টা অ্যাকাডেমিতে কাটায়৷ খেলা ছেড়ে উঠতে চায় না৷ আমি মাঝে মাঝে বাড়িতেও ডেকে নিই৷ আশা করছি আরও অনেক সাফল্য পাবে অনীশ৷’’