ভোট বড় বালাই তাই মাথানত মোদীর---আমরা বাঙালী

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

সামনে উত্তরপ্রদেশ সহ কয়েকটি রাজ্যের ভোট৷ কয়েকমাস আগেই উত্তরপ্রদেশ পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবি হয়েছে৷ তাই কৃষি আইন নিয়ে অনড় প্রধানমন্ত্রী গত ১৯শে নভেম্বর গুরুনানকের জন্মদিবসের প্রাক্কালে কর্ষকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অবিলম্বে তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানান৷ সামনের সংসদ অধিবেশনে এই তিনটি কৃষি-আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের কথাও তিনি জানান৷ তীব্র শৈত্যপ্রবাহে, বৃষ্টির জলে, গ্রীষ্মের দাবদাহে আনুমানিক ৭০০ কর্ষকের প্রাণের বলিদানে শেষ পর্যন্ত মোদি সরকার কর্ষকদের কাছে ক্ষমা স্বীকার করে আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন৷ মোদির কৃষি আইন সম্পূর্ণরূপে কর্র্পেরেটদের দ্বারা পরিচালিত কর্ষকদের মুখের ভাত কেড়ে নেওয়ার  পরিকল্পনা ছিল৷

সেই পরিকল্পনার মুখে আগুন দিয়ে দিন রাত এক করে দিল্লীর রাজ পথে দিনের পর দিন ধর্নায় অংশগ্রহণ করেছিল কর্ষক সমাজ৷ ২০২২-এ উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড, গোয়া, মনিপুর সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে মোদি সরকার এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়৷ করোনা আবহাওয়াকালে গোটা ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক অবস্থা যখন মুখ থুবড়ে পড়েছে একমাত্র কৃষি ব্যবস্থাই অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে রেখেছিল৷ সেই অবস্থা থেকে কর্র্পেরেটদের চোখ পড়ে কৃষিক্ষেত্রে৷ কেন্দ্রীয় সরকারকে সামনে রেখে কর্র্পেরেটদের অঙ্গুলি হেলনেই কৃষক মারার এই নীতি মোদির মাধ্যমে ভারতবর্ষে চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়৷ ১৯শে নভেম্বর গুরুনানকের পবিত্র জন্মদিনেই শিখ সম্প্রদায়কে সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যে সাতসকালে আইন প্রত্যাহারের কথা তিনি ঘোষণা করেন৷ শুধুমাত্র ভোটের ধান্দায় মোদি সরকারের এই সিদ্ধান্ত৷  গত ২০২০-র ২৩শে সেপ্ঢেম্বর পার্র্লমেন্টে কৃষিবিল উত্থাপন করার পরেই ২৬শে সেপ্ঢেম্বরই সেই বিতর্কিত তিনটি কৃসি-বিল প্রত্যাহারের দাবীতে ‘আমরা বাঙালী’ রাস্তায় নেমে বিলের প্রতিলিপি পুড়িয়ে আন্দোলন শুরু করে৷ টানা একবছর আমরা বাঙালী সংঘটন সারা ভারতবর্ষের কর্ষকসমাজের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে৷  আমাদের দাবী ছিল অবিলম্বে কৃষিবিল প্রত্যাহার করতে হবে৷ যে বিল পরবর্তীকালে সেই বিল আইনে পর্যবসিত করেছিল, তার বিরুদ্ধেও আমরা রাস্তায় নেবে প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলাম৷ ‘আমরা বাঙালী’ সংঘটনের পক্ষ থেকে দাবী ছিল অবিলম্বে কর্র্পেরেট দালালদের হাত থেকে ভারতের কৃষি ব্যবস্থাকে বাঁচাতে হবে৷ কৃষিকে শিল্পের মর্যাদা দিতে হবে, ব্লকে ব্লকে কৃষিভিত্তিক কৃষিসহায়ক শিল্প ঘটন করতে হবে৷ কৃষিজাত   দ্রব্যের ন্যায্য মূল্য দিতে হবে৷ সমবায়ভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থা চালু করতে হবে৷ গত ২০২০-র ৮ই ডিসেম্বর কর্ষক সমাজের পক্ষ থেকে সারা ভারত বন্ধের ডাক দেওয়া হয়েছিল৷ সেই বনধের সমর্থনে  ‘আমরা বাঙালী’ রাস্তায় নেবেছিল৷ পার্র্লমেন্টে আইন সম্পূর্ণভাবে বাতিল না হওয়া পর্যন্ত ‘আমরা বাঙালী’ কর্ষক আন্দোলনের পাশে আছে ও থাকবে এই বলে জানান ‘আমরা বাঙালী’র কেন্দ্রীয় সচিব শ্রী জ্যোতিবিকাশ সিনহা৷

আইন প্রত্যাহারের পাশাপাশি চাষীদের ফসলের ন্যায্য মূল্য দিতে তিনটে প্রত্যাহার করলেই কৃষকদের দুর্দশা ঘুচবে না৷ মূলত ক্ষুদ্র কৃষকদের তো নয়ই৷ তাদের উৎপাদিত ফসল দালালদের কাছে ফসল উৎপাদন খরচেরও কম মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য করতে হতে হয়৷ এই  দালালরাজ বন্ধ করতে সরকারকে অবিলম্বে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে৷ কৃষিতে এসব দালাল ফড়েরাজ বন্ধ করতে অবিলম্বে কৃষকদের নিয়ে উৎপাদক ও উপভোক্তা সমবায় ঘটন করতে হবে৷