১৯৮২ সালের ৩০শে এপ্রিল সভ্যতা ও সংস্কৃতির পীঠস্থান কলকাতার জনবহুল বিজন সেতু ও বণ্ডেল গেট৷ এখানেই সাত-সকালে ১৭ জন সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনীকে নৃশংসভাবে খুন করেছিল সেদিনের পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল সিপিএমের ঘাতক বাহিনী, পিটিয়ে, খুঁচিয়ে, পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে, অ্যাসিড দিয়ে জ্বালিয়ে৷ আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘের জনসংযোগ সচিব আচার্য দিব্যচেতনানন্দ অবধূত বলেন--- সাম্প্রদায়িক মৌলবাদের মতই নৃশংস ও নিষ্ঠুর ছিল রাজনৈতিক মৌলবাদী কমিউনিষ্টরা৷ তিনি বলেন---শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয় বিশ্বের যে দেশেই কমিউনিষ্টরা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছে সেখানেই তারা সন্ত্রাস সৃষ্টি করে নৃশংস অত্যাচার চালিয়ে মানুষকে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে৷ তবে অত্যাচার কখনোই শেষ কথা নয়, অত্যাচারীর শেষই শেষ কথা৷ তাই পৃথিবী থেকে কমিউনিষ্টরা আজ শেষ হয়ে গেছে৷
এক প্রশ্ণের উত্তরে আচার্য দিব্যচেতনানন্দ অবধূত বলেন---অলীক সমাজতন্ত্রের স্বপ্ণে মশগুল কমিউনিষ্টরা ভাবত মার্কসবাদই সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ৷ মার্কসবাদীরা কোনও বিরুদ্ধ মতবাদকেই সহ্য করত না৷ আধ্যাত্মিকতা ও নব্যমানবতাবাদ ভিত্তিক আনন্দমার্গের সামাজিক- অর্থনৈতিক তত্ত্ব ‘প্রাউট’ (প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব) একদিকে পুঁজিবাদের সীমাহীন শোষণ বন্ধ করে মানুষকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়ার সুস্পষ্ট পথনির্দেশনা দিয়েছে, আবার মার্কসবাদের অসারতা প্রমাণ করে প্রকৃত সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সুনির্দিষ্ট পথ দেখিয়েছে ‘প্রাউট’---যা কমিউনিষ্টদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব হয়নি৷ কিন্তু কমিউনিষ্টদের কাছে এমন কোনও যুক্তি ও তথ্য ছিল না যার দ্বারা ‘প্রাউট’কে খণ্ডন করে অলীক, অবাস্তব মার্কসবাদ সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারে৷ তাই রাষ্ট্র ক্ষমতার জোরে তারা আনন্দমার্গকেই শেষ করতে চেয়েছিল৷ পরিতাপের বিষয় এই হত্যাকাণ্ডের পরও ৩০ বছর কমিউনিষ্টরা পশ্চিমবঙ্গের শাসন ক্ষমতায় ছিল৷ তাই বিচারের বাণী নীরবে, নিভৃতে কেঁদেছে৷ আজও আমরা বিচার পাইনি৷ তবে প্রকৃতির বিধানে বিচার হয়েছে৷ সিপিএম ঘাতক বাহিনী শুধু ক্ষমতাই হারায়নি,বিধানসভাতেও শূন্যে পরিণত হয়েছে৷ আর আনন্দমার্গ আজ বিশ্বের দেশে দেশে স্বগর্বে উড়িয়ে দিয়েছে তার বিজয় নিশান৷ বর্তমান সরকার একটা কমিশন বসিয়েছিল৷ কিন্তু তার রায় আজও অজ্ঞাত কারণে প্রকাশ করা হয়নি৷ আমরা চাই সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা সত্য প্রকাশের জন্যে লালা তদন্ত কমিশনের রায় জন সমক্ষে প্রকাশ করা হোক৷
এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ও মানব সেবায় উৎসর্গীকৃত অমর দধিচীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ৩০শে এপ্রিল একটি মিছিল দেশপ্রিয় পার্ক থেকে বিজন সেতু যাবে ও সেখানে একটি জনসভার আয়োজন করা হয়েছে৷ আচার্য দিব্যচেতনানন্দ অবধূত প্রতিটি বিবেকবান ও বিচারশীল মানুষকে বিজন সেতুর সভায় সামিল হওয়ার আবেদন করেন৷