মনিপুর রাজ্যে ইনার লাইন পারমিট এর বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে ‘আমরা বাঙালী’ দল সুপ্রীম কোর্টে আবেদন জানিয়ে বলেছিল--- এই আইন দেশের অখণ্ডতা ও জাতীয় সংহতির পরিপন্থী---ভাগ করে শাসন করার যে কূটকৌশল ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থায় রয়েছে,১৪০ বছরের পুরানো এই কালা আইন আসলে সেই বিভাজন প্রক্রিয়াকে মদত দিয়ে মনিপুর ও উত্তর পূর্বাঞ্চলে একটি অস্থিরতা তৈরী করতে চলেছে৷ দেশের সর্র্বেচ্চ ন্যায়ালয় ‘‘আমরা বাঙালী’’র এই আবেদনে সাড়া দিয়ে ভারত সরকার মণিপুরের রাজ্য সরকারের কাছে চার সপ্তাহের মধ্যে এই আইনের যথার্থ নিয়ে মতামত জানতে চেয়েছেন৷ সুপ্রীম কোর্টে আবেদন গৃহীত হওয়ার সাথে সাথেই কয়েকটি বাঙালী-বিরোধী সংঘটন মনিপুর ও তৎসংলগ্ণ অঞ্চলের বাঙালিদের হুমকি, ভয় দেখানো শুরু করে দিয়েছে৷ আমরা বাঙালীর তৎকালীন কেন্দ্রীয় সচিব বকুল রায়ের কুশপুত্তলিকা দাহ করছে একশ্রেণীর উগ্রবাদীরা
শ্রী বকুল রায় বলেন---আসলে মানুষ যখন ভয় পায় তখনই ভয় দেখানোর চেষ্টা করে৷ যাঁরা আমরা বাঙালীর বিরুদ্ধে ও এল.আই.পি-র পক্ষে কথা বলছেন তারা সুপ্রীম কোর্টে আসুন---যুক্তি ও ন্যায়ের পক্ষে কথা বলুন৷ হার জিৎ তো দেশের অখণ্ডতার স্বার্থে হবে৷ বলে রাখা ভাল আমরা বাঙালীর এই আন্দোলন ও আইনি লড়াই কেবল বাঙালী জনগোষ্ঠীর জন্য নয়, ওখানকার বিভিন্ন জাতি জনজাতি যাঁরা দীর্ঘকাল ধরে শ্রমিক হিসেবে ও বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্যের সাথে জড়িত তাদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার নূ্যনতম প্রয়োজনটুকু ও পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্যে যে বিশ্বাস ও সৌহার্দ্যটুকু থাকলে ব্যবসা বাণিজ্য থেকে আরম্ভ করে দৈনন্দিন কাজকর্ম ও রুটি রুজির সংস্থান হয়, সেই সমস্ত মানবিক ভাবনা গুলিকে সরিয়ে রেখে এই আইন ঘুরপথে অর্থনৈতিক ভারসাম্যটাই নস্যাৎ করতে চাইছে৷ তাই কেবল বাঙালি নয়, স্থানীয় বাঙালি ছাড়াও ওই এলাকার স্থানীয় সমস্ত জাতি ও জনজাতি গোষ্ঠীর স্বার্থে এই আইন বাতিল হওয়া উচিৎ৷ ফলে স্থানীয় জনগণের স্বার্থের কথা বলে বাজার গরম করতে চাওয়া সংগঠনগুলির দাবী শিশু সুলভ ও হাস্যকর৷
প্রসঙ্গতঃ বলে রাখা দরকার অতীতে জিরিবাম ডিমাসা রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল৷ মনিপুররাজ রাজা গম্ভীর সিং কে এই অঞ্চলটি উপঢৌকন হিসাবে দান করেন ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি৷ দান কালে রাজা গম্ভীরসিং এর সাথে ব্রিটিশ কোম্পানি-র যে চুক্তি ১৮৩৫ সালে হয়েছিল তাতে স্পষ্ট বলা আছে ‘‘রাজা উইল ইন্ নো ওয়ে অবসট্রাক্ট দ্য ট্রেড ক্যারিড অন বিটুইন.... বেঙ্গলী অর মনিপুরী..’’৷ সুতরাং ১৪০ বছরের অধিকার দমনকারী,বিভেদমূলক পুরানো আইনের সাহায্য নিতে গেলে এই চুক্তির কথাটিও মাথায় রেখে মানবিক হওয়া যেত৷ কিন্তু এই আইন সে পথ মাড়ায়নি৷ তাই ভারতের অখণ্ডতার স্বার্থে কোনো ভাবেই আই.এল.পি মেনে নেওয়া যায় না আইনগতভাবে ও নীতিগতভাবে৷ আসুন, পরস্পরের প্রতি বিষবাষ্প ছড়িয়ে পরিবেশকে বিষময় না করে, প্রেম-প্রীতি ভালোবাসায় পরিবেশ শীতল করি৷ সুপ্রীম কোর্ট দেশের সর্র্বেচ্চ সাংবিধানিক ব্যাখাকার৷ ন্যায়ালয়ের প্রতি ভরসা রাখুন৷ এতে সকলের কল্যাণ৷
শ্রী রায় আরও বলেন---চৈতন্য মহাপ্রভুর সময় থেকে বাঙালী মনিপুরীর সৌভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক৷ আজ দেশীয় পুঁজিপতিরা শোষণের স্বার্থে ও উত্তর পূর্বাঞ্চলকে লুণ্ঠন করতে উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন জনজাতিকে বাঙালীর বিরুদ্ধে লড়িয়ে দিচ্ছে আমরা স্পষ্ট করে জানাতে চাই আমারা বাঙালীর আন্দোলন কোনো জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নয়, সর্বপ্রকার শোষণের বিরুদ্ধে৷ আমরা বাঙালীর লক্ষ্য বিশ্বের সকল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সৌভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক বজায় রেখে শোষণমুক্ত মানবসমাজ ঘটন করা৷ উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন জনজাতির উচিত প্রকৃত শোষককে চিনে আমরা বাঙালীর আন্দোলনে সামিল হওয়া৷ তাতে উত্তর পূর্বাঞ্চলেরই সার্বিক কল্যাণ হবে৷