মানবিক মূল্যবোধহীন অন্ধ আবেগের কাছে হার মানছে মর্মান্তিক মৃত্যু৷ মহাকুম্ভেই পদপিষ্ট হয়ে মারা গেছে বহু৷ নয়াদিল্লি রেলষ্টেশনে তীর্থযাত্রীদের ভীড়ের চাপে পদপিষ্ট হয়ে মারা যায় ১৮ জন৷ এখানেও অনেকে আহত৷ তবু অমৃত লাভের আবেগে ভেসে ছুটে যাচ্ছে মানুষ মহাকুম্ভে৷
এদিকে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড আর এক আশঙ্কার কথা শুনিয়েছে৷ প্রয়াগ রাজে গঙ্গার জল স্নানের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ছে৷ ১২, ১৩ই জানুয়ারী জল পরীক্ষা করে জানা যায় ওই জল স্নানের অনুপযুক্ত৷ জলে ফিসাল কলিফর্ম ব্যাক্টেরিয়ার মাত্রা নির্দ্ধারন করে জল ব্যবহারের উপযুক্ত কি না৷ ১২,১৩ই জানুয়ারী পরীক্ষার পরও প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ পূর্ণ্যার্থী প্রয়াগ রাজের গঙ্গায় স্নান করছে৷ লক্ষ লক্ষ লোকের সমাগমে মলমূত্র নিষ্কাসনের ব্যবস্থা থাকলেও গঙ্গার জলেও মিশছে ব্যাক্টেরিয়া বাড়ছে৷ এখনও প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ লোকের সমাগমে মল মূত্র নিষ্কাসনের ব্যবস্থা থাকলেও গঙ্গার জলেও মিশছে পয়ঃবর্জ৷ তারফলেও জলে ফিসাল কলিফর্ম ব্যাক্টেরিয়া বাড়ছে৷ এখনও প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ স্নান করছে৷ ফলে এই ব্যাক্টেরিয়া আরও বাড়ার সম্ভাবনা৷
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের এই প্রতিবেদনে মোদির নমামি গঙ্গে কর্মসূচী নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে৷ ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর মোদি সরকার এই প্রকল্প ঘোষনা করে৷ গঙ্গাকে দূষণ মুক্ত ও সংরক্ষণ খাতে প্রতি বাজেটে বিপুল টাকা বরাদ্দ হচ্ছে৷ তারপরেও গঙ্গার এই অবস্থা৷ আর সেটা জানাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারেরই একটি দপ্তর কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড৷
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের এই প্রতিবেদনে উদ্বিগ্ণ ন্যাশনাল গ্রীন ট্রাইব্যুনাল৷ আগেও উত্তরপ্রদেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের কাছে জানতে চেয়েছিল গ্রীণ ট্রাইব্যুনাল---দূষণরোধে কি ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার৷ উত্তর প্রদেশ সরকার প্রতিবেদন জমাও দেন৷ কিন্তু এখন কেন্দ্রীয় বোর্ডের প্রতিবেদন দেখে গ্রীণ ট্রাইব্যুনাল উত্তর প্রদেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডকে তলব করেছে গ্রীন ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব৷ গঙ্গা দুষণ নিয়ন্ত্রণে উত্তরপ্রদেশ কি ব্যবস্থা নিয়েছে তা ট্রাইবুনালের কাছে বিস্তারিত জানাতে হবে৷
যোগীর সাফাই--- উত্তরপ্রদেশ রাজ্য বিধানসভায় দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের প্রতিবেদন খারিজ করে দিলেন যোগী৷ কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের পরীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী প্রয়াগরাজের গঙ্গা স্নানের অনুপযুক্ত৷ গত ১৯শে ফেব্রুয়ারী রাজ্য বিধানসভায় যোগী দাবী করেন সঙ্গমের জলে স্নান করাও যাবে ও এই জল পানেরও যোগ্য৷ সনাতন ধর্ম ও কুম্ভের বদনাম করতে ভুল তথ্য প্রচার করা হচ্ছে৷ যোগীর দাবী ৫৬কোটি ২৫লক্ষ মানুষ প্রয়াগে স্নান করেছেন৷ যোগীর কথায় গঙ্গার জল নয়, ভুল তথ্য প্রচার করে মা গঙ্গাতাঁর দাবীর সমর্থনে রাজ্য দূষন নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের প্রতিবেদন তুলে ধরে৷
তবে যোগীর দাবীকে মানতে নারাজ বিরোধী রাজনৈতিক মহল৷ তাঁদের দাবী জল দূষণের ফলে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উদ্বেগ ধামা চাপা দিতে যোগী ধর্মীয় আবেগকে হাতিয়ার করছে৷ ন্যাশনাল গ্রীন ট্রাইব্যুনালের বক্তব্য রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড উপযুক্ত তথ্যই এখনও দিতে পারেনি৷ যোগীর দাবী নিয়ে গ্রীন ট্রাইব্যুনাল কোন কথা না বললেও তাঁদের বক্তব্য কেন্দ্র ও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড এখনও পর্যন্ত গঙ্গার জলের গুণগত মান নিয়ে কোন বিস্তারিত রিপোর্ট দেয়নি৷