সমুদ্রের নীচে ১০০ দিন কাটালেই নাকি বয়স ১০ বছর কমে যায়! শুধু তা-ই নয়, শরীরের কোলেস্টরলের মাত্রাও কমে, লম্বা হয় ক্রোমোজোম! এই দাবিই এখন বিজ্ঞানীদের মধ্যে হইচই ফেলে দিয়েছে৷ অনেকের মনেই প্রশ্ণ, এ-ও কি সম্ভব? মহাকাশ হোক বা সমুদ্র, সেখানে কী আছে, তা নিয়ে বিজ্ঞানী মহলে উৎসাহের ঘাটতি নেই৷ শুধু বিজ্ঞানীদের মধ্যে নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও এ নিয়ে কৌতূহল রয়েছে৷ তাই প্রায়ই দেখা যায় ‘উদ্ভট’ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে৷ আপতদৃষ্টিতে সেই সব গবেষণা বা পরীক্ষা ‘উদ্ভট’ মনে হলেও, তার ফলাফল অনেক সময়ই বিজ্ঞানে নতুন দিক খুলে দেয়৷ তেমনই এক গবেষণা হল ‘প্রজেক্ট নেপচুন ১০০’৷ জোসেফ ডিতুরি নামে আমেরিকার বাসিন্দা ছিলেন এই গবেষণার অংশ৷ আটলান্টিক মহাসাগরে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০ ফুট নীচে একটি বিশেষ যানে ১০০ দিন কাটিয়ে এসেছেন জোসেফ৷ আর তাতেই নাকি আশ্চর্যজনক ফল পেয়েছেন, যা তাঁর জীবনচক্রকে পাল্টে দিয়েছে৷ জোসেফ এখন ‘ডক্টর ডিপ সি’ নামে পরিচিত৷ প্রথম জীবনে আমেরিকার নৌবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি৷ অবসর নেওয়ার পর তিনি পিএইচডি করেন৷ তার পর নিজেকে নিয়েই নানা বিজ্ঞানমূলক গবেষণা শুরু করেন জোসেফ৷ ‘প্রজেক্ট নেপচুন ১০০’ শুরু হয়েছিল গত বছর ১ মার্চ৷ যে বিশেষ যানে ১০০ দিন সমুদ্রের নীচে কাটিয়েছেন, তা দেখলে মনে হবে, তা যেন একটা হোটেলের ছোটখাটো ঘর৷ সেখানে ফ্রিজ থেকে শুরু করে আরামদায়ক বিছানা কী নেই৷ পর্যাপ্ত খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থাও ছিল সেখানে৷ দিনে কয়েক বার তিনি ওই ডুবোযান থেকে বেরিয়ে সমুদ্রে ঘুরে আসতেন৷ সমুদ্রের নীচে থাকা জোসেফের প্রথম ৯৩ দিন নিয়ে গবেষণা শুরু করেছেন গবেষকেরা৷ জল থেকে উঠে আসার পর তাঁর শরীরে কী কী পরিবর্তন হয়েছে, সেটাই গবেষণার মূল বিষয়৷ জোসেফের বিভিন্ন মেডিক্যাল রিপোর্ট আশ্চর্য করেছে বিজ্ঞানীদের৷
এখন প্রশ্ণ হল, জোসেফের শরীরে কী কী পরিবর্তন হয়েছে? ডক্টর ডিপ সি-র মেডিক্যাল রিপোর্ট থেকে স্পষ্ট, ক্রোমোজোমের টেলোমার্সের বয়স বৃদ্ধি পেয়েছে৷ ক্রোমোজোমের একেবারে নীচের প্রান্তের অংশকে টেলোমার্স বলে৷ সাধারণত বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে টেলোমার্সের দৈর্ঘ্য কমতে থাকে৷ কিন্তু জোসেফের ক্ষেত্রে উল্টো ঘটনা ঘটেছে৷ সমুদ্রের নীচে দিন কাটানোর আগে জোসেফের শরীরের ক্রোমোজোমের টেলোমার্সের দৈর্ঘ্য যা ছিল, তার তুলনায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ যা থেকে দাবি করা হচ্ছে, জোসেফের বয়স উল্টো খাতে বইতে শুরু করেছে৷ অন্তত ১০ বছর তাঁর বয়স কমেছে বলে দাবি করা হচ্ছে৷ শুধু বয়স কমা নয়, শরীরে আরও পরিবর্তন ঘটেছে জোসেফের৷ তাঁর স্টেম সেলের সংখ্যাও আগের তুলনায় বেড়েছে৷ স্টেম সেল কী? সহজ ভাষায় বললে সন্তান জন্মানোর পর মায়ের শরীর থেকে যে প্ল্যাসেন্টা বা অমরা বেরিয়ে আসে, তার মধ্যে থাকে স্টেম সেল৷
বিজ্ঞানীদের একাংশের মতে, বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার পথও নির্দেশ করল জোসেফের অভিজ্ঞতা৷ জোসেফ মনে করেন, জলের তলায় এমন অবস্থায় কয়েক দিন থাকা প্রয়োজন৷ সকলের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকার উপকারও ব্যাখ্যা করেছেন জোসেফ৷ তিনি সকলকে উচ্চচাপ পরিস্থিতিতে অন্তত দু’সপ্তাহ কাটিয়ে আসার পরামর্শও দিচ্ছেন৷