Benincasa cerifera Savi
পরিচয় ও প্রজাতি ঃ ছাঁচি কুমড়ো সাধারণতঃ মাটিতে হয় না৷ ঘরের চালাতে বা মাচাতে এই লতানে গাছটাকে তুলে দিতে হয়৷ এর জন্যে ছাঁচি কুমড়োকে গ্রাম–ৰাংলায় অনেকে চালকুমড়োও ৰলেন৷ এরও তিনটি ঋতুগত প্রজাতি রয়েছে৷ বর্ষাতী চালকুমড়োকে অবশ্যই মাচায় অথবা ঘরের চালে তুলে দিতে হয়৷ শীতের প্রজাতির ছাঁচি কুমড়োকে মাটিতেই ৰেড়ে যেতে দেওয়া হয়৷ তবে কেউ ইচ্ছে করলে মাচায় তুলে দিতে পারেন৷ গ্রীষ্মকালীন চালকুমড়ো মাটিতেই ৰেড়ে যেতে থাকে৷ (একেও) কেউ ইচ্ছে করলে মাচায় তুলে দিতে পারেন৷ তবে বর্ষাতী চালকুমড়োকে মাচায় তুলে দিতেই হবে, নইলে পোকার আক্রমণে ফলটি নষ্ট হবেই.....গাছও নষ্ট হবে৷
ফলের আকার ৰাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর বাইরেকার সবুজ রঙটার ওপর একটা শাদা আস্তরণ পড়তে থাকে৷ তাই ৰাংলার কোন কোন জায়গায় একে চুনো–কুমড়োও ৰলা হয়৷ রাঁচী অঞ্চলে বলা হয় ‘রাখাস কোহড়া’৷ বিহারের কোথাও কোথাও বলা হয় ‘ভুয়া’, কোথাও কোথাও বলা হয় ‘ভতুয়া’–ভাল হিন্দুস্তানীতে বলা হয় ‘পেঠা’৷ ছাঁচি কুমড়ো ভারতের একটি সাবেকী জিনিস.... বাইরে থেকে আসেনি৷ প্রাচীন ৰাংলায় যাঁরা শাক্ত দেবী–দেবতাকে বৈষ্ণবীয় রীতিতে অর্চনা করতেন, তাঁরা বলি দানের উদ্দেশ্যে পশু–পক্ষীর পরিবর্ত্তে আখ, কলা, সুপুরী, ছাঁচি কুমড়ো বলি দিতেন৷ বলি দানের অধিকার ছিল কেবল পুরুষের৷ তাই দীর্ঘকাল ধরে আখ, কলা, সুপুরী, ছাঁচি কুমড়ো মেয়েরা কাটতেন না৷
উদররোগে, অগ্ণিমান্দ্যে ও স্নায়ুতন্তুর রোগে ছাঁচি কুমড়ো ঃ পাকা ছাঁচি কুমড়ো উদর রোগের পক্ষে ভাল৷ দীর্ঘকালীন উদর রোগে ছাঁচি কুমড়ো ভাল ফল দেয়৷ ছাঁচি কুমড়োর ঘণ্ট বা নারকোল–কুমড়ি ৰাঙালীর একটি প্রিয় ভোজ্য৷ স্নায়ুকোষ ও স্নায়ুতন্তুর রোগেও কাঁচা বা পাকা ছাঁচি কুমড়ো ঔষধের কাজ করে৷ ছাঁচি কুমড়োর মধ্যে উদর ও স্নায়ু রোগের ঔষধীয় গুণ নিহিত থাকায় মধ্য যুগে ৰাঙালী মেয়েরা অঘ্রাণ মাসে নারকোল কুরুনিতে ছাঁচি কুমড়ো কুরে ডাল–বাটার সঙ্গে মিশিয়ে বড়ি তৈরী করতেন৷ ছাঁচি কুমড়ো অগ্ণিমান্দ্যের ন্প্সব্দব্দ প্সন্দ্র হ্মন্দ্বব্ধন্ব্ধন্দ্বগ্গ্ ঔষধ ঙ্মরস বের করে সেই রস বা তরকারী হিসাবেৰ৷ ছাঁচি কুমড়ো যত কচি–কাঁচা অবস্থায় থাকবে ততই সে স্নায়ুকোষ ও স্নায়ুতন্তুর পক্ষে ভাল৷ আর যত বেশী পূর্ণত্বের দিকে যেতে থাকে তত বেশী যকৃত ও পেটের রোগের ভাল ঔষধ৷ শুকনো অবস্থাতেও এ অগ্ণ্যাশয়ের ঔষধ৷
ছাঁচি কুমড়ো ৰীজের তৈল ও চর্মরোগ ঃ আয়ুর্বেদে ছাঁচি কুমড়ো ৰীজের তেলের ঔষধীয় ব্যবহার আছে৷ ছাঁচি কুমড়ো ৰীজের তেল চর্ম রোগের ঔষধ৷
ছাঁচি কুমড়োর মোরব্বা ঃ উত্তর ভারতের আগ্রার ও পূর্ব ভারতের শিউরীর * (বীরভূম জেলা) পেঠা বা ছাঁচি কুমড়োর মোরব্বা প্রসিদ্ধ৷ কলকাতার কাছাকাছি এলাকায় ছাঁচি কুমড়োর মোরব্বাকে কেউ কেউ ‘কুমড়োর মেঠাই’ ৰলে থাকেন৷
*শব্দটি এসেছে ‘‘শিবপুরী’’ শব্দ থেকে৷ তাই ‘শিউরি’ বানানই শুদ্ধ৷
কামরাঙা–Averrhoa carambola Linn
পরিচয় ও প্রজাতি ঃ কামরাঙার আদি বাস হচ্ছে চীন ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া৷ কামরাঙা এদেশে এনেছিলেন ওলন্দাজরা৷ তারা চুঁচড়োয় তাঁদের কুঠিবাড়ীতে সেই গাছ লাগিয়েছিলেন৷ সেখান থেকে কামরাঙা ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব ভারতে ও দক্ষিণ ভারতে৷ দীর্ঘকাল ভারতের আৰহাওয়ায় লালিতপালিত হওয়ায় কামরাঙার একটি প্রজাতিকে ভারতীয় ৰললেও ৰলতে পারি৷ পৃথিবীতে কামরাঙার কয়েকটি প্রজাতি থাকলেও মুখ্য প্রজাতি দু’টি৷ একটি হ’ল মোটামুটি রকমের মিষ্টি*, আরেকটিতে একটু টক ভাব থেকেই যায়৷ চীনে ও তাইল্যাণ্ডে দেখেছি সেখানকার কামরাঙার আকার ভারতীয় কামরাঙার চেয়ে দ্বিগুণের বেশী৷
নোড় ফল, যার আদিবাস পূর্ব ভারতে, এর সঙ্গে কামরাঙার কিছুটা মিল আছে৷ গুণের দিক দিয়ে বিচার করতে গেলে নোড় ও কামরাঙ্গা প্রায় একই পর্যায়ভুক্ত৷
হজমে সহায়ক কামরাঙা ঃ কামরাঙা মুখে লালা আনে ও হজমে সাহায্য করে কামরাঙার অচার ও অম্বল দুই–ই হয়৷ কামরাঙার দোষ সম্বন্ধে লোকে বলে, কামরাঙা হাড়ে জ্বর টেনে আনে৷ অর্থাৎ জ্বর ছেড়ে যাবার পরে অল্প দিনের মধ্যে কামরাঙা খেলে হয়ত আবার জ্বর হতে পারে৷ তবে কথাটি সত্য নাও হতে পারে৷
কালমেঘ–. Andrographis paniculata Nees.
কালমেঘ এক প্রকার গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ৷ এ থেকে পেটের রোগের ও ৰহুমূত্র রোগের নানান ঔষধ তৈরী হয়৷ পেট রোগা লোকেরা ও যকৃতরোগী কালমেঘের ৰড়ি তৈরী করে সকালে খালি পেটে খেলে ভাল ফল পাবে৷ এতে যকৃত ও হজমের গোলমাল সেরে যায়৷
নিশিন্দা–Vitex negunda Linn./Vitex trifolia Linn.
নিশিন্দা একটি ঔষধীয় গুণযুক্ত গাছ৷ রাঢ়ী ৰাংলায় একে ‘বোনাই’ ৰলা হয়৷ এতে প্রচুর পরিমাণে ঔষধীয় গুণ আছে৷ স্বাদে খুবই তেঁতো বলে গোরু–ছাগলে একে খায় না৷ পেটের পক্ষে নিশিন্দা খুবই উপকারী৷ তিক্ততা নিৰন্ধন এই নিশিন্দা পাতা কীটনাশক৷ রেশমী ও পশমী বস্ত্রাদির মধ্যে নিশিন্দা পাতা রেখে দিলে তাতে সহজে পোকা লাগে না৷