বিশ্বজুড়ে করোনা বাইরাসের আতঙ্কের মধ্যেই মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসের তরুণ ব্রিগেডের নেতা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া ২২ জন বিধায়ক নিয়ে কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপি’তে যোগ দিলেন৷ ফলে এই সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত যে পরিস্থিতি তাতে দেড় বছরের মধ্যেই কমলনাথ সরকারের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারের পতনের সম্ভাবনা ও এখানে পুনরায় বিজেপির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা প্রবল৷
কংগ্রেসের দিগ্বিজয় সিং-এর দাবী, বিধায়কদের ৩০/৪০ কোটি টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে৷ এই বিধায়ক বা সাংসদ কেনাবেচা,যাকে রাজনীতিতে বলা হয় ঘোড়া কেনাবেচা, এটা প্রচলিত গণতন্ত্রের একটা মারাত্মক রোগ৷ গণতন্ত্রের যতটুকু মহিমা এখানেই ধূলিসাৎ হয়ে যায়৷ গণতন্ত্রের উচিত, নেতারা তাদের নীতি, কর্মধারা ও কর্মসূচী জনগণের কাছে রাখবে, তা দেখে বিচার-বিবেচনা করে বোট দেবে৷
জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া এতদিন বিজেপি’র হিন্দুত্ববাদ, এন.আর.সি, সি.এ.এ-এসবের তীব্র সমালোচনা করে জনগণের বাহবা কুড়িয়েছেন, বিজেপির নীতির বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেই মধ্যপ্রদেশের গত বিধানসভা নির্বাচনে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া বিভিন্ন মিটিং, মিছিলও করেছেন৷ সেই পরিস্থিতিতে জনগণ (২০১৮) বিজেপি’কে হটিয়ে কংগ্রেসকে মধ্যপ্রদেশে ক্ষমতায় বসিয়েছে৷ আবার সেই জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া ও তাঁর সাথী ২২জন বিধায়ক কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপি’তে যোগ দিচ্ছেন৷ এটা কী ধরণের নৈতিকতা হ’ল?
প্রচলিত সংসদীয় গণতন্ত্রের এই রোগ বিভিন্ন দলের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে৷ বলা চলে করোনা বাইরাসের মত কোনো বিশেষ দলে সীমাবদ্ধ নেই৷ গোটা গণতন্ত্রের অস্ত্বিকেই সংকটজনক পরিস্থিতির মধ্যে এনে দিয়েছে৷ এই কারণে যুগান্তকারী প্রাউট-দর্শনের প্রবক্তা মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার বলেছেন, ‘গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্যে নৈতিকতা মূল উপাদান৷’ গণতন্ত্রে যিনি প্রার্থী হবেন তাঁকে কঠোরভাবে নীতিবাদী হতে হবে৷
প্রাউট প্রবক্তার ভাষায়---‘‘যারা যম-নিয়মে (নীতিবাদ) প্রতিষ্ঠিত---যারা ভূমাভাবের সাধক , আগেই বলেছি তারাই সদ্বিপ্র৷ মানুষের প্রতিনিধিত্ব কেবল তারাই করবে৷ নিঃস্বার্থভাবে জীবসেবা কেবল তারাই করতে পারে৷’’ তাছাড়া একথাও তিনি বলেছেন, ‘‘নির্বাচন প্রার্থীকে লিখিতভাবে নিজের নীতি ঘোষণা করতে হবে৷ নির্বাচিত হওয়ার পর যদি দেখা যায়, তিনি ওই নীতির বিরোধী কাজ করছেন, সেক্ষেত্রে আদালতে তার সত্যতা প্রমাণিত হলে তাঁর নির্বাচনও নাকোচ হয়ে যাবে৷’’
তাছাড়া এই যে ঘোড়া কেনাবেচা এটা কতটা নীতি বহির্ভূত কাজ তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ অথচ, এঁরাই হন জনগণের ভাগ্যবিধাতা৷ তাই আমরা দেখি, রক্ষকই ভক্ষকে পরিণত হয়৷ তাই দেখি বছর গড়িয়ে যায়, নেতাদের ও তাদের সহযোগী পুঁজিপতি-গোষ্ঠীর, যাঁদের অর্থানুকুল্যে তাঁরা নির্বাচনে লড়াই করেন--- এঁদেরই সম্পদ ফুলে ফেঁপে ঢাক হয়ে যায়, সাধারণ মানুষ যেই তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই থেকে যায়৷ সমাজের যথার্থ সার্বিক উন্নয়ন হয় না৷
বর্তমানে কেন্দ্রের বিজেপি শাসিত সরকার সম্পর্কে বলতে হয়, ক্ষমতার জোরে এইভাবে রাজ্যসরকারগুলির বিধায়ক কেনাবেচা বা বিধায়কদের এইভাবে দলবদলে উৎসাহিত করা মোটেই নীতিসম্মত নয়, তাঁরা তো নীতিধর্মের কথা বলে থাকেন৷ তাহলে,তাঁরা এই অনৈতিকতাকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন কেন? একদিন এটাই কিন্তু বুমেরাং হয়ে তাদেরই কাৎ করে দেবে৷
তাই জোর করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ ত্যাগ করে যথার্থ উন্নয়নের কাজ যদি করেন, তাহলেই বরং জনমনকে তাঁরাই জয় করতে পারবেন৷ মানুষে মানুষে বিভাজন নীতি ত্যাগ করে সবাইকে নিয়ে সবাইকার সর্বাত্মক উন্নতি ঘটানোই সরকারের দায়িত্ব৷ তা না হলে জনগণ বেশিদিন তাদের ক্ষমতার আসনে রাখবেন না৷
- Log in to post comments