দধি ও ঘোলপান
যে ক্রমি (ব্যাকটিরিয়া) দুধকে দইয়ে রূপান্তরিত করে দধ্যম্লের (দম্বল বা জোড়ন) সাহায্যে সে ক্রমি স্বাভাবিক অবস্থায় মানুষের শত্রু নয়৷ তবে (দইয়ে) সেই ক্রমির মৃতদেহের প্রাচুর্য ঘটলে তখন তা মানুষের পক্ষে শত্রু হলেও হতে পারে৷ পচা দইয়ে সাধারণতঃ এই ধরনের ব্যাপার ঘটে৷ তাই দইয়ে দুর্গন্ধ দেখা দিলে তা কিছুতেই ভক্ষণ করা উচিত নয়৷ দই তাজা অবস্থায় থাকলে এই ধরণের ক্রমির মৃতদেহ কম থাকে৷ দধিতে (তো মিষ্ট দধিই হোক আর অম্ল দধিই হোক) লবণ সংযোগ করলে মৃত ক্রমির বিরুদ্ধাচারণ কিছুটা প্রতিহত হয়৷ তাই ‘‘দধি লবণেন সহ ভক্ষয়েৎ৷’’
(সাধারণতঃ) আমরা দেখি ভাদ্রমাসের প্রথমাংশে ও মধ্যমাংশে পুরো বর্ষা থাকে৷ শেষাংশে শরতের হাওয়া বয়৷ সদ্য বর্ষা শেষ হওয়ায় চারিদিকে থাকে জল৷ তারপর কড়া রোদ পড়লে যে ভাপ ওঠে তা শরীরকে ভারাক্রান্ত তথা জ্বরাক্রান্ত করে দেয়৷ তাই ভাদ্র মাসে জ্বর, সর্দি–কাশি, চোখ–ওঠা, কানে পুঁজ বেশী হয়৷ বাত না হলেও গলা–খুসখুসি এই সময় অনেকের হয়ে থাকে৷ শরীরের ভারসাম্য রক্ষার জন্যে এই সময়ে দ্বিপ্রহরে ঘোল সেবন স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল৷ সূর্যাস্তের পর ঘোল সেবন স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর৷ তাতে নানা রকম উদর–ব্যাধি হতে পারে৷ স্বাস্থ্যরক্ষার প্রয়োজনে ও সম্ভবপর হলে যে কোন মানুষ প্রাত্যহিক ভোজন–তালিকায় ঘোলকে রাখতে পারেন৷ এই জন্যে বলা হয়েছে–
‘‘দিনান্তে চ পিবেৎ দুগ্ধং নিশান্তে চ পিবেৎ পয়ঃ৷
ভোজনান্তে পিবেৎ তক্রং কিং বৈদ্যস্য প্রয়োজনম্৷’’
(তক্রং – মানে ঘোল)
নির্দিষ্ট কয়েকটি রোগে দধি–ঘোল আবশ্যিক পথ্য ঃ
‘‘অজীর্ণরোগে তরলভেদে দধি ও কোষ্ঠকাঠিন্যে চীনী সহ মহিষী দুগ্ধের ঘোল৷ মনে রাখতে হবে ঘোল জিনিসটা ডিস্পেপসিয়া (অজীর্ণ) রোগীর পক্ষে বিশেষ হিতকারী৷’’
‘‘অম্লরোগীর পক্ষে ঘোল বিশেষ উপকারী, দধি বিশেষ হিতকারী নয়৷’’
‘‘অর্শ রোগী দু’বেলা এক গ্লাস করে ঘোল খাবে৷’’
‘‘কর্কট রোগে যকৃতের অবস্থা বুঝে যথেষ্ট পরিমাণে দুধও রোগীকে গ্রহণ করতে হবে৷ যকৃৎ যাদের খারাপ তারা গোদুগ্ধের পরিবর্ত্তে নারকোল বা বাদামের দুধ অথবা ঘোল ব্যবহার করবে৷’’
‘‘নিম্নচাপ রোগীদের পক্ষে উপবাসের দিন দুধ, ফলের রস প্রভৃতি ব্যবহার করা উচিত৷ যাদের রক্তচাপ ক্ষর্ধিত হয়েছে তাদের পক্ষে দুধের পরিবর্ত্তে ঘোল অথবা অল্প পরিমাণে নারিকেলের দুধ ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়৷’’
‘‘শ্বেতপ্রদর রোগের (স্ত্রীব্যাধি) মূল কারণ রক্তাল্পতা৷ রোগিনীর যদি দুধ সহ্য না হয় সেক্ষেত্রে ঘোল বা নারিকেলের দুধ পান করা বিধেয়৷’’
‘‘দুধ ও ফল হৃদরোগের একমাত্র খাদ্য ও পানীয়৷ দুধ যাদের সহ্য হয় না তারা দুধের পরিবর্ত্তে ঘোল ব্যবহার করতে পারে৷’’
পালং শাক
শাক বা পত্রশাকেদের মধ্যে পালং একটি উত্তম মানের শাক৷ অতি মাত্রায় ভক্ষণ করলে শ্লেষ্মাবৃদ্ধি ঘটে৷ অন্যথায় এই শাক গুণেরই আকর৷ শাকটি খেতে মিষ্টি মিষ্টি, সুস্বাদু, শরীরের পক্ষে হিতকর প্রভাব–সম্পন্ন, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, হৃদরোগের ঔষধ (পালং শাকের ক্কাথ), শ্বাসরোগের ঔষধ (পালং শাকের রস), লিবারের ক্ষতের ঔষধ ও বিষক্রিয়া–নাশক৷ বিটামিনে পরিপূর্ণ এই শাকটি গুণের তুলনায় খুবই সস্তা৷ ভাজা না করে ঘন্ট বা চচ্চড়িতে ব্যবহার করাই বেশী ভাল৷ ভাজা খেতে গেলে কম তেলে ভাজতে হবে৷
দিনের বেলায় একটু বেশী মাত্রায় পালং শাক খেলে তাও মৃদু বিরেচকের কাজ করে৷ কারণ পালং শাকের অনেক গুণের মধ্যে একটি গুণ হচ্ছে তা কঠিন মলকে গুঁড়ো করে দেয় ও মল–নিঃসরণে সাহায্য করে৷ সংসৃক্তে ওই ধরণের গুণযুক্ত বস্তুকে ‘বিষ্টম্ভিনী’ বলা হয়৷
‘‘পালঙ্ক্যা মধুরা স্বাদু শ্লেষ্মলা হিতকারিণী,
বিষ্টম্ভিনী মদশ্বাস পিত্তরক্ত বিষাপহা৷৷’’
এই গুণ কিঞ্চিৎ পরিমাণে মটর শাকেও (কলায় পত্রম) আছে (অন্য শাকেরও অল্পবিস্তর একই গুণ আছে)৷ নেবুর রস (সবচেয়ে ভাল পাতি নেবুর রস) কোষ্ঠকাঠিন্যের অতি উত্তম ঔষধ সকালে খালি পেটে ১/২টি নেবুর রস ২ গ্লাস জল ও লবণসহ খেলে খুব ভাল ফল দেয়৷ এ ছাড়া বেল, ত্রিফলার জলও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে৷
(‘‘দ্রব্যগুণে রোগারোগ্য’’ ঃ শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার)