সম্প্রতি তিন দফায় রাজ্যে ১১৪টি পুরসভার নির্বাচন হয়৷ নির্বাচনে শাসকদল বিরোধীদের নিশ্চিহ্ণ করে ব্যাপকভাবে জয় লাভ করে৷
বিশিষ্ট প্রাউটতাত্ত্বিক শ্রীপ্রভাত খাঁ পৌর নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর বলেন---এই ভাবে শাসকদলের একতরফা জয় সংসদীয় গণতন্ত্রের কাছে অশনী সংকেত৷ যদিও বিরোধীরা এই ফল মানতে নারাজ৷ তাদের অভিযোগ শাসক দল রিগিং ও সন্ত্রাস সৃষ্টি করে নির্বাচনে জয় লাভ করেছে৷ এই ফল জনগণের রায় নয়৷
শ্রী খাঁ বিরোধীদের অভিযোগ সম্পূর্ণ উপেক্ষা না করলেও বিরোধীদের অযোগ্যতাকেও এই ফলের জন্যে দায়ী করেছেন৷ শ্রী খাঁ বলেন বিক্ষিপ্তভাবে কিছু রিগিং হয়তো হয়েছে, কিন্তু বিরোধীদের এইভাবে বিপর্যস্ত হওয়ার পিছনে শুধু রিগিং নয়, বিরোধীদের অযোগ্যতাকেই মূলত দায়ী করেছেন৷ শ্রী খাঁ বলেন সাংবিধানিক ত্রুটি ও বিরোধীদের অবিবেচক কথা-বার্র্ত কাজকর্মই তাদের জনগণের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে৷ সংসদীয় গণতন্ত্রে শাসক ও বিরোধী উভয়পক্ষের সমান গুরুত্ব৷ বিরোধী দল ও সরকারের অংশীদার৷ সরকার পরিচালনায় বিরোধীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে৷ শ্রী খাঁ আক্ষেপ করে বলেন--- ভারতবর্ষে কি শাসকদল কি বিরোধীপক্ষ কেউ গণতন্ত্রের মর্যাদা রক্ষার কথা ভাবেন না৷ শাসকদলের লক্ষ্য কিভাবে বিরোধীদের কোনঠাসা করে রাখা যায়৷ অপর দিকে বিরোধীরাও সরকারের কাজের ভালো-মন্দ-বিচার না করেই সমালোচনা করে যায়৷ যার ফলে জন মনে অনেক সময় বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে৷ বিরোধী নেতারা রাজ্যসরকারের কন্যাশ্রী, লক্ষ্মীভাণ্ডার প্রভৃতি জনমুখী প্রকল্পের তীব্র সমালোচনা করে৷ যা সাধারণ মানুষ ভালো চোখে নেয়নি৷ শ্রী খাঁ বলেন অর্থনীতির তাত্ত্বিক বিচারে এইভাবে দান খয়রাত ঠিক নয়৷ কিন্তু তত্ত্ব কথার কচকচানিতে গরীবের পেট ভরে না৷ যে মানুষটার নুন আনতে পান্তা ফুরায় তার কাছে পাঁচশ, হাজার টাকার মূল্য কত তা ধনকুবেরদের পালিত নেতারা বুঝবেন না৷ তাছাড়া এই টাকা ধনীর গোপন ভান্ডারে নিশ্চল হয়ে পড়ে থাকবে না৷ গরীবের হাত হয়ে সবজির দোকানে মুদির দোকানে ঘুরতে থাকবে-যা অর্থকে কিছুটা হলেও সচল রাখতে সাহায্য করবে৷ তাই খারাপেরও যে একটা ভালো দিক থাকে সেটা বিচার না করে অবিবেচকের মত সমালোচনা করে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে বিরোধীরা৷ তাই শুধু রিগিং সন্ত্রাসকে দায়ী করে বিরোধীরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না৷
শ্রী খাঁ বলেন সাংবিধানিক কিছু ত্রুটির কারণেই আজ ধান্দাবাজ অসৎ লোকেরা রাজনীতির ময়দানে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ তিনি বলেন ভোট দেবার যোগ্যতা একমাত্র বয়স৷ সাবালোক সাবালিকা হলেই ভোট দানের অধিকার অর্জন করে৷ সে তার সামাজিক অর্থনৈতিক রাজনৈতিক সচেতনতা থাক বা না থাক৷ জনগণের অসচেতনতার সুযোগ নিয়েই অসৎ লোকেরা ক্ষমতা কুক্ষিগত করে নেয় ও তারপর নানা ছল-চাতুরী করে ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়৷ এসব কারণেই আজ ভারতের রাজনীতি কলুষিত হচ্ছে৷
গণতন্ত্রে শাসকদলের বিপক্ষে শক্তিশালী বিরোধীপক্ষ অবশ্যই থাকা চাই৷ নতুবা-প্রবাদে আছে অধিক ক্ষমতা-অধিক দুর্নীতি৷ তাই বিরোধীহীন শাসকের মধ্যে দুর্নীতিও স্বৈরাচারিতা প্রভাব বিস্তার করতে পারে৷ কি কেন্দ্র কি রাজ্য কেউ বিরোধীদের যথাযথ মর্যাদা দিতে চায় না৷ ভালো কাজ করলে জনগণ পাশে থাকবেই৷ বিরোধীতাকে ভয় কেন? বরং দুর্নীতি থেকে দূরে থাকার সদ্ইচ্ছা থাকলে শক্ত বিরোধী পক্ষকে ভয় পাবার কিছু থাকে না৷ বরং শক্ত বিরোধী পক্ষ না থাকলেই স্বৈরাচারিতা ও দুর্নীতি গ্রাস করতে পারে শাসক দলকে৷ তাই বিরোধী শূন্য এই নির্বাচনী ফল শাসকদের পক্ষেও অশনী সংকেত৷