অর্ধেক আকাশের যন্ত্রণা
‘আমি নারী আমরা পারি’--- এই ক্যাচ লাইনটির মধ্যে যে কতখানি না পারার যন্ত্রণাকে আড়াল করা হচ্ছে তার খবর কজন রাখে!
- Read more about অর্ধেক আকাশের যন্ত্রণা
- Log in to post comments
‘আমি নারী আমরা পারি’--- এই ক্যাচ লাইনটির মধ্যে যে কতখানি না পারার যন্ত্রণাকে আড়াল করা হচ্ছে তার খবর কজন রাখে!
নারী কল্যাণ ঃ সমাজে নারীর অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়, একান্তই দুর্বিসহ৷ সংঘের যারা ‘তাত্ত্বিক’, তাদের কর্ত্তব্য হ’ল অনগ্রসর মহিলাদের মধ্যে কল্যাণমূলক কাজ করা, তাদের কুসংস্কার–নিরক্ষর দূর করা, ধর্মচক্রের বন্দোবস্ত করা ও তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা৷ দেখা যায়, স্বামীর মৃত্যুর পর নারীরা আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হন৷ তাই তাঁরা যাতে স্বাধীনভাবে জীবিকার্জন করতে পারেন সে ধরণের সুযোগ তৈরী করতে হবে৷
এই সমাজে পুরুষেরা বিশেষ সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে৷ পুরুষদের ওপর অর্থনৈতিক নির্ভরতার জন্যে পরিত্যক্তা নারীদের একাংশ পতিতাবৃত্তি গ্রহণ করতে ৰাধ্য হয়৷ যখন সমাজে নারীরা অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও পুরুষের সমান মর্যাদা পাবে তখন এই ধরণের বৃত্তি ৰন্ধ হয়ে যাবে৷ যে সব নারী ওই জঘন্য বৃত্তি পরিত্যাগ করে নিজের চরিত্র শুধরে নেবেন, সেই সব নারীকে উপযুক্ত মর্যাদা সমাজকে দিতে হবে৷ পতিতাবৃত্তি সামাজিক–র্থনৈতিক ব্যবস্থার কুফল৷
এই দশ লাখ বৎসরের মানুষের ইতিহাসে মানুষের প্রতি সুবিচার করা হয়নি৷ মানুষের একটি শ্রেণী, একটি বর্গের প্রতি বেশী বাড়াবাড়ি করা হয়েছে, বেশী আদিখ্যেতা করা হয়েছে, ও তা, করতে গিয়ে অন্যকে তাচ্ছিল্য করা হয়েছে৷ একজন মানুষ লড়াই করল, মরল, আত্মদান দিল, কাগজে বড় করে তা ছেপে দেওয়া হ’ল, আর সে মরে যাওয়ার পর ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলিকে নিয়ে তার বিধবা স্ত্রীকে কী ধরণের অসুবিধায় পড়তে হ’ল সেকথা খবরের কাগজে বড় করে ছাপানো হ’ল না অর্থাৎ একতরফা বিচার করে আসা হয়েছে৷ যদিও ব্যাকরণগত ব্যাপার, আর হঠাৎ বদলানো যায় না, তবু ‘ম্যান’ ‘man’ এই কমন জেণ্ডারের মধ্যে ‘ম্যান’, আর ‘ওম্যান’ •woman— দুই–ই এসে যায়৷ অথচ ‘ওম্যান’ এই কমন জেন্ডার
কতিপয় নারী লোভের বশবর্ত্তী হয়ে অর্থ উপার্জনের জন্যে শরীর বিক্রী করছে–প্রায় নগ্ণ হয়ে৷ প্রাত্যহিক সংবাদপত্রে, বিভিন্ন পত্র–পত্রিকায়, দূরদর্শনে স্বল্প পোষাকে শরীর দেখিয়ে কিশোর–যুবাদের কাম রিপুকে শুড়শুড়ি দিয়ে যৌন–আবেদনে হাতছানি দিয়ে শরীরে শিহরণ এনে দিচ্ছে৷ এদের কবল থেকে মুক্ত হওয়া কোন মতেই সম্ভব নয়৷ এদের ধ্বংস অনিবার্য৷ এদের কবল থেকে শিশু–কিশোর–যুবা কেউই বাঁচবে না সুস্থ শরীর ও মন নিয়ে৷ এই সমস্ত নারীরা নিজেরাও মরবে, অন্যদেরও মারবে৷ সংসারে যারা গুরুজন তারা অসহায়ভাবে দেখে যাবে, লালন–পালন করে এই প্রজন্মকে বাঁচাতে পারবে না৷ দর্শক হয়ে শারীরিক ও মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে৷ কেউ সুস্থ শরীর মন নিয়ে ব
সম্প্রতি আমাকে একটি দুরূহ সমস্যার সম্মুখীন হ’তে হয়েছিল৷ সমস্যাটা বা প্রশ্ণটা হয়তো কিছুটা দুরূহ কিন্তু উত্তরটা খুবই সরল৷ প্রশ্ণ ছিল, মহিলারা মুক্তি–মোক্ষের অধিকারী কি না৷
কিছুদিন আগে তোমাদের বলেছিলুম যে তন্ত্রে বলা হয়েছে, ‘‘দেহভৃৎ মুক্তো ভবতি নাত্র সংশয়ঃ’’৷ আত্মজ্ঞান লাভের নূ্যনতম যোগ্যতা হ’ল এই যে সাধককে মানুষের শরীর পেতে হবে৷ এটাই হ’ল তার নূ্যনতম যোগ্যতা৷ কই, এখানে তো উল্লেখ করা হয়নি যে সে সাধক নারী বা পুরুষ হবে৷ এর থেকে এটাই পরিষ্কার যে নারী–পুরুষ উভয়েই মুক্তি–মোক্ষ লাভের সমান অধিকারী৷
আমি নারী!
সুন্দর এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সৃষ্টি আমি৷
কখনও আমি বিদূষী মৈত্রী, ক্ষণা লীলাবতী৷
কখনও বা সতী সাবিত্রী সীতা অরূন্ধতী৷
আমার পূর্ণতা ষোড়শীর দর্পণে৷
পূর্ণতা মোর শত মনীশীর জন্মদানে৷৷
আমার পূর্ণতা নিশাবসানের হুংকারে৷
আমার পূর্ণতা দশভূজার রণ ঝংকারে৷৷
নারী হল একজন পূর্ণ মানব৷ সৃষ্টির ঊষালগ্ণ হতে নারী আপন জীবন তুচ্ছ করে নতুন প্রজন্মকে ধারণ, বহন ও পালন করে চলেছেন, নারীরা তাঁদের সেবা ও ত্যাগ দিয়ে রচে গেছেন কালের কাহিনী৷ সেই অনিত্যের নিত্যপ্রবাহিনীর জয়গাথা শুনতে পাই কবির কন্ঠে---
‘‘জনে জনে রচি গেল কালের কাহিনী,
সমাজে এমন কিছু সুবিধাবাদী লোক থাকে যাদের স্বভাবই হ’ল মানুষকে শোষণ করা কিন্তু প্রকাশ্যে তারা সে কথা বলে না৷ বরং তারা মানুষকে কু–যুক্তি দেখিয়ে বলে–প্রকৃতি বা পরমাত্মার বিধানই এই যে সমাজের কিছু মানুষ চির অবহেলিত থাকুক৷ তারা জীবনভর শুধু অমানসিক পরিশ্রম করে যাক, আর সীমিত সংখ্যক লোক প্রাচুর্যের স্রোতে গা ভাসিয়ে সুখে শান্তিতে বাস করুক৷ এটাও ভাবজড়তা (Dogma)৷ যাঁরা বুদ্ধিমান, যাঁরা ধার্মিক তাঁরা অবশ্যই এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করবেন তথা আপোষহীন সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন, কারণ মানুষের স্বাধীন বুদ্ধিকে যা কিছু অবরুদ্ধ করে তা’ মানুষের বুদ্ধির মুক্তিকেও সুদূরপরাহত করে৷
আজকাল প্রায়ই নারী প্রগতি বলে একটা কথা অনেকের মুখে মুখে চলে আসছে৷ সেদিন রেডিও এফ. এম. গোল্ড এ প্রচারিত একটি অনুষ্ঠানে এই ‘‘নারী প্রগতি’’ কথাটা শুনে আমার মনে এ বিষয়ে কিছু লেখার ইচ্ছা প্রকট হয়৷
(মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তাঁর শব্দ চয়নিকা–২৬ খণ্ড গ্রন্থের বিভিন্ন স্থানে ‘নারীর মর্যাদা’ বিষয়ক অনেক কিছুই বলেছেন৷ ওই গ্রন্থ থেকে কিছু অংশ সংকলিত করে প্রকাশ করা হচ্ছে৷ –সম্পাদক)