যে কোন দেশের খেলাধূলা তথা ক্রীড়াক্ষেত্রের উন্নতির জন্যে সরকারী সদর্থক ভূমিকা একান্ত আবশ্যক৷ যে সকল দেশ ক্রীড়াক্ষেত্রে বিশ্বকাপ বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রীড়ানৈপুণ্যে সামনের সারিতে রয়েছে তাদের খেলোয়াড়রা সরকারী সাহায্য ব্যতীত তাদের প্রতিভাকে স্ফূরণ ঘটাননি৷ যদিও ব্যষ্টিগত একটি প্রতিভা, বা নৈপূণ্য যাই বলি না কেন তাকে কখনই অস্বীকার করা যায় না৷
বিশ্বের তাবড় ক্রীড়াবিদদের ক্রীড়ানৈপুণ্যের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় যে খুব কম খেলোয়ারীই এমন আছেন যাঁরা শুধুমাত্র নিজের প্রচেষ্টায় উঠে এসেছেন আন্তর্জাতিক মহলে৷ কেননা ছোটবেলা থেকে যখন কোনও খুদে খেলোয়াড় কোনও কোচের নজরে আসে তখনই সেই কোচ সেই খেলোড়কে বা খেলোড়দের আলাদা ভাবে নজর রাখেন৷ অবশ্যই কোচকেও এ ব্যাপারে দক্ষ হতে হয়৷ কারণ ক্ষুদে চৌকস খেলোয়াড় খুঁজে নেওয়ার ‘পাখীর চোখ’ কোচেরই৷ কোচ এরপর প্রয়োজনীয় সবরকম সুবিধার জন্যে সরকারের কাছে আবেদন রাখেন৷ সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়রা সেই মত সুযোগ-সুবিধা পেলেই ধীরে ধীরে তার ক্রীড়ানৈপুণ্যের বিকাশ ঘটাতে থাকে৷ অচিরেই সে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দাপিয়ে বেড়ানোর মত ক্ষমতা অর্জন করে৷ এশিয়া, অফ্রিকার হাতে গোনা কয়েকটি দেশ বাদ দিলে ক্রীড়াক্ষেত্রে পশ্চিমী দেশগুলো বিশ্বের ক্রীড়াক্ষেত্রে যথেষ্ট এগিয়েছে৷ যদিও চীন, জাপান, কোরিয়া, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মত দেশগুলি কয়েকটি খেলায় যথেষ্ট সুনামের সঙ্গে পশ্চিমী দেশগুলোর বিরুদ্ধে ভাল ফল করছে৷ কিন্তু ভারতের মত বিশাল দেশের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ক্রিকেট ছাড়া অন্য কোনও খেলায় বিশ্বপর্যায়ে একচেটিয়া ধারাবাহিকতা দেখাতে পারছে না৷ এর কারণ কি?
এর কারণ একটাই৷ অতীত থেকে বর্তমান---ভারতীয় ক্রীড়াক্ষেত্রের কয়েকজন প্রতিভাধরের ব্যষ্টিগত জীবনের ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায় যে এই সকল খেলোয়াড়রা নিজেদের চেষ্টায়, নিজেদের অদম্য মানসিকতায় অনেক বাধাবিঘ্ন সত্ত্বেও উঠে আসতে সক্ষম হয়েছেন৷ ভারতের পি.টি.ঊষা, অভিনব বিন্দ্রা, কপিল দেব, বাইচুং ভুটিয়ারা ব্যষ্টিগত নৈপুণ্যে উঠে এসেছেন৷ তাঁদের চেষ্টা, তাঁদের মানসিকতার কাছে হার মেনেছে শত বাধাবিঘ্ন৷ তাই তাঁরা আজ সারা বিশ্বের কাছে ক্রীড়াজগতের উদাহরণ হয়ে উঠতে পেরেছেন৷ ভারতের ক্রীড়াক্ষেত্রের উন্নতির পথে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপও অনেক সময় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অনেক খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে৷ ফলে অনেক খেলোয়াড়ই সেভাবে তাদের প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারেননি৷ কারণ রাজনীতির একজন মানুষই ক্রীড়াজগতের ক্রীড়ামন্ত্রী হন৷ অপ্রত্যক্ষভাবে হলেও মন্ত্রীমহলের সদিচ্ছাই ক্রীড়াক্ষেত্রের বিভিন্ন বিভাগে অর্থ যোগান দেওয়ার প্রধান উৎস৷ যেটাকে সরকারী সাহায্য বলা চলে৷ ভারতীয় ক্রিকেটের কথাই ধরা যাক৷ বিশ্বক্রিকেট যখন থেকে শুরু হয় তার বিশ-পঁচিশ বছরের মধ্যেই ভারতের এমন সব খেলোয়াড় উঠে আসেন যাঁদের ব্যষ্টিগত ক্রীড়ানৈপুণ্য এতটাই ধারাল ছিল যে ভারত বিশ্বক্রিকেটে একটি জায়গা করে নেয়৷ সরকারী সহযোগিতাও ভারতীয় ক্রিকেটকে এগিয়ে আনার পথে সাহায্য করেছে৷ তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে---ক্রিকেটে অনেক ধনী পরিবার থেকে উঠে এসেছেন বেশ কিছু খেলোয়াড়৷ অর্থ যোগানের ক্ষেত্রে তাঁদের পরিবাররা পিছিয়ে থাকেন নি৷ সে-কারণেই তাঁরা শুধুমাত্র ক্রিকেটের দিকে নজর রেখে অনুশীলন করেছেন আর সাফল্যও এসেছে৷ এখন একটা কথা শোনা যায় স্পন্সর ভাল পেলে খেলোয়াড়রা সমস্ত রকম সুযোগ সুবিধা পান৷ অর্থাৎ খেলার জন্যে তাদের অর্থের সরবরাহ স্পন্সররাই করে থাকেন৷ ফলে সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড় অনেক দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এলেও ক্রীড়াক্ষেত্রে তার সেই দারিদ্রতা বাধা হয়ে দাঁড়ায় না৷ শুধু তাই নয়, খেলার জগতে ভাল ফল করলে সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়ের পরিবারও আর্থিক ভাবে সবল হতে পারে, কারণ স্পন্সরা খেলোয়াড়দের চাকুরী ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধার ব্যবস্থা করে থাকেন৷ এখন এই স্পন্সর হন তারাই যারা নিজেদের ব্যবসার প্রচারের উদ্দেশ্যে খেলোয়াড়দের বিকশিত হওয়ার জন্যে দায়িত্ব নেন৷ যখন সৌরভ গাঙ্গুলী, ঝুলন গোস্বামীরা মাঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বা আন্তর্জাতিক মহলে ভাল খেলোয়াড় হিসেবে তাঁদের নাম ক্রীড়াজগতের মুখে মুখে প্রায় এসে গেছে, তখনই স্পন্সর কোম্পানী তাদের স্পন্সর হতে চান---পুরো দলের স্পন্সর হতে চান৷ অবশ্যই ব্যবসায়িক ব্যাপারটাই এখানে প্রধান৷ কিন্তু গ্রাম-গঞ্জ-পাহাড়ী অঞ্চলের মধ্যে থেকে খেলোয়াড় তুলে আনার জন্যে উপযুক্ত সরকারী পদক্ষেপ না থাকলে ক্রীড়াজগতের প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান বিশ্বে প্রথম সারিতে আসবে কী করে৷ শুধুমাত্র ক্রিকেট বা হাতে গোনা কয়েকটি খেলায় সরকার চিন্তাভাবনা রাখলে অন্যান্য সকল বিভাগে যেমন ভলিবল, সাঁতার, এ্যাথলেটিক্স, বক্সিং ইত্যাদিতে ভারত আন্তর্জাতিকভাবে সফল হবে কীভাবে?