ঝুলি থেকে বিড়াল বের হ’ল: হিন্দী-সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

কেন্দ্রে মোদী সরকার মাত্র ৩০শে মে শপথ গ্রহণ করল৷ ৩১শে মে রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্ক মানব সম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেই জানা গেল তাঁর হাতে  এরই মধ্যে এই সরকারের নূতন শিক্ষানীতির খসড়া জমা পড়ে গেছে, যাতে বলা হয়েছে দেশের সমস্ত স্কুলে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত হিন্দী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে৷ এ খবর পাওয়া মাত্র তামিলনাড়ুর এ.ডি.এম.কে সরকারের শিক্ষামন্ত্রী  সেঙ্গোওয়াইয়াল জানিয়েছেন, তাঁরা কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত মানবেন না৷ ইতোমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের এই নীতির প্রতিবাদে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়েছে৷ দক্ষিণের অন্যান্য অহিন্দীভাষী রাজ্যেও বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে৷ পশ্চিম বাঙলাতে ‘আমরা বাঙালী’ দল সহ বেশ কিছু সংস্থা কেন্দ্রের এই নীতির বিরোধিতা করেছে৷

পরিস্থিতির চাপে পড়ে অবশেষে কেন্দ্রীয় সরকার পিছু হটেছে৷ মানব সম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল জানিয়েছেন, না, এই যে প্রস্তাব তা ডঃ কৃষ্ণস্বামী কস্তুরীরঙ্গন কমিটির নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১৯-এর খসড়া মাত্র৷ এখনও পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি৷ অর্থাৎ এই পরিস্থিতিতে আপাততঃ অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত হিন্দি শিক্ষা বাধ্যতামূলক হচ্ছে না৷ ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে হিন্দি পড়তে পারে ছাত্রছাত্রারা৷ বলা বাহুল্য, বর্তমান যে শিক্ষানীতি চলছে তা তৈরী হয়েছিল ১৯৯২ সালে৷ ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর নয়া শিক্ষানীতি তৈরীর জন্য কস্তুরীরঙ্গন কমিটি তৈরী করা হয়েছিল৷ এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে সংঘ পরিবারের বরাবরের নীতি ‘‘হিন্দী-হিন্দু-হিন্দুস্তান’’৷ হিটলারীয় নীতিতে বহু ভাষাভাষী ভারতবর্ষের সব ভাষাভর্াী জনগোষ্ঠীর ওপর জোর করে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়াই তাদের নীতি৷ শুধু সংঘ পরিবারের কেন, দিল্লীর কংগ্রেসী নেতারাও স্বাধীনতার পর থেকে এই নীতি নিয়েই চলেছে৷ কখনও এই নীতি নিয়ে জোর মাত্রায় আগ্রাসন চালিয়েছে, কখনও বা সারা ভারত জুড়ে বিদ্রোহের আঁচ পেয়ে ধীরে ধীরে এগিয়েছে৷ স্লো-পয়জন দেওয়ার মত নিঃশব্দে অন্যান্য ভাষাগুলিকে দুর্বল করে তাদের ওপর হিন্দি চাপিয়েছে৷ এমনি করে তো বিহার-উত্তরপ্রদেশের অঙ্গিকা, মৈথিলি, ভোজপুরী, নাগপুরিয়া, অবধি প্রভৃতি ঐতিহ্যবাহী ভাষাগুলিকে শেষ করে দিয়ে জোর করেই ওই ভাষাভাষীদের ওপর হিন্দী চাপিয়ে দিয়েছে৷ ওইসব ভাষাগুলিকে সুকৌশলে বিলুপ্তির ব্যবস্থা করেছে৷ বলা হয়েছে, হিন্দী তাদের মাতৃভাষা, আর তাদের নিজ নিজ প্রকৃত মাতৃভাষাগুলি নাকি হিন্দীর উপভাষা৷ অথচ ভাষাবিজ্ঞানীরা অন্য কথা বলেন৷

এছাড়া এ যাবৎ ভারতবাসীকে শেখানো হয়েছে, হিন্দী এদেশের রাষ্ট্রভাষা৷ তাই হিন্দী শেখা সকলের পক্ষে বাধ্যতামূলক৷ প্রকৃত ঘটনা কিন্তু তা নয়৷ ভারতীয় সংবিধান কোন ভাষাকেই রাষ্ট্রভাষা বলে ঘোষণা করেনি৷ বাংলা, অসমিয়া, ওড়িয়া, তেলেগু, তামিল, মালায়ালম প্রভৃতি ১৫টি ভাষাকে সমমর্যাদাসম্পন্ন সরকারী ভাষা হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে৷ কিন্তু দিল্লীওয়ালারা সুকৌশলে হিন্দী ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা বলে প্রচার চালাচ্ছেন৷ কেন্দ্র অন্যান্য ভাষাগুলিকে ক্রমাগত অবদমন করে হিন্দী ভাষার প্রসারে নানারকম কৌশল অবলম্বন করে চলেছে৷ কখনও সরাসরি অন্যান্য ভাষার মাথায় চড়তে চাইছে৷ কখনও বা কিছুটা ধীরে চলা নীতি নিয়ে কিছুটা পিছু হটছে৷