আগেই আমরা কুসুমপুর নিয়ে আলোচনা করেছি৷ বিম্বিসারের সময় অর্থাৎ ৰুদ্ধের সময় রাজগিরি বা গিরিব্রজ ছিল মগধের রাজধানী৷ সেখানে ছিল জলাভাব৷ রাজধানীতে জলের প্রাচুর্য থাকা দরকার৷ সেকালে গঙ্গা ও শোণ নদী যেখানে মিলত, ৰুদ্ধ সেখানে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন–এই স্থানটিতে মগধের রাজধানী হলে সব দিক দিয়ে সুবিধা হয়৷ সেখানে ৰুদ্ধের শিষ্যদের মধ্যে পাটলীপু– নামে এক বণিক উপস্থিত ছিলেন৷ সেকালে মগধে নামকরণে পিতৃগত ও মাতৃগত কুলের একটা সমন্বয় ঘটেছিল৷ মায়ের নাম রূপসারি, তাই ছেলের নাম সারিপুত্ত মায়ের নাম মহামৌদগলী (মহামগ্গলি), তাই ছেলের নাম মহামৌদগ্ল্লন অরহণ (মহামগ্গল্লন)৷ তেমনি মায়ে নাম পাটলী তো পু–ের নাম পাটলীপু–৷ এই পাটলীপু–ই সেখানে শহর গড়ে দেবার দায়িত্ব নেন৷ তাই তাঁরই নামে শহরটির নাম হয় পাটলীপু–৷ কুসুমপুর ধবংস হয়ে গেল, সেখানে গড়ে উঠল পাটলীপু–৷ শোণ বারবার গতিধারা পাল্টেছে, বার বার পাটলীপু–কে ধবংস করেছে৷ এক পাটলীপু– মাটির তলে চলে গেলে আরেক নূতন পাটলীপু–ের পত্তন হয়েছে৷ বার বার পত্তন হবার ফলেই এই ভাঙ্গাগড়াপূর্ণ শহরটির নাম হয়ে দাঁড়ায় পত্না বা পটনা৷ ৰাংলা ও মারাঠীতে আমরা পাটনা লিখি (মারাঠিতে ‘পাটণা’) কিন্তু স্থানীয় ভাষা মগহীতে ‘পটনা’ লেখা হয়৷ ‘পটণা’ বা ‘পাটনা’ থেকে ‘পটনা’ ৰানানই অধিকতর সঙ্গত মনে হয়৷ গঙ্গার বন্যা পটনার পক্ষে যতটা বিধবংসী শোণের বন্যা তার চেয়ে বেশী বিধবংসী৷ মধ্যপ্রদেশের বাঘেলখণ্ডী এলাকায় জন্মগ্রহণ করে এই নদ প্রাক্তন মগধ ও কাশী রাজ্যের সীমানা ধরে এগিয়ে গঙ্গায় মিশেছে৷ এর জলের রঙ সোণার মত অথবা শোণ ফুলের মতই সোণালী৷ তাই এর নাম শোণ৷ হিন্দী ব্যাকরণে অধিকাংশ নদীই স্ত্রীলিঙ্গবাচক হলেও শোণ পুংলিঙ্গবাচক যেমন ‘‘গঙ্গা বহতী হ্যায়’’, কিন্তু ‘‘শোণ বহতা হ্যায়’’৷
এই পটনার মত পত্তনজাত আরও শহর ভারতে ছিল বা আছে৷ যেমন মসলীপত্তনম্, শ্রীরঙ্গপত্তনম্, ভবানীপাটনা, সিংহলপাটন (হুগলী জেলার সিঙ্গুর–এর নিকটবর্তী একটি ছোট্ট গ্রাম)৷ দু’টি ক্ষুদ্র নদীর সংযোগস্থলে অবস্থিত এই সিংহলপাটন গ্রামটি এক কালে রাঢ়ের বন্দর ছিল৷ আর এই বন্দর থেকেই রাঢ়ের রাজকুমার বিজয় সিংহ সিংহল (তৎকালীন নাম ‘লঙ্কা’) অভিমুখে যাত্রা করেন৷