ছোটদের বই পড়ার অভ্যাস দিন দিন কমছে৷ মোবাইল ফোনে আসক্তি যত বাড়ছে বই পড়া তত কমছে৷ গল্প শোনাও কমে গেছে৷ যৌথ পরিবার ভেঙে ছোট হতে হতে এখন স্বামী, স্ত্রী ও সন্তানে এসে ঠেকেছে৷ তাই বর্তমান সময়ে অনেক শিশুই দাদু দিদার কাছে গল্প বা ছড়া শুনে ঘুমোতে যায় না৷ আবার কর্মরত বাবা মায়েদের সন্তানেরা অনেকেই আয়াদের কাছে দিনের বেশিরভাগ সময়টাই থাকে৷ রূপকথার বা পৌরাণিক কাহিনী শুনে অথবা নানাধরণের ছড়া শুনে আজকের শিশুরা বড়ো হয়ে উঠছে না৷ তারা মজে আছে নানা ধরনের ভিডিও গেম বা কার্টুন ফিল্মে৷ আগেরকার দিনে বাড়ির গুরুজনেরাই ছোটদের গল্প শোনানোর মধ্যে দিয়ে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে দিতেন৷ পরবর্তী সময়ে ঐ শিশু কিশোরদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার আগ্রহ তৈরি হত৷ বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার মধ্য দিয়ে যেমন অনেক বিষয়ে তাদের জ্ঞান বাড়ে, নতুন নতুন শব্দের সঙ্গে পরিচয় ঘটে তেমনি কল্পনাশক্তিও বৃদ্ধি পায়৷ গল্প, উপন্যাস, কবিতা, ছবি আঁকা বা বিজ্ঞানের কোনো আবিষ্কার--- সৃষ্টিশীল কোনো কাজই কল্পনাশক্তি ছাড়া সম্ভব নয়৷ ইদানীং বই পড়ার আগ্রহ বাড়িয়ে তোলার জন্য বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তর প্রাথমিক স্তরের ছাত্র ছাত্রাদের জন্য বিদ্যালয়ে পঠন উৎসব আয়োজন করার নির্দেশ দিয়েছে৷ এতে কিছুটা উপকার তো নিশ্চয়ই হবে৷
রেণেশাঁ আর্টিস্টস এণ্ড রাইটার্স এ্যাসোশিয়েসনের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শাখার উদ্যোগে জেলা জুড়ে গল্প বলা প্রতিেেযাগিতার শুভারম্ভ হয় চার বছর আগে৷ ছোটদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার পাশাপাশি কল্পনাশক্তিও যাতে বাড়ে সেই লক্ষ্যেই এই প্রতিযোগিতার আয়োজন৷ জেলার বাছাই করা বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের নিয়ে চলছে চতুর্থ বর্ষ প্রারম্ভিক পর্যায়ের গল্প প্রতিযোগিতা৷ বিভিন্ন বিদ্যালয়ের সফল তিনজন করে প্রতিযোগী নিয়ে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে মেদিনীপুর শহরে ডিসেম্বর মাসে৷ গল্প বলা প্রতিযোগিতা এই জেলায় ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়েছে উঠছে৷ শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার এর ‘‘ক্যানিস গ্যাস’’ গল্পটি এবারে প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে৷ বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেভাবে গল্পটি পরিবেশন করছে তা বিচারক সহ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকাদেরও অবাক করে দিয়েছে৷ অভিনব এই প্রতিযোগিতাটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে যথেষ্ট উৎসাহ ও আনন্দ এনে দিয়েছে৷ এখনও পর্যন্ত প্রায় ২৫টি বিদ্যালয়ে প্রারম্ভিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতা হয়ে গেছে৷ নভেম্বর মাস পর্যন্ত চলবে প্রারম্ভিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতা৷ বিদ্যালয়গুলির শিক্ষক শিক্ষিকাগণ যেভাবে সাহায্য ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন তাতে কর্তপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন৷