আসামের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, বরাকের সাইনবোর্ডে বাংলা থাকবে, সঙ্গে অসমিয়াও থাকবে৷ তিনি স্বীকার করেছেন ১৯৬০ সালের রাজ্যভাষা আইনমতে (১৯৬১ সালের সংশোধনী সহ) বরাকের সরকারি ভাষাই বাংলাই৷ তবুও অসমিয়া ভাষার সংস্থান কী উদ্দেশ্যে? দেওয়াল নিয়ে প্রশ্ণ তুলছেন আমরা বাঙালির সাধন পুরকায়স্থ৷ বরাকের উপত্যকায় টেলিফোন মোবাইল পরিষেবায় ইংরেজি, হিন্দি অসমিয়া ভাষায় নির্দেশ থাকলেও যা অতি প্রয়োজন সেই বাংলাকে হটিয়ে দেওয়া হল অনেক দিন৷ গ্রাহকদের টক টাইমের উপর এ আগ্রাসনের প্রতিও দৃষ্টি আকর্ষণ করে সাধন বাংলার সংস্থান করার উপর জোর দাবিও রেখেছেন৷ বিনা প্রয়োজনে দীর্ঘ কয়েক দশক পর বাংলার সঙ্গে অসমিয়া ভাষার সংস্থানের পেছনে যে একটা ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে এ দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে সাধন পুরকায়স্থ বলেন--- ইতিপূর্বে বাংলার সঙ্গে অসমিয়া ভাষার মিশ্রণ ঘটিয়ে বাংলা ভাষার একটা মৌল পরিবর্তন আনার দীর্ঘকালীন প্রয়াসের কথা বরাকবাসীর অজ্ঞাত নয়৷ এ উদ্দেশ্য ১৯৮৮ সালে অসম সাহিত্য সভার হাইলাকান্দি অধিবেশনে বাংলা পাঠ্যপুস্তকে অসমিয়া শব্দ, বাক্য এমনকী অসমিয়া অনুচ্ছেদ ঢুকিয়ে দেবার পরামর্শের কথা বরাকবাসীকে মনে করিয়ে দেন তিনি৷ ‘আসাম ট্রিবিউনে’ (৫ই মার্চ ১৯৮৮) প্রকাশিত একটি কলমে, সত্যপ্রসাদ বরুয়ার নিবন্ধের উল্লেখ করে সাধন পুরকায়স্থ বলেন, এতে সরাসরি বরাকের ভাষা যে বাংলাই নয় এ কথাটি ঘোষণা করে পরামর্শ দেওয়া হয়, ‘‘এখন অসম সভার কাজ হল কম দামের কিছু বই প্রকাশ করার পরিকল্পনা করা, যে বইগুলো অসমিয়া ভাষায় রচিত হবে না, রচিত হবে বরাক উপতক্যার লোকের কথ্যভাসায়৷ মাঝে মাঝে কিছু অসমিয়া অনুচ্ছেদ তার মধ্য ঢুকিয়ে দিতে হবে৷’’ উদ্দেশ্য হল এতে ‘‘তারা আমাদের কাছাকাছি আসবে...অসমিয়া ভাষার সঙ্গে তাদের যোগসূত্র প্রতিষ্ঠিত হবে৷’’ এই হচ্ছে সেই প্রাচীন পরিকল্পনা যার বাস্তবায়নের নবতম প্রয়াস আসামের বাঙালীকে আতঙ্কিত করছে৷ এর ফলে বরাক তথা অসমের বাঙালীর ভাষা তার নিজস্ব চরিত্র বৈশিষ্ট্য হারিয়ে হয়ে উঠবে না বাংলা না অসমিয়া এক কিম্ভূত কিমাকার ভাষা৷ ভিন্নতর উদ্দেশ্যে অসমিয়া ভাষা জোর করে চালু করার এই প্রয়াসটি সাধন পুরকায়স্থের মতে নিন্দনীয় ও এর বিরুদ্ধেই বরাকবাসীর প্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন৷