লুসি যখন তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা, তখন পরীক্ষায় ধরা পড়ে তাঁর ডিম্বাশয়ে ছড়িয়ে পড়েছে ক্যানসারের কোষ৷ চিকিৎসকেরা জানান, সন্তান জন্মের পর চিকিৎসা শুরু করলে সেই ক্যানসার ছড়িয়ে লুসির জীবন ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে৷
আক্ষরিক অর্থেই দ্বিজ৷ মায়ের গর্ভ থেকে দু’বার জন্মগ্রহণ করল এক শিশু৷ চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিরল এই ঘটনা ঘটেছে ইংল্যান্ডের ব্রিটেনে৷ সেখানে একটি শিশুই দ্বিতীয় বার দেখল পৃথিবীর আলো৷ অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঠিক ৫ মাসের মাথায় এক বার সন্তানের জন্ম দেন লুসি আইজ্যাক৷ অক্সফোর্ডের বাসিন্দা ৩২ বছর বয়সি শিক্ষিকা আশ্চর্যজনক ভাবে দ্বিতীয় বার সেই একই সন্তানের জন্ম দেন৷ এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন চিকিৎসকের একটি দল৷ জানুয়ারির শেষের দিকে জন্ম হয় লুসির সন্তানের৷ জন্মের পর দিব্যি স্বাভাবিক ওজন হয় সেই নবজাতকের৷ ১৯ এপ্রিল ডেলি মেলের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে লুসি ও তাঁর ১০ সপ্তাহের নবজাতক রাফার্টির জীবনের এই বিস্ময়কর কাহিনি৷
প্রতিবেদনে বলা হয়, লুসি যখন তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা, তখন পরীক্ষায় ধরা পড়ে তাঁর ডিম্বাশয়ে ছড়িয়ে পড়েছে ক্যানসারের কোষ৷ চিকিৎসকেরা জানান, সন্তান জন্মের পর চিকিৎসা শুরু করলে সেই ক্যানসার ছড়িয়ে লুসির জীবন ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে৷ যত দ্রুত সম্ভব লুসির অস্ত্রোপচার করতে চেয়েছিলেন তাঁরা৷ গর্ভে সন্তান থাকায় কী হোল সার্জারি করা সম্ভব ছিল না চিকিৎসকদের৷ মাতৃগর্ভের ভিতরে অস্ত্রোপচার করাটাও প্রায় অসম্ভব ছিল৷ জন র্যোডক্লিফ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা লুসির গর্ভের সন্তানকে বার করে এনে অস্ত্রোপচারের সিন্ধান্ত নেন৷ চিকিৎসক সোলেমানি মাজদের শিশুটিকে জরায়ুতে রেখেই অস্ত্রোপচার চালানোর সিদ্ধান্ত নেন৷ তিনি ঠিক করেন লুসির জরায়ুটিকে বার করে আনা হবে৷ ক্যানসারের মারণকোষ বাদ দিয়ে সেটি আবার লুসির শরীরে প্রতিস্থাপন করা হবে বলে পরিকল্পনা করেন তাঁরা৷
পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলে সেই জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচারটি৷ জরায়ু বার করে আনা হলেও ভ্রূণের যাতে কোনও ক্ষতি না হয় সে দিকে খেয়াল রেখে রক্তনালিগুলিকে আলাদা করা হয়নি৷ লুসির জরায়ুটিকে উষ্ণ স্যালাইনের প্যাকেটে মুড়ে রাখা হয়, যাতে তাপমাত্রার হেরফের হওয়ায় ভ্রূণটি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়৷ প্রতি ২০ মিনিট ব্যবধানে বদলানো হয় সেই স্যালাইনের প্যাকেটও৷ সফল ভাবে অস্ত্রোপচারের পর জরায়ু পুনরায় স্থাপন করা হয় লুসির দেহে৷ কয়েক মাস পরে, জানুয়ারিতে প্রকৃতপক্ষে ভূমিষ্ঠ হয় সেই শিশু৷ জন্মের পরপরই এই দম্পতি সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসক মাজেদকে ধন্যবাদ জানান৷ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন চিকিৎসক নিজেও৷