শাসককে সাবধান বাণী

লেখক
আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

গত দুটি লোকসভা নির্বাচনের পর কেন্দ্র আবার মিলিজুলি সরকার৷ যদিও গত দুটি লোকসভায় এন.ডি.এ জোট সরকার ছিল, কিন্তু সেখানে প্রধান শরিক বিজেপির একক গরিষ্ঠতা ছিল৷ কিন্তু গত দশবছরে প্রধান শরিকের দাম্ভিক আচরণ, ঔদ্ধত্য মানুষ পছন্দ করেনি৷ তারই প্রতিফলন ঘটেছে এবার নির্বাচনী ফলে৷ যদিও সরকার পরিবর্তন হয়নি, কিন্তু এককভাবে নয়, বিজেপিকে শরিক দলের উপর নির্ভর করে সরকার গড়তে হয়েছে৷

গত লোকসভা অপেক্ষা বিজেপির ৬০টিরও বেশী আসন কমে গেছে৷ স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও গতবারের তুলনায় বারাণসী কেন্দ্রে তিনলাখের বেশী ভোট কম পেয়েছে৷ ২০১৪-এর লোকসভা নির্বাচনে সারা দেশে মোদি ঝড় বহিলেও পশ্চিমবঙ্গ ও তামিলনাড়ু ছিল ব্যতিক্রম৷ এতে সেদিন তথাকথিত সুশীল সমাজের কেউ কেউ ব্যথিত হয়েছিল৷ সেদিন মোদির প্রচারে রবীন্দ্রনাথ সুভাষচন্দ্রের প্রতি শ্রদ্ধার ভাব দেখে কেউ কেউ আবেগে আপ্লুত হয়েছিল৷ কিন্তু বিজেপির রাজনৈতিক মতাদর্শেই রবীন্দ্রনাথ সুভাষচন্দ্র অচ্যুত৷ তাই বাঙলার মনীষীদের প্রতি মোদির কপট শ্রদ্ধা বাঙালী ঠিকই বুঝেছিল৷

২০২৪শে বিজেপি ৪০০ পার এর লক্ষ্য স্থির করেছিল৷ কিন্তু গত দশ বছরে প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাম্ভিক আচরণ, চরম বেকার সমস্যা, দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি, ও জাত ও পাত সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে মানুষ আর পছন্দ করছেন না৷ যে রাম ভরসায় মোদি সাহ জুটি ৪০০ পারের স্বপ্ণ দেখেছিল সেই রামরাজ্যেই বিজেপি ধরাশায়ী৷ অযোধ্যাতেই বিজেপির পরাজয় ঘটেছে৷ নির্বাচনের এই ফল শাসককে একটাই বার্র্ত দিয়ে গেল---‘‘একের স্পর্ধার কভু নাহি দেয় স্থান দীর্ঘকাল নিখিলের বিরাট বিধান’’--- শুধু গত দশ বছরের ব্যর্থতাই নয়, বিরোধী দল শাসিত রাজ্যগুলির প্রতি চরম বৈষম্যমূলক ও প্রতিহিংসা পরায়ণ আচরণও মানুষ মেনে নেয়নি৷ বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের প্রতি গত দশবছরে কেন্দ্রের শাসকদলের আচরণ, বঞ্চনা, অবহেলা পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে বিজেপি থেকে বিমুখ করেছে৷ তাই বিজেপির প্রচারে সাড়া দেয়নি রাজ্যের মানুষ৷ তাই ২০১৬-এর থেকে আসন সংখ্যা অনেক নীচে নেমেছে পশ্চিমবঙ্গে৷ তাই দিল্লীর শাসককে এবার শুধু শরিকদের কাছে মাথা নত করলেই হবে না৷ তার আচরণে ও প্রশাসনিক কাজে বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির সঙ্গে ব্যবহারে মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে৷

তবে এ রাজ্যে যে বামফ্রন্ট মুছে যাচ্ছে সেটি তার পাপেরই কুফল৷ মহাকাল এমন করেই শিক্ষা দিয়ে থাকে৷ ভারতের মাটিতে কমিউনিজমের বিষবৃক্ষ কখনো বেড়ে উঠবে না, কারণ এটা হলো অধ্যাত্মবাদের লীলাভূমি৷ ছলবল এখানে কারোরই টিঁকবে না সে যতো বড়োই রাজনৈতিক অভিনেতা বা অভিনেত্রী হোন৷ কাল অপেক্ষা করে উচিত শিক্ষা দিতে৷ আজ যারা আসছে কয়েক বছর পর তারাও থাকবে না৷ আবার নোতুন আসবে, তাকে অবশ্যই বরণ করে নিতে হবে৷ পশ্চিমবঙ্গের মত রাজ্যকে তার প্রাপ্য মিটিয়ে দিতে হবে, নতুবা ২০২৬ শে আরও খারাপ পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে৷ বাঙালী সহ্য করে কিন্তু ছাড়ে না! রাজ্যে কেন্দ্রে যে যেখানেই শাসন করুক তার সামনে দৃষ্টান্ত বামফ্রন্ট৷ ৩৪ বছরের শাসকের দাপট ধূ-লুন্ঠিত হতে দশটা বছরই যথেষ্ট৷