গত ২২শে নভেম্বর কলিকাতা মেট্রোরেলে এক বাঙালী তরুণী হিন্দি না বলায় এক অবাংলা ভাষী মেয়ে বলে---আপনি হিন্দি জানেন না, আপনি বাংলাদেশী৷ এই ধরনের কথা শোনার অভিজ্ঞতা বিহার, উত্তরপ্রদেশ গুজরাট মহারাষ্ট্রে অনেক বাঙালীরই আছে৷ কিন্তু কলিকাতার বুকের ওপর এতবড় কথা বলার সাহস কি করে পায় একজন ভিন্ন রাজ্যের তরুণী! মজার কথা হ’ল এই তরুণী জানে না ওর নিজের মাতৃভাষাকেই হিন্দিগ্রাস করে নিয়েছে৷ কারণ ভাষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও নৃতাত্ত্বিক বিশ্লেষনে ভারতে প্রায় ৪৪টি জনগোষ্ঠী আছে৷ যাদের কারো মাতৃভাষাই হিন্দি নয়৷
ব্রিটিশ আমলে রাজধানী দিল্লীতে নানা ভাষা-ভাষীর কর্মচারীদের অসুবিধা দূর করতে উর্দু ও বুন্দেলী, বাঘেলী, ভোজপুরি, মৈথিলী প্রভৃতি ভাষার সমন্বয়ে তৈরী হয় হয় হিন্দিভাষা, যার কোন ব্যাকরণগত ভিত্তি নেই৷ ব্রিটিশ পরবর্তী স্বদেশী সাম্রাজ্যবাদী সরকারও ব্রিটিশ পদাঙ্ক অনুসরণ করে হিন্দি জোর করে চাপিয়ে স্থানীয় ভাষাগুলিকে ধবংস করার পরিকল্পনা নিয়েছে৷ ৭৭ বছরে এই কাজে তারা অনেকটাই সাফল্য লাভ করেছে৷ বিশেষ করে বিহার ও উত্তর প্রদেশের মানুষকে তাদের স্থানীয়ভাষা ভোজপুরি, মৈথিলী, অঙ্গিকা, মগহী, বুন্দেলী, বাঘেলী, প্রভৃতি ভাষাগুলি বিলুপ্ত করে হিন্দি চাপিয়ে দিয়েছে৷ একই কাজ তারা বাংলায় করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়৷ তাই এখন ধীরে ধীরে কলিকাতা ও শহরতলীতে তথাকথিত হিন্দিভাষীর সংখ্যা ও প্রভাব বাড়াচ্ছে ও বাংলা ও বাঙালীর ঘাড়ে চেপে বসছে৷ তাই কলিকাতাতেই আজ বাংলা ভাষা ও বাঙালী জনগোষ্ঠী বিপন্ন বোধ করছে৷
আমরা বাঙালী কেন্দ্রীয় কমিটির সংঘটন সচিব তপোময় বিশ্বাস মেট্রোরেলে এক অবাঙালী তরুণীর এই উদ্ধত্যের তীব্র প্রতিবাদ করেন৷ তিনি বলেন কলিকাতার বুকে এ জিনিস চলতে দেওয়া যাবে না৷
অবিলম্বে এই অত্যাচার বন্ধ না হলে আমরা বাঙালী প্রতিরোধে নামবে৷ তার ফলে যে কোন ধরণের পরিস্থিতি তৈরী হলে তার দায় রাজ্যসরকারকে নিতে হবে৷ তিনি আরও দাবী করেন অন্য অনেক রাজ্যের মতো এখানেও মাধ্যমিক পর্যন্ত সরকারী বেসরকারী সব স্কুলে বাংলা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে৷ সরকারী বেসরকারী সব সংস্থার কর্মচারীদের বাংলায় কাজ করা আবশ্যিক করতে হবে৷ আগামী ২৯শে নভেম্বর আমরা বাঙালী মেট্রোভবনের সামনে বিক্ষোভে প্রদর্শন করবে বলে শ্রী বিশ্বাস জানান৷