দেশে আজ সবচেয়ে বড় সমস্যা দুর্নীতির সমস্যা৷ ব্যাপক দুর্নীতির জন্যে দেশের দরিদ্র জনসাধারণের কাছ থেকে তিল তিল করে সংগৃহীত সরকারী ট্যাক্স--- যা রাজকোষে জমা পড়ে--- তা জনসাধারণের স্বার্থে ব্যয়িত না হয়ে তা লুঠ করে’ নিয়ে যাচ্ছে এক শ্রেণীর পুঁজিপতি লুঠেরারা৷ দেশের সংবিধান অনুসারে দেশের বিভিন্ন জটিল দুর্নীতি ও অপরাধের তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিবিআই-কে৷ কিন্তু দেখা যাচ্ছে সে সিবিআই-ই বিশাল দুর্নীতির গড়৷ আর তার সঙ্গে সরাসরি যুক্তি দেশের শাসকবর্গ৷ এ অভিযোগ সিবিআইয়ের সর্বোচ্চ পর্যায়ের আধিকারিকদেরই৷
গত ৩ মাস ধরে এই দুর্নীতি নিয়ে সিবিআই-এর ডাইরেক্টর আলোক ভার্মার সঙ্গে দ্বৈরথ চলছে সিবিআই স্পেশাল ডাইরেক্টর রাকেশ আস্থানার৷ শেষ পর্যন্ত তাতে জড়িয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তথা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন প্যানেল৷
৩ মাস আগে সিবিআইয়ের এই দুই শীর্ষ আধিকারিকের দ্বৈরথ সবার নজরে আসে৷ সিবিআইয়ের স্পেশাল ডাইরেক্টর রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ওঠে৷ এই উচ্চপদস্থ সিবিআই আধিকারিক হায়দ্রাবাদের মাংস রফতানীকারক মইন কুরোশির বিরুদ্ধে কালো টাকা সংক্রান্ত এক গুরুতর অভিযোগ তদন্ত বন্ধ করার জন্যে মোটা অংকের ঘুস নিয়েছিলেন৷
এই মর্মে উক্ত সিবিআই আধিকারিকের বিরুদ্ধে এফ.আই.আর দায়ের করা হয়৷
রাকেশ আস্থানাও সিবিআই ডাইরেক্টর আলোক ভার্মার বিরুদ্ধে ওই একই অভিযোগসহ নানান্ গুরুতর অভিযোগ আনেন৷ এই পরিপ্রেক্ষিতে ২৩শে অক্টোবর মধ্যরাতে আচমকাই প্রধানমন্ত্রী মোদি সিবিআইয়ের ডাইরেক্টর আলোক ভার্মা ও স্পোদাল ডাইরেক্টর রাকেশ আস্থানা--- উভয়কেই ছুটিতে পাঠিয়ে দিলেন ও আলোকভার্মার জায়গায় সিবিআইয়ের
অন্তবর্তীকালীন ডাইরেক্টরের দায়িত্ব দেওয়া হ’ল অন্যতম জয়েন্ট ডাইরেক্টর এম নাগেশ্বেরকে৷
কেন্দ্রের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে’ আলোক ভার্মা সুপ্রিম কোর্র্টের দ্বারস্থ হন৷ গত ৮ই জানুয়ারী সুর্প্রিম কোর্ট জানিয়ে দেন, আলোক ভার্মাকে ছুটিতে পাঠানো বে-আইনী হয়েছে৷ তাই সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশ---তাঁকে অবিলম্বে সিবিআইয়ের ডাইরেক্টরের পদে পুনর্বহাল করতে হবে৷ তবে শীর্ষ আদালত জানায়, ভার্মার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি নীতিগতভাবে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না৷ এই পরিপ্রেক্ষিতে আলোকভার্মা স্বপদে ফিরে আসেন৷
কিন্তু এরপর দু-দিনের মাথায় ৯ই জানুয়ারী রাতে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন প্যানেল আলোকভার্মাকে আবার সিবিআই ডাইরেক্টরের পদ থেকে সরিয়ে দিলেন৷ তাঁকে বদ্লি করা হ’ল কার্যতঃ গুরুত্বহীন দমকলের ডিজি পদে৷
এরপর, সিবি আই প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেবার ২ দিন পরে ১১ই জানুয়ারী আলোক ভার্মা চাকরীই ছেড়ে ছিলেন৷ তিনি দমকলের ডিজি পদ প্রত্যাখ্যান করে ইণ্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিস (আই পি এস) থেকেই পুরোপুরি ইস্তফা দিলেন৷
তাঁর বক্তব্য, তাঁকে মিথ্যা, প্রমাণ নেই---এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ তিনি বলছেন, ‘সিবিআইয়ের মতো প্রতিষ্ঠানকে বাইরের প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করা উচিত৷ কিন্তু সেটা ধবংস করার চেষ্টা হয়েছে৷’
বিরোধীদের অভিযোগ, আলোক ভার্মা আসলে রাফায়েল সম্পর্কিত দুর্নীতির তদন্তে উদ্যোগী হয়েছিলেন বলেই আর এক মুহূর্ত আলোকভার্মাকে সিবিআই পদে রাখা হ’ল না৷
সে আই হোক না কেন, সিবিআইয়ের ঘরোয়া বিবাদে এটা অন্ততঃ এতটা পরিষ্কার যে এই সিবিআই এখন দুর্নীতি-গড়ে পরিণতি হয়েছে৷ কথায় বলা হয়, যে সরষে দিয়ে ভুত তাড়ানো হয়, সেই সরষের মধ্যেই যদি ভুত লুকিয়ে থাকে, তাহলে ভুত আর তাড়ানো যায় না৷