ভাবলে অবাক হতে হয়, কুড়ির কম বয়সি এই পাঁচজনই এখন ২৬০০-র উপরে এলো রেটিংয়ে থাকা ভারতীয় দাবাডু৷ গুকেশ যেমন ১২ বছর বয়সে গ্র্যাণ্ডমাস্টার হয়েছে৷ অর্জুন চমকে দিয়েছে টাটাস্টিল চ্যালেঞ্জারের মতো কঠিন টুর্ণামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়৷ নিহাল সব চেয়ে কম বয়সে বিশ্বকাপ খেলে ফেলেছে৷ কমনওয়েলথে চ্যাম্পিয়ান রৌনকও৷ প্রজ্ঞা তো বিশ্বচ্যাম্পিয়নকেও হারিয়ে এখন খবরের শিরোনামে৷ ওদের দেখে নিজের ছোটবেলার কথাও ভাবি৷ একটা সময় বন্ধুদের কোনও অভিভাবকও চাইতেন না তাঁদের ছেলে আমার সঙ্গে মিশুক৷ যদি দাবায় নেশাগ্রস্ত হয়ে ওঠে? দাবা তখনও ওই তাস-পাশার মতো সর্বনাশা৷ যা নিয়ে থাকে চায়েরদোকানের আড়ালে বসা ‘আধ বুড়োরা’৷ এখন ঠিক উল্টো ছবি৷ কার্লসেনের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ানকে প্রজ্ঞা যে হারিয়ে দিল, সেটাকে অনেকে ‘ফুক’ বলে খাটো করতে চান স্রেফ অজ্ঞতার জন্য৷ তাঁরা জানেনও না, দাবায় ভারতও এখন ‘সুপার পাওয়ার’৷ ফিডে ক্রম তালিকা সেটাও বলতে হয়৷ ভারতের প্রথম দশ জন দাবাডুর গড় রেটিংয়ের হিসাব করে৷ মেয়েরা রয়েছে তিনে৷
যাঁরা প্রজ্ঞার সাফল্যকে ‘দুর্ঘটনা’ বলে লঘু করতে চান, তাঁদের বলব আগামী দিনে নিহাল, অর্জুন, রৌনাক, দোমারাজুদের কাছেও কিন্তু যে কেউ হেরে যেতে পারে৷ এমনকি কার্লসেনও৷ আমাকে ইউরোপের তাবড় গ্র্যাণ্ডমাস্টাররা খোলাখুলিই বলেছেন, ওরা এখন আসতে ভয় পায়৷ বলেন এখনকার বাচ্চাদের কাছে হেরে রেটিং খারাপ হতে পারে৷
চেন্নাইয়ে নিজের বাড়িতে রাত জেগে ম্যাগনাস কার্লসেনের সঙ্গে ম্যাচ না খেলে আর কিছুদিন পরেই ব্যাঙ্কের চাকরির পরীক্ষায় বসতেই পারত আর প্রজ্ঞানন্দ৷ নিজের ব্যাঙ্ক অফিসার বাবার মতো৷ কেমিক্যাল ফ্যাক্টরির কর্মীর পুত্র নাগপুরের রৌনক সাগওয়ানির তো রসায়ন নিয়ে পড়াশোনা করার কথা৷ কেরলের নিহাল সারিন, তেলঙ্গানার অর্জুন এরিগেইসি, চেন্নাইয়ের দোমারাজু গুকেশ এর মেডিক্যাল পেশায় গেলেই যেন স্বাভাবিক কিছু ঘটত৷ কারণ ওদের তিন জনেরই বাবা রীতিমতো বড় ডাক্তার৷ কিন্তু শুধু তো প্রতিভায় হয়ে না তার সঙ্গে লাগে নিরলস চেষ্টা৷ তাছাড়া প্রচুর স্পনসর আসায় ওদের বিদেশে খেলতে যাওয়া এখন জলভাত৷ এখন বাবা-মা’রাও ছেলেমেয়েদের দাবায় ঠেলে দিচ্ছে৷ তা-ই রেটিং বা এলো পয়েন্ট ওরা বাড়িয়ে নিচ্ছে৷ সবাই জেনে গিয়েছেন ডাক্তার বা অধ্যাপকের থেকে কোন অংশে কম নয় ঝানু পেশাদার দাবাড়ু৷ প্রজ্ঞারা সত্যিই বিদ্যুতের মতো৷ দাবায় এখন তাই সকল বেড়া ভাঙার সময় এসে গেছে৷