বাইশ গজে স্ট্রোকের ফুলঝুড়ি ছোটায় তাঁর ব্যাট৷ অফস্পিন বোলিংয়েও ভরসা দেন দলকে৷ শ্রীরামপুরের ইন্দ্রনীল সাধুখাঁ আরও একবার ডাক পেলেন মূক-বধিরদের জাতীয় দলে৷ সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে আগামী ৩০শে সেপ্ঢেম্বর থেকে ৯ ই অক্টোবর টি-টোয়েন্টি চ্যাম্পিয়ান্স ট্রফি হবে৷ এরপরে ১০-১৫ই অক্টোবর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দু’টি টি-টোয়েন্টি ও তিনটি এক দিনের ম্যাচ খেলবে ভারত৷ দলে এ রাজ্য থেকে একমাত্র ইন্দ্রনীলই আছে৷ তিনি দিল্লী চলেও গেছেন শিবিরে যোগ দিতে৷
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালেও মূক-বধির ভারতীয় দলে খেলেছিলেন এই অলরাউণ্ডার৷ তার পরে হাঁটুর চোট কিছুটা কাবু করেছিল৷ চোট সারিয়ে মাঠে ফেরেন৷ এ বার পাকিস্তানকে দুরমুশ করতে অস্ত্রে শান দিচ্ছেন তিনি৷ চলছে নিবিড় অনুশীলন৷
ইন্দ্রনীল থাকেন শ্রীরামপুরের নেতাজী সুভাষ অ্যাভিনিউতে৷ ছোট থেকেই ক্রিকেটের প্রতি টান ছিল তাঁর৷ ব্যাট-বলে হাতে খড়ি স্থানীয় মৈত্রী পরিষদে মানবেন্দ্র দাসের কাছে৷ তার পরে উত্তর পাড়ায় সিএ ক্লাবে প্রণব নন্দীর কাছে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন৷ প্রণবের সহকারী ছিলেন আশিস দাস৷ ২০০৭ সাল নাগাদ আশিস তাঁকে শ্রীরামপুরের সবুজ সংঘে নিয়ে আসেন৷ ইন্দ্রনীল তখন স্কুল পড়ুয়া৷ সেই থেকে দীর্ঘ দেড় দশক সবুজ সংঘের হয়ে শ্রীরামপুর মহকুমা লিগে খেলছেন৷ ব্যাটিংয়ে ওপেন করেন৷ এখন বয়স ৩৩ বছর৷ সিএবি লিগে জর্জ টেলিগ্রাফ, শিবপুর, ন্যাশনাল স্পোর্টিং প্রভৃতি ক্লাবের হয়ে তিনি খেলেছেন৷ এখন দ্বিতীয় ডিভিশনের দল ডেফ অ্যাসোসিয়েশনের হয়ে খেলেন৷
ইন্দ্রনীল বাঁ হাতি ব্যাটস্ম্যান৷ বল করেন ডান হাতে৷ তাঁর সাফল্যে খুশি সতীর্থরা৷ অঙ্কিত মণ্ডল, সুরজিৎ দত্ত, সুপ্রতীক গুঁইনরা জানান, উইকেটের দু’দিকেই সমান স্বচ্ছন্দ ইন্দ্রনীল৷ টেকনিক খুব ভাল৷ ইন্দ্রনীলের প্রতিবন্ধকতা ১০০ শতাংশ৷ কথা বলতে পারে না ও শুনতেও পায়ে না কিন্তু মাঠে বা মাঠের বাইরে তাঁর সঙ্গে সতীর্থদের বোঝাপড়ায় অবশ্য সমস্যা হয় না৷ ক্রিকেটের মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চেও সতীর্থ বিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করবেন, বিশ্বাস অঙ্কিতদের৷
সংবাদ মাধ্যমকে ইন্দ্রনীল অস্ফুট আওয়াজে, কিছুটা হোয়াটসএ্যাপে লিখে ও ক্লাবের ক্রিকেট সচিব সৌরভ সোমের মাধ্যমে জানান ‘‘সুযোগ পেয়ে তিনি খুব খুশি কিন্তু কোন বাড়তি উত্তেজনা নেই৷ মাঠে নিজেকে উজাড় করে দিতে চান৷
সৌরভ বলেন, ‘‘শুধু ক্রিকেটার নয়, মানুষ হিসেবেও ইন্দ্রনীল অত্যন্ত ভাল৷ টানা দেড়দশক আমাদের ক্লাবে নিয়মিত খেলোয়াড়৷ ওঁর ধারাবাহিকতা কতটা, এতেই স্পষ্ট৷ আন্তর্জাতিক স্তরেও ইন্দ্রনীল সাফল্য পাবে বলেই আমার বিশ্বাস৷’’ সৌরভের সংযোজন,‘‘ইন্দ্রনীলের বাবা ওষুধের ব্যবসা করতেন৷ এখন অসুস্থ৷ তেমন কিছু করতে পারেন না৷ প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে খেলার মাঠে সফল হলেও ইন্দ্রনীলের একটা চাকরিও জোটেনি৷ একটা চাকরি পেলে খুব ভাল হয়৷ এত হতাশা , প্রতিকূলতাকে সরিয়ে রেখে বঙ্গসন্তানের এখন একটাই লক্ষ্য পাক-বধ করা খেলার মাঠে৷