সর্বনেশে মোবাইল!

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

মোবাইল! হাতের মুঠোয় কয়েক ইঞ্চির একটি যন্ত্র, কেউ কেউ বাংলা নামে ডাকে মুঠো ফোন৷ এই মুঠোর মধ্যে আজ বিশ্বব্রহ্মাণ্ড৷ চুষি কাঠি মুখে দিয়ে ছেলে ভোলানোর দিন আগেই চলে গেছে৷ রঙ বেরঙের খেলনা, দোলনা সে দিনও শেষের পথে৷ কর্মরতা মা দুধের শিশুকে ভুলিয়ে রাখতে হাতে তুলে দিচ্ছে এই মুঠো ফোন৷ তার মারাত্মক পরিণতির শিকার আজ শিশু, বালক, কিশোর, যুবক সবাই৷ এই মুঠো ফোনের দৌলতে ছল চাতুরীর কালো ফাঁদে পড়ছে অনেকেই৷ আণবিক বোমা যত শক্তিই বিস্তার করুক তার পরিধি সীমাবদ্ধ৷ কিন্তু মুঠো ফোন! সীমানা ছাড়িয়ে....৷

এখন প্রশ্ণ বিজ্ঞানের এই বিস্ময়কর আবিষ্কার কি অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে! প্রত্যেক জিনিসেরই ভালো মন্দ দুটো দিক থাকে৷ মুঠো ফোন তার ব্যতিক্রম নয়৷ ভালো ব্যবহারটাই শিখতে হয়৷ কিন্তু শেখাবে কে?

বিজ্ঞানের অগ্রগতি সভ্যতার মাপকাঠি নয়৷ যদি না তার সঙ্গে আধ্যাত্মিকতার মেলবন্ধন ঘটে৷ মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তাঁর ‘সভ্যতা বিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিক প্রগতি’ প্রবচনে বলেছেন --- ‘‘সভ্যতার সঙ্গে বিজ্ঞানের একটা ঘনিষ্ঠ যোগ রয়েছে, একই সঙ্গে এ দু’য়ের উন্নতি হয়৷ কিন্তু যেখানে বৈজ্ঞানিক উন্নতি সভ্যতার উন্নতিকে পিছনে ফেলে যায় সেখানে সভ্যতার ভরাডুবি ঘটে... যেখানে সভ্যতার উন্নতি দেখবে সেখানেই লক্ষ্য করবে বৌদ্ধিক উন্নতিও এর সঙ্গে রয়েছে আবার যেখানে বিজ্ঞানের চর্চা রয়েছে সেখানে বৌদ্ধিক বিচার বিশ্লেষণও প্রয়োজন, তাই সভ্যতা ও বিজ্ঞান উভয়ক্ষেত্রে বৌদ্ধিক জ্ঞান অপরিহার্য৷’’

এই বৌদ্ধিক জ্ঞানের অভাবই বিজ্ঞানকে অভিশাপে পরিণত করে৷ খ্যাতনামা বৈজ্ঞানিক মণি ভৌমিক তাঁর ‘ব্রহ্ম সত্য জগৎ সত্য’ উপনিষদ বিজ্ঞান রবীন্দ্রনাথ গ্রন্থে লিখেছেন ---‘‘প্রগতিশীল বৈজ্ঞানিক বিশ্ববোধকে আমরা ক্রমশ মেনে নিতে স্বাগত জানাতে বাধ্য হচ্ছি৷ সুতরাং বৈদিক ঋষিদের প্রাচীন প্রজ্ঞার সঙ্গে আজকের বিজ্ঞানের মেল বন্ধন যদি করতে পারি,তবে সে মিলিত আলো আমাদের দেবে নব বিশ্বচেতনা.....বেদ উপনিষদ কোয়ান্টাম ফিজিক্স যেন মিশে আছে এক সমবেত ও সমকালীন বিশ্ববোধের অপূর্ব রসায়নে...৷ এমন হিরন্ময় মিশ্রণের দহন দানে পূর্ণ হোক আমাদের জীবন এই জগতের কাজের মধ্যে আর নিরাসক্ত ভোগের মধ্যে আমরা যেন হতে পারি অমৃততীর্থযাত্রী৷’’ বিজ্ঞানের বিরোধিতা নয়, বিজ্ঞানের গবেষণা ও চর্চা চলতেই থাকবে কিন্তু পাশাপাশি প্রয়োজন আধ্যাত্মিক অনুশীলন৷ তবেই বিজ্ঞান মানুষের কল্যাণ করবে৷