মনে রাখতে হবে সামাজিক কল্যাণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন তখনই সম্ভব যখন সমাজে কিছু আদর্শবান মানুষ যাঁরা সমাজসেবী ও মানবতাবাদী মানুষ গড়ে যখন ওঠেন৷ পৃথিবীতে যে সীমিত সম্পদ আছে তাকে সুষ্ঠুভাবে সকলের মধ্যে বন্টন করে সকলের মুখে আনন্দের হাসি ফোটাতে পারে৷ তাই প্রতিটি সমাজে তেমন লোকের প্রয়োজন৷
এই কথাটিকে বাস্তবায়িত করতেই অত্যাধুনিক যুগে মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের আগমণ যিনি জগতে শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী হিসাবে বিখ্যাত৷ এই মানুষ গড়তে হলে জীবনে এক পূর্ণাঙ্গ আদর্শকে মনে প্রাণে গ্রহণ করে তারই অনুশীলনের প্রয়োজন৷ তাই আধ্যাত্মিক সাধনার দ্বারা সেই মানুষকে নিজেকে গড়ে তুলতে হয় তার পর এমন একটি পূর্ণাঙ্গ সামাজিক, অর্থনৈতিক দর্শনকে বাস্তবায়িত করতে মন প্রাণ দিকে তাকে গ্রহণ করে সমাজে বাস্তবায়িত করতে সারাটি জীবন কাজে লাগাতে হয়৷ সেটি হলো প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব৷ যাকে এক কথায় বলা হয় প্রাউট দর্শন৷ তাই শ্রী সরকার সারাটি জীবন ধরে তার বাস্তবায়নে চরম নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে গেছেন পৃথিবীতে তাঁর দ্বারা অনুপ্রাণিত আদর্শবান ভক্তকর্মীদের নিয়ে৷ এই কাজে তিনি বাধা প্রাপ্ত হয়েছেন স্বার্থান্বেষী শাসকদের দ্বারা যারা সংকীর্ণ স্বার্থে এই সমাজে শাসকের পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন৷
সমাজ সেবককে যারা তাদের সেবা পাবেন তাঁদের ভালোভাবে চিনে নিতে হবে, অন্তরের সঙ্গে বুঝে নিয়ে৷ তারা হলো সারা পৃথিবীর সেই গাছপালা জীবজন্তু ও মানুষের শোষিত সমাজ৷ কারণ এরা সবাই একসূত্রে বাঁধা৷ এরাই পরস্পর পরস্পরকে সেবা যেটা সেই ঈশ্বর এর মহান সৃষ্টি৷ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম মানুষ হলো তাঁর অতিপ্রিয় যাঁদের এই পৃথিবীতে এনেছেন তার সুন্দর বসুন্ধরাকে যাঁরা ভোগ করবেন ও রক্ষা করবেন মনে প্রাণে৷ যেটা কিন্তু লোভী স্বার্থান্বেষী শাসকগণ চায়না কারণ তাদের লক্ষ্যই হলো নিজেদের স্বার্থে তাদের ইচ্ছাকৃতভাবে ভোগ ও ধবংস করা৷ এখানেই আসে সেই শোষণ ও ধবংসের বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম৷ তাই মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তাঁর ভক্ত কর্মীদের হাতে তুলে দিয়েছেন সেই ৫টি নীতির উপর আধারিত প্রাউট দর্শন৷ এটিকে বলা হয় সুদর্শন চক্র৷ সমাজে আর্থিক ও সামাজিক শোষণ তখনই বন্ধ হবে যখন সেই পূর্ণাঙ্গ দর্শন সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়নে৷ এটি শুধু তত্ত্ব কথা বলে ছেড়ে দিলে চলবে না৷ শুধু তত্ত্ব কথা আউড়ে প্রচারে তিলমাত্র উপকৃত শোষিত নিপীড়িত সমাজ হবে না, সেবা পাবে না ও বাঁচবে না৷ একে সমবায় আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ব্লকে ব্লকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে৷ ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক কেন্দ্রীকতাকেই প্রশ্রয় দেওয়া হয়৷ যেটি শোষণের উপর সমৃদ্ধি৷ যেখানে উৎপাদন ও বন্টনে যুক্তিপূর্ণ সামঞ্জস্য নেই৷ লক্ষ্যটা অত্যধিক মুনাফা অর্জন৷ সেটা অহিতকর পদ্ধতি৷
প্রাউট দাঁড়িয়ে আছে ন্যায় ও সুষ্টুভাবে উৎপাদিত সামগ্রী সমাজের প্রতিটি মানুষের মধ্যে বন্টন-এর মধ্য দিয়ে৷ সকল কর্মক্ষম মানুষের হাতে ক্রয় ক্ষমতা তুলে দিতে ও সকলকে আর্থিক উপায়ের পথ দেখানো৷ তাই সমবায়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে৷ সবাই যাতে ক্রয়ক্ষমতা অর্জন করে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে বাঁচতে পারে৷ যদি পৃথিবীর প্রতিটি সমাজকে আর্থিক ও সামাজিক ভাবে স্বয়ংভর করে তোলা হয় তাহলে বেকার সমস্যা বলতে কিছুই থাকবে না৷ ধনতান্ত্রিক সমাজ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা দাঁড়িয়ে আছে যুগযুগ ধরে একশ্রেণীর শোষকের উপর যারা কুসংস্কার ও জাত পাত ভেদ কে হাতিয়ার করে শোষণ করে চলেছে৷ তাদের ভণ্ডামীটা হলো---ডিভাইড্ এ্যাণ্ড রুল৷ প্রাউটের লক্ষ্য তা নয়--- নব্যমানবতাবাদকে বিশ্বে সুপ্রতিষ্টা করা প্রাউটের লক্ষ্য৷
নিজেকে সার্থক মানুষ গড়ে তোলা হলেই তো সবাইকে সার্থক মানুষ হওয়ার পথ দেখতে পারবে৷ নিজেরা সৎনীতিবাদী সমাজসেবী হলেই তো মানুষকে নরনারায়াণ ভেবে সেবা দিতে পারবে৷ তবেই সার্থক প্রগতিশীল সমাজতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত হবে৷ দুঃখের কথা অদ্যাবধি পৃথিবীতে কোথাও সার্থক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি৷ যদি কোথাও হয় সেটা নামে ও মিথ্যা প্রচারে৷ তাই বলা হয় ‘ধনতন্ত্র ভাতে মারে আঁতে মারে কমিউনিষ্ট তাইতো মোরা প্রাউটিষ্ট৷’ তাছাড়া প্রাউট বিশ্বৈকতা বোধে উদ্বুদ্ধ তাই প্রাউটিষ্টরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে---‘জগৎ জুড়িয়া এক জাতি শুধু’ সে জাতির নাম মানবজাতি একই পৃথিবীর স্তন্যে লালিত একই রবিশশী মোদের সাথী সমগ্র মানব সমাজ রক্ষা করার দায় যাঁরা নিয়েছে৷ তাদের দায়িত্বটা মোটেই খুব বোঝা নয়৷ প্রবক্তা নীরবে নির্ভূতে বসে সারা পৃথিবীতে ১৮২ টি দেশে আদর্শের বীজবপন করে গেছেন তার কর্মীদের দিয়ে৷ আর রেখে গেছেন শত শত কর্মীও অনুগামীদের৷ তাঁদের একমাত্র লক্ষ্য হোক তাঁর রেখে যাওয়া সংঘটন যেন সার্থকভাবে তীব্রতর গতিতে কাজ করে পাপশক্তিকে শিক্ষা দিয়ে সমগ্র বিশ্ব সংসারকে রক্ষা করা৷
তবেই তাঁর প্রতিশ্রুতিকে সাফল্য মণ্ডিত করতে পারে৷ কর্মই জীবন সবাইকে মনে রাখতে হবে৷ আর এই কাজে সবচেয়ে বেশী দায়িত্ব নিতে হবে গৃহীদেরই কারণ তিনি নিজে গৃহী ছিলেন সার্থকভাবে সেই সদাশিব ও শ্রীকৃষ্ণের মতই৷ কেউ যেন পবিত্র দায়িত্ব এড়িয়ে না যান৷ সেটা হবে ভক্তের পক্ষে অত্যন্ত অপমানজনক৷
তাঁর দেওয়া সংগচ্ছধবং মহামন্ত্রটিকে যেন সার্থক করতে পারি একসাথে মিলে মিশে কাজ করে যাই৷ হেথায় কেউই বড়ো নয় আর কেউই ছোট নয়৷
তিনি রহস্যময়! তিনি এসেছিলেন কাউকে না জানিয়ে৷ আর তিনি চলে গেলেন কাউকে না বলে! তবে বিশ্বাস করি মনে প্রাণে একটি কথা তা হলো তিনি অলক্ষে থেকে সবাইকে দেখছেন৷ এটা মনে করি তাঁর সেই সূক্ষ্মলীলা৷ তাই তাঁর দেওয়া পবিত্র দায়িত্ব আমাদেরই সার্বিক করে তুলতেই হবে কারণ আমরা প্রতিশ্রুত৷ পরিশেষে প্রার্থনা করি আদর্শের জয় হোক৷
- Log in to post comments