মহাকুম্ভে পর পর দুর্ঘটনায় নারী শিশুসহ অনেকগুলি প্রাণ অকালে ঝরে গেল৷ সরকার দায় এড়াতে চাইছে, বিরোধীরা সরকারের ঘাড়ে দায় চাপাতে চাইছে৷ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এই রাজনীতি স্বাভাবিক সে মৃত্যু নিয়ে হোক আর মসনদ নিয়ে হোক৷
প্রবীন প্রাউটিষ্ট নেতা শ্রীপ্রভাত খাঁ বলেন যে কোন মৃত্যুই দুঃখজনক৷ কিন্তু মহাকুম্ভে যেভাবে এতগুলো মানুষ অকালে চলে গেল, সেই মর্মান্তিক মৃত্যুর দায় সরকার অস্বীকার করতে পারে না৷ তিনি বলেন শুধু মহাকুম্ভের অব্যবস্থাই এর জন্য দায়ী নয়, মানুষের শিক্ষা সমাজচেতনা ও ধর্মবোধের অভাবের সুযোগ নিয়ে চতুর দেশনেতারা মানুষকে অন্ধ আবেগে ভাষিয়ে মহাকুম্ভে ছুটিয়ে নিয়ে গেছে৷ মানুষও শিক্ষা ও সমাজ চেতনার অভাবে অমৃত লাভের অন্ধ বিশ্বাস নিয়ে ছুটে গেছে৷ পরিণতির কথা ভাবেনি৷ শ্রী খাঁ বলেন--- কিন্তু রাষ্ট্রের তো ভাবা উচিত ছিল৷ প্রয়াগে কত মানুষের পরিসর আছে আর কত মানুষ সমবেত হয়েছে, সেই তথ্য তো সরকারের কাছে থাকা উচিত৷
কিন্তু সরকার ওসব ভাবে না৷ শুধু রাজনৈতিক স্বার্থের চিন্তা করে অজ্ঞ অচেতন মানুষকে অসার উন্মাদনায় ভাসিয়ে দিয়েছে ধর্মের মোড়কে৷ শ্রী খাঁর প্রশ্ণ প্রয়াগ সঙ্গমে ডুব দিয়ে কোন অমৃত লাভ হবে? প্রয়াগ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কর্মভূমি৷ শ্রীকৃষ্ণের শিক্ষা ‘‘আত্মমোক্ষার্থং জগদ্বিতায় চ’’৷ জগতের হিত সাধনই মোক্ষ মুক্তির সোপান৷ আর শ্রী কৃষ্ণের কর্মভূমিতেই মানুষ ছুটে চলেছে মৃত্যুমুখে অন্ধবিশ্বাস আর কুসংস্কারে আচ্ছন্ন আবেগে৷
সমাজ সচেতনতা ও শিক্ষার অভাবই মানুষকে এই পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে রাষ্ট্রের প্ররোচনায়৷ শ্রী খাঁর কথায় মনে রাখতে হবে শিক্ষার সঙ্গে সমাজের সম্পর্ক গভীর৷ মানবিক মূল্য ধর্মবোধ এসবের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত শিক্ষা, উপযুক্ত শিক্ষাই মানুষকে অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার, ভাবজড়তা ও সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত করে প্রকৃত মানুষ করে গড়ে তুলবে৷ কিন্তু স্বাধীনতার ৭৭ বছর পরেও সেই উপযুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা আজও গড়ে উঠল না৷
শ্রী খাঁ আরও অভিযোগ করেন সংকীর্ণ স্বার্থান্বেষী রাজনীতিক ও পুঁজিবাদী শোষক কখনও চায় না মানুষ উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠুক৷ তাই দেশ জুড়ে শিক্ষাক্ষেত্রে নিদারুণ অব্যবস্থা৷
পরিশেষে শ্রীখাঁ বলেন আনন্দমার্গ দর্শনের প্রণেতা শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী সমাজ সংস্কার করতে গিয়ে আদর্শ সমাজ গড়ার পরিকল্পনা করতে গিয়ে প্রথমেই অনুভব করলেন প্রকৃত শিক্ষার অভাবই মানুষকে বিপথে নিয়ে যাচ্ছে, অন্ধ আবেগে ছুটিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে৷ তাই তিনি শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে দিলেন নতুন শিক্ষানীতি--- ‘নব্যমানবতা-ভিত্তিক শিক্ষা’ মানুষকে প্রকৃত মানব ধর্মের শিক্ষা দিয়ে উপযুক্ত মানুষ করে তুলতে আনন্দমার্গ শুধু পশ্চিমবঙ্গ বা ভারতবর্ষ নয়, বিশ্বের দেশে দেশে নব্যমানবতা-ভিত্তিক শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে হাজার হাজার স্কুল পরিচালনা করছে৷ এই নব্যমানবতা ভিত্তিক শিক্ষাই মানুষকে বিপথ থেকে ফিরিয়ে আনবে৷