Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

ঔপল ঃ উপ-লা+ ড = উপল৷ ইংরেজীতে যাকে ৰলে ‘পেৰ্‌ল্‌’ pebble) ‘ৰাংলায় ‘নুড়ি’, হিন্দীতে ‘রোড়ে’, উর্দুতে ‘সংরেজে’৷ এই নুড়ি সংক্রান্ত বিষয়কে ৰলৰ ‘ঔপল’৷ যে পার্বত্য পথ নুড়িতে ভর্তি তাকে আমরা অনায়াসে ‘ঔপল পথ’ ৰলতে পারি৷ উপল পথ ‘ঔপল’ শব্দ পাচ্ছি৷ উপল মানে যে কেবল নুড়ি তাই নয়৷ যে কোন ক্ষুদ্রাকৃতি কঠোর বস্তুকেই ‘উপল’ ৰলা চলে৷ এমনকি যে বস্তু আগে কঠোর ছিল না, এখন কঠোর হয়ে গেছে, তাকেও উপল বলা চলে৷ উপলী/উপলি হচ্ছে সংস্কৃত ভাষায় ঘুঁটের একটি নাম৷ পর্যায়বাচক শব্দ হচ্ছে ‘ঘুন্টক’ (যার থেকে ‘ঘুঁটে’ শব্দ এসেছে), কাণ্ডক (যার থেকে উত্তর ভারতে ‘কাণ্ডা’), কুরীষ, ঘোসকী (যার থেকে ৰাংলায় ‘ঘোসি’---ঘুসি নয়৷ ঘুসি মানে ‘কিল’)৷ ঘুঁটে যখন কাঁচা ছিল তখন নরম ছিল কিন্তু পরে কঠোর হয়ে গিয়ে ‘উপলী’ নাম পেয়ে গেল৷

ঔর্বর ঃ উর্বর অন্‌ করে ‘উর্বর’ শব্দটা পাচ্ছি, যার মানে ‘উর্বরতা’৷ ‘উর্বর’ মানে যা উন্নতির দিকে এগিয়ে চলেছে৷ প্রাচীন সংস্কৃতে ‘সার’ (manure) অর্থেও ‘উর্বর’ শব্দের ব্যবহার ছিল৷ বর্তমান ভাষাগুলিতেও এই অর্থে ‘উর্বর’ শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে৷

ঔর্ণ ঃ ঊর্ণা+ অণ্‌ করে ‘ঔর্ণ’ শব্দ পাচ্ছি৷ ‘ঊর্ণা’ মানে ‘পশম’, ‘লুতাতন্তু’ (মাকড়সার সূতো)৷ লোকের ধারণা মাকড়সা তার নাভি থেকে লূতাতন্ত্র প্রস্তুত করে৷ এইজন্যে মাকড়সাকে ৰলে ‘উর্ণনাভ’৷ যেমন, পৌরাণিক বিশ্বাস অনুযায়ী বিষ্ণুর নাভিপদ্ম থেকে বিশ্বের উদ্ভুতি৷ তাই বিষ্ণুর একটি নাম ‘পদ্মনাভ’৷ আবার ওই পদ্ম থেকেই সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার উদ্ভব৷ তাই ব্রহ্মার একটি নাম ‘পদ্মজন্ম’ বা ‘পদ্মযোনি’৷

‘‘যুক্তিযুক্তমুপাদেয়ং বচনং ৰালকাদপি৷

অন্যং তৃণবৎ ত্যজ্যমপ্যুক্তং পদ্মজন্মনা৷৷’’

যুক্তিপূর্ণ কথা যদি একজন ৰালকও ৰলে তবুও তা গ্রহণ করৰে আর অযৌক্তিক কথা যদি স্বয়ং পদ্মজন্ম ব্রহ্মাও ৰলেন তবুও তা তৃণবৎ পরিত্যাগ করবে৷ +’ মানে ‘উর্ণা’ সম্বন্ধীয়---পদ্ম সম্বন্ধীয়-মাকড়সার সূতা সম্বন্ধীয়৷ সংস্কৃত ‘ণা’ থেকে হিন্দী-উর্দুতে ‘উন, পশমী বস্তুকে হিন্দী-উর্দুতে ‘উনী কপড়া’৷

ঔরভ্র ঃ ‘উরু’ মানে ‘ভুরি’ (শ্রাদ্ধে চ ভুরিভোজনম) অর্থাৎ ‘প্রচুর’৷ ইংরেজীতে যাকে থাই thigh) ৰলি সেই অর্থেও উরু শব্দের ব্যবহার আছে৷ ‘ভ্রম্‌’ ধাতুর মানে ঘুরে বেড়ানো ‘ভর’ মানে যে ঘুরে বেড়ায়৷ উরু+ ভ্রম্‌ = ড উরুভ্র কিন্তু এক্ষেত্রে ‘উ’-কারের অবলুপ্তি ঘটে শব্দটি দাঁড়ায় ‘উরভ্র’৷ ভাবারাঢ়ার্থে ‘উরভ্র’ বলা হয় তাকে যে খুৰ বেশী ঘুরে বেড়ায়৷ যোগারুঢ়ার্থে ‘উরভ্র’ বলি এক বিশেষ ধরণের শীতল দেশীয় পার্বত্য ভেড়াকে৷ এই উরভ্র ভেড়াকে উর্দু ও কশ্মীরীতে ‘পশ্‌মীনা’ ৰলা হয়৷ এই পশ্‌মীনা ভেড়ার পশম অত্যন্ত কোমল ও উচ্চ মানের, আর তাই মহার্ঘ (মহার্ঘ থেকে তাত্ত্বিক ৰাংলায় ‘মাগ্‌গী’ ভাতা)৷ শোণা যায় এই পশ্‌মীনা জাতের ভেড়ার শাবক যখন মাতৃগর্ভে থাকে তখন মায়ের পেট কেটে সেই অপরিণত শাবককে ৰার করে আনা হয় ও সেই মৃত শাবকের লোম থেকে যে পশম পাওয়া যায় তাকেই ৰলা হয় ‘পশমীনা’৷ এতে মাতা ও উভয় ভেড়াকেই মেরে ফেলা হয়’ আর তাই পশ্‌মীনার মূল্য এত ৰেশী৷ আগে কশ্মীরের আলিনগর ৰাজরে কিছু কিছু পশ্‌মীনা-জাত বস্ত্র পাওয়া যেত৷ পশ্‌মীনা ভেড়ার বাসভূমি ভিন্ন রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় আজকাল শুণি আসল পশ্‌মীনা দুর্লভ হয়ে গেছে৷ যা পাওয়া যায় তা তেমন উন্নত মানের নয় অথবা সাধারণ পশমকেই পশ্‌মীনা ৰলে চালিয়ে দেওয়া হয়৷ এই একটু আগেই ৰললুম এই পশ্‌মীনা ভেড়ার সংস্কৃত হচ্ছে ‘উরভ্র’৷ ‘উরভ্র’= অণ্‌ প্রত্যয় করে৷ ‘ঔরভ্র’৷ ‘উরভ্র’ মানে ‘পশ্‌মীনা ভেড়া’ আর ‘ঔরভ্র’ মানে ‘পশ্‌মীনা তন্তু’৷                  (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে সংগৃহীত)