January 2025

ও, আর/এবং–সংযোজক ‘ও’

ও, আর/এবং–সংযোজক ‘ও’–এর পরিবর্ত্তে অনেকে প্রায়শঃ ‘এবং’ শব্দটির ব্যবহার করে থাকেন৷ কিন্তু ‘এবং’ মানে ‘ও’ নয়৷ ‘এবং’ বাংলা শব্দও নয় এটি একটি সংস্কৃত শব্দ, যার মানে ‘এইভাবে’, ‘এইরকমে’৷ যেমন, ‘এবং কুরু’ মানে এইভাবে করো৷ সুতরাং ‘ও’–র পরিবর্ত্তে ‘এবং’ প্রয়োগ করলে চলৰে না৷ পরিবর্ত্তে ‘ও’ বা ‘আর’ লিখলেই ভাল হয়৷

সরব/সোচ্চার

সরব/সোচ্চার–আজকাল বহু শিক্ষিত মানুষও ‘সরব’ (vocal) ৰোঝাতে গিয়ে ‘সোচ্চার’ কথাটা প্রায়শঃ লিখে থাকেন বা ৰলে থাকেন৷ শব্দটা আগাপাস্তলা ভুল৷ উচ্চারূণ>ঔচ্চার৷ ‘উচ্চার’ মানে ‘বিষ্ঠা’৷ ‘ঔচ্চার’ মানে ‘বিষ্ঠা সম্বন্ধীয়’৷ উচ্চারেণ সহ ইত্যর্থে ‘সোচ্চার’ (তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস) যার মানে হচ্ছে যিনি মলত্যাগ করেছেন কিন্তু এখনও জলশৌচ করেননি৷ মলত্যাগকালে কোঁথ দেওয়াকেও ‘উচ্চার’ ৰলা হয়৷ অতএব ‘সোচ্চার’ শব্দের আরেকটি মানে হ’ল যে মলত্যাগ করবার জন্যে কোঁথ দিচ্ছে৷ কেবল সংস্কৃত বা ৰাংলা ব্যাকরণেই নয়, ৰাংলা ভাষায় অন্য ভাষার যে সব শব্দ আছে সেগুলো একটু মানে ৰুঝে ব্যবহার করলে ভাল হয়৷

মুদ্রাঙ্কিত/মুদ্রিত

মুদ্রাঙ্কিত/মুদ্রিত–ছাপ মারার ফারসী হচ্ছে ‘মোহর’, সংস্কৃতে ‘মুদ্রাঙ্কন’৷ ৰই ছাপানোটাও কাগজে ছাপ মারা৷ তাই ৰই ছাপানোকেও ৰলতে হবে ‘মুদ্রাঙ্কন’, বা পুস্তক ‘মুদ্রাঙ্কিত’ হয়েছে৷ সংস্কৃত ‘মুদ্রিত’ মানে ‘মোদা’ বা ৰোজা বা ‘ৰন্ধ করা’৷ পুস্তক ‘মুদ্রিত হয়েছে’ মানে ৰইটাকে ৰন্ধ করা হয়েছে৷ অনেক ৰইয়েতে লেখা থাকে–‘‘অমুক প্রেস থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত৷’’ এরূপ না লেখাই উচিত৷ লেখা উচিত ‘‘অমুক প্রেস থেকে মুদ্রাঙ্কিত ও প্রকাশিত’’৷

অভিজাত/সম্ভ্রান্ত

অভিজাত/সম্ভ্রান্ত–অনেকে বনেদি বা অভিজাত অর্থে ‘সম্ভ্রান্ত’ শব্দটি প্রয়োগ করে থাকেন৷ আসলে ‘সম্ভ্রান্ত’ মানে ‘সম্যক রূপে ভ্রান্ত’৷ মানে, যে বড় রকমের ভুল করে ফেলেছে৷ তাই অভিজাত অর্থে ‘সম্ভ্রান্ত’ শব্দের ব্যবহার রহিত হওয়া বাঞ্ছনীয়৷

ভৌতিক–‘ভুত’

ভৌতিক–‘ভুত’ (ন্ধড়প্সব্দব্ধ) সংক্রান্ত অর্থে ‘ভৌতিক’ শব্দ ব্যবহার না হওয়াই বাঞ্ছনীয়৷ বাংলায় যাকে ভুত বলি তার সংস্কৃত হচ্ছে ‘প্রেত’৷ প্রেত থেকে ‘প্রৈতিক’ শব্দ আসতে পারে যদিও তার ব্যবহার খুবই সীমিত৷ ন্ধড়প্সব্দব্ধ অর্থে ‘ভুত’ শব্দটা যদি রাখতেই হয় তাহলে তার বিশেষণ হোক ‘ভুতুড়ে’–ভৌতিক নয়৷ সংস্কৃত ‘ভূত’ শব্দের ‘ঠ’ ক্ বা ‘ষ্ণিক্’ প্রতয়্যান্ত বিশেষণ ভৌতিক’ (Physical)৷

শোভাঞ্জন বা শোজনে

পরিচয় ও প্রজাতি ঃ তোমরা শোভাঞ্জন বা শোজনের অথবা (Moringa oleifera pterygosperma Gaetn.)সঙ্গে ভাল ভাবেই পরিচিত৷ শোভাঞ্জন ঞ> শোহাঞ্জন > শোআঞ্জন ঞ্ছ শোজিনা > শোজনে৷ শোভাঞ্জন শব্দের ভাবারূঢ়ার্থ হ’ল চোখের শোভা৷ শীতকালে যখন শাদা শোজনে ফুলে গাছ ভরে যায় তখন তা দেখতে ভারী সুন্দর লাগে৷ তাই এর নাম শোভাঞ্জন৷ শোজনের ফুল আসে শীতের মাঝামাঝি সময়ে৷ ডাঁটা ধরে শীতের শেষে–সেই সময়ে যে সময়ে বসন্ত রোগের প্রাদুর্ভাব হয়৷

বাংলা বানান সংশোধন

অসংস্কৃতি– ‘সংস্কৃতি’র বিপরীত শব্দ ‘অপকৃতি’ চলতে পারে, তবে ‘অপসংস্কৃতি’ চলতে পারে না৷ কারণ ‘সংস্কৃতি’ (সম্–কৃ  ক্তিন্ ঞ্চ সংস্কৃতি যার মানে যা মানুষকে সূক্ষ্মত্বের দিকে, রুচিবোধের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়) মানেই ‘কৃতি’–র উন্নতাবস্থায় অধিরোহণ৷ ‘অপ’ মানে অবনত অবস্থা৷ একসঙ্গে দু’টো চলবে কি করে! এ সোণার পাথর বাটি হয়ে গেল যে! আবার ‘অপকৃতি’–র মানে ‘কুকার্য’ও হয়৷ তাই সংস্কৃতির বিপরীত শব্দ হিসেবে বরং ‘অসংস্কৃতি’ শব্দটা চলতে পারে৷ কেননা ‘সম্’ উপসর্গ সাধারণতঃ ভাল বা শুভ অর্থে প্রযোজ্য হয়৷ তাই ‘অপসংস্কৃতি’ শব্দটি অশুদ্ধ৷

কদলী

কলাগাছ মুখ্যতঃ মুথা থেকেই বেরোয় ও প্রারম্ভিক অবস্থায় তাকে ৰাংলায় ‘তেউড়’ ৰলে৷ বীচে কলার বীজ থেকেও কলা হয়৷ তবে সে ধরণের গাছ কলা দিতে অত্যন্ত বিলম্ব করে৷ ভারতের প্রাচীন বিশ্বাস অনুযায়ী অতি প্রাচীনকানে বেতের ৰন দাবানলে দগ্দ হয়ে যাবার পর সেই দগ্দ বেতের  মূল থেকে বর্ষার জল পেয়ে প্রথম কলাগাছের জন্ম হয়েছিল৷ খাদ্য হিসাৰে কলা ৰেশ পুষ্টিকর৷ তবে যেসব কলায় অম্লভাব ৰেশী যেমন চাঁপাকলা, সেগুলি সন্ধ্যার পরে খেলে অম্লদোষ হতে পারে৷ দ্রাবিড় ও আরো কয়েকটি অনার্য সমাজে কদলী বৃক্ষ শুভের প্রতীক৷ তাই মাঙ্গলিকে কদলী বৃক্ষের ব্যবহার রয়েছে৷ ৰাংলার মানুষের ওপর দ্রাবিড় ও অন্যান্য অনার্যদের প্রভাব যথেষ্ট পরিমাণে থাকায় ৰাঙ

ও কী করে এসেছিল!

 

‘ইহ’ মানে ‘এই জগতে’৷ মনে রাখা দরকার ‘অত্র’ আর ‘ইহ’ এক জিনিস নয়৷ ‘অত্র’ মানে এখানে–এই স্থানে আর ‘ইহ’ ব্যবহূত হয় অনেক ব্যাপকার্থে......‘এই লোকে’/‘এই জগতে’৷ ‘ইহ’‘ঠক্’ প্রত্যয় করে আমরা পাচ্ছি ‘ঐহিক’ শব্দটি৷ তার বিপরীত শব্দ হচ্ছে ‘পরত্র’ থেকে ‘পারত্রিক’ ‘ইহলৌকিক’–বিপরীত শব্দ ‘পারলৌকিক’৷ ‘ইহলোক’–বিপরীত শব্দ ‘পরলোক’৷ ‘ইহ তিষ্ঠ’ না বলে ‘অত্র তিষ্ঠ’ বলা ৰেশী সঙ্গত হবে৷ ‘ইহ তিষ্ঠ’ মানে ‘এই জগতে থাকো’৷ আর ‘অত্র তিষ্ঠ’ মানে  ‘এইখানটিতে থাকো’৷ সুপ্রাচীনকাল থেকেই ‘ইহ’ শব্দটি অব্যয় রূপে ব্যবহূত হয়ে এসেছে৷

হিন্দী মে ৰোলিয়ে

যে মানুষ হিন্দী ও ইংরেজী দু’য়ের কোনোটাই জানে না সে হিন্দী শুনে ভাবতে পারে ওটা ৰুঝি ইংরেজী৷ আবার ইংরেজী শুনে ভাবতে পারে ওটা ৰুঝি হিন্দী৷ বাঙলা–হিন্দীতে ‘গদি’ ও ‘গদ্দী’ নিয়ে এ রকম গণ্ডগোল হলেও হতে পারে৷ ‘‘মালিক গদ্দীমে হঁৈ ’’  বললে একজন ৰাংলাভাষী ভাবতে পারে মালিক ৰুঝি খাটের গদিতে শুয়ে আছে আর ৰাংলায় ‘মালিক গদিতে শুয়ে আছে’ শুনে বাংলা–না–জানা লোক ভাবতে পারে, ‘মালিক বোধ হয় দোকানের খাটে শুয়ে রয়েছে৷’ সেই যে গল্প জানো না৷ একবার একজন উৎকট রাষ্ট্রভাষাপ্রেমী পটনা ইষ্টিশানে পৌঁছলেন৷ তাঁকে যেতে হবে পটনা সেক্রেটারিয়েটে৷ কিন্তু তিনি তো ইংরেজীতে  ‘সেক্রেটারিয়েট’ বলবেন না৷ এমনকি ‘ই