রাষ্ট্রীয় সম্পদ বেসরকারী হাতে তুলে দেবার কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করে প্রবীণ প্রাউটিষ্ট নেতা শ্রী প্রভাত খাঁ বলেন–প্রাউটের মতে গোটা দেশের সর্বাত্মক সামাজিক–অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যে, সঙ্গে সঙ্গে সর্বস্তরে শোষণের অবসান ঘটানোর জন্যে, চাহ্ত্র বিজ্ঞানভিত্তিক সুষ্ঠু অর্থনৈতিক পরিকল্পনা৷ ন্তুএ জন্যে প্রথমে গোটা দেশকে প্রয়োজনে একাধিক সামাজিক–অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিভক্ত করে প্রতিটি অঞ্চলকে স্বয়ং–সম্পূর্ণ করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিতে হবে৷ প্রতিটি সামাজিক–অর্থনৈতিক অঞ্চলে ওই এলাকার বিশেষ অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে পৃথক পৃথক পরিকল্পনা রচনা করা বাঞ্ছনীয়৷ এই যে দেশকে প্রয়োজনমত একাধিক সামাজিক–অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিভক্ত করার কথা বলা হ’ল, তা করতে হবে, নিম্নলিখিত বিষয়গুলি বিবেচনা করে–
১. একই ধরণের অর্থনৈতিক সম্পদ ও সমস্যা৷ তার সঙ্গে সঙ্গে অবশ্যই স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চল হওয়ার সম্ভাবনা
২. সম ভাষা, ঐতিহ্য, সাহিত্য, সামাজিক প্রথা প্রভৃতির ওপর গড়ে ওঠা একই সেন্টিমেন্ট্যাল লিগ্যাসি
৩. একই জাতিগত বৈশিষ্ট্য
৪. একই ধরণের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য প্রভৃতি৷
শ্রী খাঁ বলেন– এই নীতি অনুসারে ভারতবর্ষের সমগ্র এলাকার তথা সকল জনগোষ্ঠীর সার্বিক উন্নয়নের দিকে তাকিয়ে একে ৪৪টি সামাজিক–অর্থনৈতিক অঞ্চলে (প্রাউট দর্শনে একে সংক্ষেপে ‘সমাজ’ও বলা হয়) বিভক্ত করে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা করা উচিত৷ যেমন সমগ্র বাংলা তথা বাংলা ভাষাভাষী এলাকা নিয়ে গড়ে তোলা উচিত একটি সামাজিক–অর্থনৈতিক অঞ্চল৷ প্রাউটের পরিকল্পনা নীতি অনুসারে ভারতের ৪৪টি সামাজিক–অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে হবে৷
শ্রী খাঁর কথায় –প্রাউট যে ভারতে ৪৪টি সমাজ রচনার কথা বলছে, তার মানে এই নয় যে ৪৪টি পৃথক রাজ্য গড়তে হবে৷ এখানে পৃথক পৃথক রাজ্য তৈরীর কথা বলা হচ্ছে না, মূলতঃ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কথা বলা হচ্ছে৷ একই রাজ্যের মধ্যে একাধিক অর্থনৈতিক অঞ্চল থাকতে কোন বাধা নেই৷ তবে সেক্ষেত্রে প্রতিটি অর্থনৈতিক অঞ্চলকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করবার পূর্ণ সুযোগ দিতে হবে৷ তাদের ন্যায্য দাবি তথা অধিকার থেকে বঞ্চিত করা চলবে না৷ ওই অঞ্চলের জন্যে পৃথক বাজেটও মেনে নিতে হবে৷
প্রাউটের নীতি অনুসারে–
(১) প্রতিটি সমাজ তার নিজস্ব এলাকাকে স্বয়ম্ভর (ব্দন্দ্বপ্তন্দ্র–ব্দব্ভ্) করে গড়ে তোলার জন্যে পৃথকভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ করবে৷ অন্ততঃ ওই অঞ্চলের সকল মানুষের নূ্যনতম প্রয়োজন ভিত্তিক পণ্যসমূহ ওই এলাকার মধ্যে উৎপাদন করার পূর্ণ প্রয়াস করবে৷ এ ব্যাপারে যাতে তাকে অন্য এলাকা থেকে আমদানির ওপর নির্ভর করতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবে৷ ওই অঞ্চলের উৎপাদিত উদ্বৃত্ত পণ্যের বিনিময়ে অন্য অঞ্চল থেকে পণ্য আমদানি করা চলবে৷ রপ্তানীর চেয়ে আমদানি বেশী হলে ওই এলাকার উন্নয়ন ব্যাহত হবে৷
(২) প্রতিটি সমাজ তার এলাকার ১০০ শতাংশ ‘স্থানীয়’ মানুষের কর্মসংস্থানের উপযুক্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করবে৷ এই দিকে লক্ষ্য রেখে প্রতিটি ব্লকে ব্লকভিত্তিক পরিকল্পনা রচনা করবে৷ ওই পরিকল্পনায় স্থানীয় কৃষিভিত্তিক ও কৃষি সহায়ক শিল্প ব্যাপকভাবে গড়ে তোলার ব্যবস্থা নিতে হবে৷ স্থানীয় কাঁচামাল ও অর্থের বহিঃস্রোত বন্ধ না করলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ব্যাপক শিল্পবিকাশ তথা অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়৷
প্রাউটের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার প্রথম স্তরে মূল লক্ষ্যই হবে, সমস্ত স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা তথা নূ্যনতম চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করা৷ এব্যাপারে প্রতিটি সমাজকে ‘স্বয়ম্ভর’ করে গড়ে তুলতে হবে৷ ক্রমান্বয়ে সমস্ত সমাজের মাথা পিছু আয়ের হার তথা জীবনধারণের মানও বৃদ্ধি পেতে থাকবে৷
এইভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে সাধারণ মানুষকে স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে হবে৷ তবেই পুঁজিবাদী শোষণের অবসান ঘটবে৷