উৎসবের উন্মাদনায় বিপন্ন পশুপাখির অস্তিত্ব

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

আমাদের বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে মানুষ হুল্লোড়ে মাতে৷ অনেক সময় তা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়৷ উৎসব অনুষ্ঠানে পশুপাখীরা যে ব্রাত্য, তা আবার একবার প্রমাণিত হল রায়গঞ্জে অনুষ্ঠিত দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে৷ কার্ণিভালে জোরালো আলোও শব্দের ভয়ে রায়গঞ্জে বলদ গুঁতিয়ে প্রাণ কেড়ে নিল একজন মানুষের৷ এযেন উৎসবের  দুধে এক ফোঁটা চোনা৷

অনেক সময় দেখা যায় দোল-হোলিতে রঙ দিয়ে রাঙানো হয় পথ কুকুরদের৷ বেচারী কুকুর কয়েকদিন ধরে জিভ দিয়ে নিজের ত্বক পরিস্কার করার অবিরাম চেষ্টা করে থাকে৷ ফলে পেটে যায় রাসায়নিক রঙ৷ অসুস্থ হয়ে পড়ে৷ বছর ভর কুকুরগুলো ভোগে চামড়ার রোগে৷

বাঙালীদের শোভাযাত্রায় আজকাল ঘোড়ার গাড়ীর ব্যবহার বেড়েছে৷ ঘোড়াদের কানের কাছে বাজে তাসা, ব্যাণ্ডপাটি, আর পায়ের কাছে, ঘোরে চরকি বাজি৷ ঘোড়া বেচারী ভয়ে কাঠ হয়ে থাকে৷

দীপাবলী আলো আর শব্দের তাণ্ডবের উৎসব৷ সারা বছর ধরে শহরে চলে বিভিন্ন ধরণের নির্র্মণকাজ, মিছিল, গাড়ী চলাচল ইত্যাদির জন্য জীবজন্তুদের বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়৷ এর সঙ্গে লাউড স্পীকার ডিজে বাজানো অথবা বাজী ফাটানো হয়, ফলে পশু পাখীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে৷ তাদের রক্তচাপ যায় অনেক বেড়ে৷ তারা বাধ্য হয় এই পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে বাঁচার তাগিদে৷ কারণ শহরেই তাদের জীবনযাত্রা নির্বাহ হয়৷ কিন্তু মারাত্মক কুপ্রভাব পড়ে তাদের শরীরে৷

সমীক্ষায় দেখা গেছে রাস্তাঘাটের উজ্বল ল্যাম্পপোষ্ট বহুতল ভবন৷ বিশেষ জায়গায় আলোকসজ্জা ইত্যাদি পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে৷ গাছের গায়ে জড়ানো এল-ইডি আলো, বা তাদের ওপর ফোকাস করা তীব্র আলোয় শুধু যে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় তাই নয় ওইসব গাছে আশ্রয় নেওয়া পাখীরাও তীব্র আলো ও শব্দের  জন্য ঘুমোতে পারে না৷ তাদের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায়  ব্যাঘাত ঘটে৷ রাতের উজ্জ্বল আলোয় দিগভ্রান্ত পাখীরা হয় পথভ্রষ্ট৷ উদ্ভিদ ও পশুপাখীদের এই বিপন্নতা প্রকৃতি থেকে তাদের বিলুপ্তির সময় ত্বরান্বিত করছে৷

মনে রাখা দরকার মানুষের সুষ্ঠভাবে সমাজে বাঁচার স্বার্থেই দরকার-পর্বত অরণ্য, খাল,বিল, জলাশয়, নদ-নদী, জল-হাওয়া, গাছপালা, পশুপাখী সমন্বিত আমাদের এই প্রকৃতি ও পরিবেশকে যথোচিতভাবে রক্ষা করা অর্থাৎ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে ভূ-প্রাকৃতিক ও জীব বৈচিত্র্যে অজৈব ও জৈব শৃঙ্খলকে রক্ষা করা৷ প্রকৃতি পরিবেশের ভারসাম্য সুদূঢ় হলেই মানবজাতি জীবন দীর্র্ঘয়ু ও জীবনযাপন মসৃন হবে---একথাটা মানুষ যত তাড়াতাড়ি বোঝে ততই মঙ্গল৷