ব্যাটারি প্রযুক্তির নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করল তিন বাঙালী বিজ্ঞানী

সংবাদদাতা
পি.এন.এ.
সময়

ইলাহাবাদের হরিশচন্দ্র রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী দম্পতি সুদীপ চক্রবর্তী ও তিষিতা দাস এবং আমেরিকার টেক্সাস এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী অধ্যাপক সর্বজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ‘নেচার মেটেরিয়ালস’ জার্নালে প্রকাশিত তাঁদের গবেষণাপত্রে ‘প্রি ইন্টারকালেশন’ নামে নতুন পদ্ধতির কথা বলেছেন৷ এই রসায়নে একটি ব্যাটারি তৈরিও করেছেন সর্বজিতেরা৷ গত এক দশক ধরে ক্রমেই উন্নততর হয়েছে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির প্রযুক্তি৷ তবে এই ‘প্রি ইন্টারকালেশন’ পদ্ধতি মোবাইল, ল্যাপটপ থেকে শুরু করে বিদ্যুৎচালিত পরিবহণেরও ভোল পাল্টে দেবে বলে তাঁরা আশাবাদী৷

যন্ত্রে চালিকাশক্তি যোগানোর সময় ব্যাটারির অ্যানোড অংশ থেকে লিথিয়ামের আয়ন ক্যাথোড অংশে যেতে থাকে৷ অ্যানোডের গ্রাফাইটে লিথিয়াম একা একা থাকে, যা মোটেও তার ধর্ম নয়৷ ক্যাথোডে কোবাল্টের মতো ধাতুর অক্সাইডের সঙ্গে জুড়তে চেয়ে লিথিয়াম পরমাণু নিজের একটা ইলেকট্রন ছেড়ে দু’টি আয়নে ভাঙে৷ ধাতব তার দিয়ে ক্যাথোডে পৌঁছনোর পথে ঋণাত্মক আয়ন, অর্থাৎ দলছুট ইলেকট্রনগুলিকে সার্কিট থেকে সার্কিটে ছুটিয়ে ইলেকট্রনিক যন্ত্র কাজ করায়৷ ব্যাটারির ভিতরে চার্জের ভারসাম্য বজায় রাখতে ধনাত্মক আয়ন অর্থাৎ ইলেকট্রন ঝেড়ে ফেলা পরমাণুর বাকি অংশ লিথিয়াম-লবণের দ্রবণের মধ্য দিয়ে ক্যাথোডে পৌঁছয়৷

হরিশচন্দ্র রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রিডার ও ‘মেটস ল্যাব’-এর প্রধান সুদীপ এবং ‘ইন্সপায়ার ফ্যাকাল্টি’ তিষিতা জানান, লিথিয়াম আয়নগুলি ব্যাটারিতে চার্জ দেওয়ার সময় নিজের নিজের পথে আবার অ্যানোডে ফিরে যায়৷ তাকেই বলে ‘ইন্টারকালেশন’৷ ক্যাথোডের ধাতব অক্সাইডের সঙ্গে দু’দিক দিয়ে আসা লিথিয়ামের দুই আয়ন আলাদা ভাবে জুড়ে নতুন যৌগ গঠন করে থাকে৷ তার আণবিক বন্ধন শক্তপোক্ত৷ চট করে ভাঙতে চায় না৷

বাঙালি বিজ্ঞানী ত্রয়ী জানাচ্ছেন, তাঁরা কোবাল্ট অক্সাইডের বদলে ক্যাথোডে ভ্যানাডিয়াম পেন্টক্সাইড নামে একটি রাসায়নিক যৌগের সঙ্গে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম ব্যবহার করে দেখেছেন, লিথিয়ামের ধনাত্মক আয়নগুলি এসে সুবিন্যস্ত ভাবে তার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে৷ তার মধ্যে সোডিয়াম ও লিথিয়াম পরমাণুর বিন্যাসে একটি নির্দিষ্ট ছাঁচ লক্ষ করা যাচ্ছে৷ লিথিয়াম ও সোডিয়াম পরমাণু বহুমাত্রিক নকশায় সমান্তরাল ভাবে বসছে৷ গবেষণাপত্রে এই অতিসূক্ষ্ম পথবিন্যাসের খুঁটিনাটি রয়েছে৷ একেই প্রি-ইন্টারকালেশন বলেছেন তাঁরা৷ এ ভাবে ক্যাথোডে বেশি আয়ন ধরানো যায়, আবার ঝাঁক ধরে ফেরতও পাঠানো যায় বলে ব্যাটারির স্বাস্থ্যও ভাল থাকে৷ তারকেশ্বরের মন্দিরপাড়ার সুদীপ নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের প্রাক্তনী৷ দমদমের তিষিতা এক সময়ে গবেষণা করেছেন যাদবপুরের ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্সে৷ সর্বজিৎ আদতে দক্ষিণ কলতাকার কসবার বাসিন্দা৷ সম্প্রতি লাদাখের রেয়াসি জেলায় দেশের মধ্যে প্রথম খোঁজ মিলেছে লিথিয়ামের ভান্ডারের৷ তিন বাঙালি বিজ্ঞানীর আশা, সেই সঞ্চয় কাজে লাগিয়ে উন্নতির পথে দেশকে আরও দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাবে তাঁদের গবেষণা৷