বছর ১০-১২ আগে কেরলে মোবাইল চুরি করতে গিয়ে বিহারের একটি ছেলে ধরা পড়েছিল৷ কেরলের প্রথম শ্রেণীর দৈনিকে প্রথম পাতায় ছবিসহ ছাপা হয়েছিল বিহারী চোরো৷
আজ বাঙলায় বেআইনি অস্ত্র সরবরাহ থেকে ট্যাব কেলেঙ্কারি সবেতেই যোগ বিহারের৷ ভিন্ন প্রদেশে কোন অপরাধের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের কেউ থাকলে বড় বড় করে প্রচার হয়--- বাঙলার যোগ৷ কিন্তু বাঙলার নেতা মন্ত্রী থেকে মিডিয়া পশ্চিমবাঙলায় ভিন রাজ্যের অপরাধীদের নিয়ে কোন কথা বলে না, বরং আর জি কর কাণ্ডে ধৃত সঞ্জয় রাই কে, রায় বলে পরিচয় দেয়া হচ্ছে৷
আমরা কোন রাজ্য বা রাজ্যের জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নই৷ কিন্তু ভোটের রাজনীতি করতে ভিন রাজ্যের অধিবাসীদের তোষন করার পক্ষপাতি নই৷ যখন করোনার সময় অন্য রাজ্য থেকে পরিযায়ীদের অমানবিক ব্যবহার করে তাড়ানো হচ্ছে, সেই সময় পশ্চিমবঙ্গ সরকার মানবিক মুখ হয়ে এখানকার পরিযায়ীদের জামাই আদরে রেখেছিলেন৷ এখনো লক্ষ্মীর ভান্ডার থেকে স্বাস্থ্যসাথী ভিন্ন রাজ্যের বহু বাসিন্দা সুযোগ সুবিধা নিচ্ছে৷ এটা রাজ্য সরকারের উদাসীনতা নাকি তোষণ নীতি জানিনা৷ ভিন্ন রাজ্যের বাসিন্দাদের তোষণের মাধ্যমে বাঙলার সর্বনাশের শুরু হয়েছিল স্বাধীনতার বহু আগে থেকেই৷ সেই ধারা আজও বজায় আছে৷ আগেই বলেছি আমরা কোন রাজ্য বা রাজ্যের অধিবাসীদের বিরুদ্ধে নয়, কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, পাঞ্জাব ও দক্ষিণ ভারত ছাড়া বিশেষ করে হিন্দিভাষীরা, এখানে থেকে জীবিকা নির্বাহ করছে কিন্তু এখানকার ভাষা কৃষ্টি সংস্কৃতির প্রতি কোন শ্রদ্ধা নেই বরং ধবংস করার চেষ্টা আছে৷
স্বাধীনতার বহু আগে মহান বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় আক্ষেপ করে লিখেছিলেন ---‘বিহার বিহারীর, পঞ্জাব পঞ্জাবির, অসম অসমীয়ার.... কিন্তু বাংলার দ্বার সবার জন্য খোলা!’
১৯২২ সালের ১৭ সেপ্ঢেম্বর এক যুব সম্মেলনে আর এক বাঙলার কৃতি বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা বলে ছিলেন---‘একদিকে বিদেশীরা বাংলাদেশকে অধিকার করেছে, অন্যদিকে ব্যবসা-বাণিজ্য করায়ত্ব করে অবাঙালি ব্যবসায়ীরা বাঙলার বৈষয়িক সম্পদ গ্রাস করছে, বড় বড় বাঙালী ব্যবসায়ী পরিবার চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কৃপায় জমিদার হয়ে জড় বিলাসিতে রূপান্তরিত হয়েছে, আর মধ্যবিত্ত বাঙালী হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্রীতদাস দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের৷
আর স্বাধীনতার পর? না কোন তথ্য নয়৷ এক কবির কথা শুনুন---
‘পদ্মা পাড়ে মার খেলি তুই গঙ্গা পাড়েও খেলি,
ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে এসে রক্তে ভেসে গেলি৷
বৈতরণীর পাড়ে তোদের হবে কিরে হাল,
তাইতো বসে মহাশূন্যে ভাবছে মহাকাল৷’
মহাকালের ভাবনা মহাকাল ভাবুন, আমরা দেখি বিশ্বকবি কি ভেবেছিলেন---জাতীয় কংগ্রেসের হিন্দি সাম্রাজ্যবাদী লবির মোহনদাস গান্ধী গোষ্ঠীর ঘৃণ্য চক্রান্তে সুভাষচন্দ্র যখন কংগ্রেস সভাপতি পদ ত্যাগ করলেন---বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক ঐতিহাসিক পত্রে সুভাষচন্দ্রকে লিখলেন ---সুভাষচন্দ্র৷
বাঙালী কবি আমি৷ বাংলাদেশের হয়ে তোমাকে দেশনায়কের পদে বরণ করি৷ ‘শব্দগুলো ভাবুন৷ ওই পত্রেই তিনি লিখেছেন---‘আত্মীয় পরের হাতে বাঙালী কে অশেষ লাঞ্ছনা ভোগ করতে হবে৷ ... হিংস্র দুঃসময়ের পিঠের উপর চড়ে বাঙালীকে বিভীষিকার পথ উত্তীর্ণ হতে হবে৷’ এই পত্রে তিনি আশার বাণীও শুনিয়েছেন----’ বাঙালী অদৃষ্ট কর্তৃক অপমানিত হয়ে মরবে না, সাংঘাতিক মার খেয়েও বাঙালী মারের ওপর মাথা তুলবে৷’ জানিনা, বাঙালী আর কত মার খেলে সেটা সাংঘাতিক হবে!