প্রবীন প্রাউটিষ্ট নেতা প্রভাত খাঁ বলেন---ভারতবর্ষের অভ্যন্তরেই আজ বিচ্ছিন্নতার সুর৷ তাই রাষ্ট্রের কর্ণধারদের সংহতির কথা চিন্তা করতেই হবে৷ ঐক্যের পথ খুঁজে বের করতেই হবে৷ কিন্তু শুধু রোগ জানলেই হবে না৷রোগের কারণও জানতে হবে৷ নতুবা ভুল ঔষধ প্রয়োগে হিতে বিপরীত হবে৷
ভারতবর্ষ একটি যুক্তরাষ্ট্র৷ এই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় নানা ভাষাভাষীর জনগোষ্ঠী আছে৷ তাদের আচার-আচরণ, পোষাক-আষাক, চাল-চলনে অনেক পার্থক্য আছে৷ এই পার্থক্যই ভারতবর্ষকে এক নতুন বৈশিষ্ট্য দিয়েছে৷ তাই বলা হয়ে থাকে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য৷ তাই রাষ্ট্র নেতাদের এই বৈচিত্র্যের পৃথক বৈশিষ্ট্য বজায় রেখেই ঐক্যের পথ খুঁজতে হবে৷ পৃথক বৈশিষ্ট্যের বিনাশ ঘটিয়ে নয়৷
কিন্তু স্বাধীনতার জন্মলগ্ণ থেকেই দেশীয় পুঁজিপতিরা আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্যের বিনাশ ঘটিয়ে বিশেষ করে বাঙলার উন্নত ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি ধবংস করে শোষণের পথ সুগম করেছে৷
ভারতবর্ষের বর্তমান যে সামাজিক অবক্ষয় ও বিচ্ছিন্নতার সুর শোনা যাচ্ছে তার কারণ কিন্তু কোনও ভাষা নয়৷ একদিকে অর্থনৈতিক বৈষম্য আশমান-জমিন তফাৎ, অপরদিকে অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ধর্মমত মানুষকে সমাজ, রাষ্ট্র, অর্থনীতি, রাজনীতি সম্পর্কে অজ্ঞ অচেতন করে রেখেছে৷
অপর দিকে নিজস্ব ভাষা কৃষ্টি সাহিত্য সংস্কৃতি ধবংস করে একটি জনগোষ্ঠীর মানসিকতাকে পঙ্গু করে দিয়েছে৷ একাজে সে ব্যবহার করে একটি বিশেষ ভাষাকে৷ শ্রী খাঁ বলেন--- রাষ্ট্রনেতাদের মনে রাখতে হবে ভারতবর্ষ শুধু একটি দেশ নয়, ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও নৃতাত্ত্বিক বিচারে ভাতবর্ষ বহু জনগোষ্ঠীর মিলনস্থল৷ আবার শাসনবিধি অনুযায়ী ভারতবর্ষ বহু দলীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র৷ কবির কথায়---‘নানা ভাষা, নানা মত নানা পরিধান/বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান৷’ মহান ভারতবর্ষের ঐতিহ্য এটাই৷ মহামিলনের এই তীর্থক্ষেত্রের মহত্ব কোন একটি ভাষা বা কোনও একটি ধর্মমতের জন্যে নয়৷ দেশের কর্ণধারদের এই সহজ সত্যটা বুঝতে হবে৷
এও মনে রাখতে হবে প্রাউটের দৃষ্টিতে ভারতবর্ষ ৪৪টি জনগোষ্ঠীর একটি দেশ৷