মায়ানমারে যেভাবে দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা বাঙালীদের ওপর নির্মম অত্যাচার ও দমন পীড়ন চলছে তার বিরুদ্ধে আমরা বাঙালী তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে গত ২২ সেপ্ঢেম্বর বিকেলে আমরা বাঙালীর পক্ষ থেকে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয়৷ মিছিল আমির আলি এভিনিউ হয়ে বালিগঞ্জ সারকুলার রোড ধরে মায়ানমার কনসুলেটে পৌঁছোয়৷ সেখানে মায়ানমারের রাষ্ট্রপতির উদ্দেশ্যে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়৷ কনসাল জেনারেল মি.পি.সো মহোদয়ের নিকট স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন সচিব বকুল চন্দ্র রায়, সহসচিব তারাপদ বিশ্বাস, প্রকাশন সচিব রবীন্দ্রনাথ সেন, সাংঘটনিক সচিব খুশিরঞ্জন মন্ডল , সদস্য সাগরিকা পাল ও স্বপন দে৷
এরপর উপস্থিত জনগণের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন তারাপদ বিশ্বাস, বকুল চন্দ্র রায়খুশিরঞ্জন মন্ডল ও সুনীল চক্রবর্তী৷ তারা বলেন, মায়ানমারের আরাকান ভুক্ত রাখাইন ও তৎসংলগ্ণ এলাকার বাসিন্দা রোহিঙ্গা বাঙালীদের উপর নিপীড়ন অত্যাচার, অগ্ণিসংযোগ, ধর্ষণ, তথা হত্যালীলার সংবাদে বাঙালী জাতি তথা মানবতাবাদী বিশ্ববাসী স্তম্ভিত৷ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ এজেন্সির সরবরাহ করা সংবাদ ও তথ্যচিত্র থেকে স্পষ্ট যে, রাখাইনের রোহিঙ্গা বাঙালীরা বর্তমান সময়ে ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ নির্র্যতন ও হত্যালীলার শিকার৷
ইতিহাস বলছে, রোহিঙ্গারা মায়ানমারে উড়ে এসে জুড়ে বসা কোনো জাতি নয়৷ আরাকান এলাকার আদিনিবাসী রোহিঙ্গা বাঙালী জনগোষ্ঠী৷ তারাই বেশ কয়েক শতাব্দি ধরে আরাকানকে বসবাস উপযোগী করে তুলেছে৷ ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের শুরুর পর্র্যয়ে মায়ানমারে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক পার্র্লমেন্টে রোহিঙ্গা বাঙালীদের প্রতিনিধিত্ব ছিল৷ বেশ কিছু পদস্থ অফিসার সে সময় সরকারী দায়িত্ব পালন করেছেন৷ ১৯৬২ সালে নে উইনের নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটার পরই সামরিক জুন্টা রোহিঙ্গা বাঙালীদের বিদেশী হিসাবে চিহ্ণিত করে ও নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়৷ সেই থেকে শুরু হয় রোহিঙ্গাদের দুর্র্ভেগের নতুন অধ্যায় ৷
সামরিক জুন্টা তাদের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করে৷ ভোটাধিকার কেড়ে নেয়৷ ধর্মীয় দিক থেকেও অত্যাচার করা চলতে থাকে৷ হত্যা ধর্ষণ হয়ে ওঠে নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা৷ সম্পত্তি জোর করে কেড়ে নেওয়া হয়, বাধ্যতামূলক শ্রমে নিয়োজিত করা হতে থাকে৷ তাঁদের শিক্ষা স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ নেই, বিয়ে করার অনুমতি নেই ৷ সন্তান হলে নিবন্ধনের ব্যবস্থা নেই৷ জাতিগত পরিচয় প্রকাশ করতে দেওয়া হয় না৷ সংখ্যা বৃদ্ধি বন্ধ করতে আরোপিত হয় একের পর এক বিধি নিষেধ ৷ দীর্ঘ কয়েক শতাব্দী ধরে আরাকানে যাদের আদিনিবাস, তাঁদের উপর কেন শতাব্দীর ঘৃণ্যতম এ নিপীড়ন , নির্র্যতন , হত্যালীলাকী অপরাধে তাঁরা সন্ত্রাসের বলিলক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা বাঙালীরা তাদের পুরুষানুক্রমিক ভিটামাটি ছেড়ে বাংলাদেশভারতবর্ষ, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে উদ্বাস্তু হয়ে ভীড় জমাচ্ছেন৷ ১৯৭৮ সালে প্রায় দুই লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসতে বাধ্য হয়৷ ১৯৮২ সালে আইন করে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়৷ এমতবস্থায় বাঙালী জাতির প্রতিভূ হয়ে আমরা বাঙালী দাবী জানায় রোহিঙ্গা বাঙালীদের সার্বিক নির্র্যতন নিপীড়ন হত্যালীলা বন্ধ করে তাঁদের নাগরিক অধিকার প্রদান করে সুস্থ সামাজিক জীবন যাপন করার সুযোগ প্রদান করুক আরাকান সরকার৷