বাংলা বানান সংস্কার

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

কর্ষক

এমনিতে যাঁরা চাষবাস নিয়ে থাকেন তাঁদের জন্যে সংসৃক্ত ভাষায় বেশি প্রচলিত শব্দ দু’টি রয়েছে–কৃষীবল ও কর্ষক৷ ‘কর্ষক’ শব্দটি কৃষ ধাতু থেকে উৎপন্ন৷ যাঁরা এই কর্ষককে ‘কৃষক’ বানিয়ে ফেলেছেন তাঁরা না জেনেই এই ভুল করেছেন৷ আর যাঁরা আজও ‘কৃষক’ লেখেন তাঁরা ভুলকে ভুল না জেনেই লেখেন৷ আমরা ‘আকর্ষক’ ‘বিকর্ষক’ বলবার সময় ঠিক বলি কিন্তু কেন বুঝি না ‘কর্ষক’ বলবার সময় ভুল করে কৃষক বলে ফেলি৷

অসংসৃক্তি

‘সংসৃক্তি’র বিপরীত শব্দ ‘অপকৃতি’ চলতে পারে, তবে ‘অপসংসৃক্তি’ চলতে পারে না৷ কারণ ‘সংসৃক্তি’ (সম্–কৃ  ক্তিন্ ঞ্চ সংসৃক্তি যার মানে যা মানুষকে সূক্ষ্মত্বের দিকে, রুচিবোধের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়) মানেই ‘কৃতি’–র উন্নতাবস্থায় অধিরোহণ৷ ‘অপ’ মানে অবনত অবস্থা৷ একসঙ্গে দু’টো চলবে কি করে এ সোণার পাথর বাটি হয়ে গেল যে আবার ‘অপকৃতি’–র মানে ‘কুকার্য’ও হয়৷ তাই সংসৃক্তির বিপরীত শব্দ হিসেবে বরং ‘অসংসৃক্তি’ শব্দটা চলতে পারে৷ কেননা ‘সম্’ উপসর্গ সাধারণতঃ ভাল বা শুভ অর্থে প্রযোজ্য হয়৷ তাই ‘অপসংসৃক্তি’ শব্দটি অশুদ্ধ৷

ও, আর/এবং–সংযোজক ‘ও’–এর পরিবর্ত্তে অনেকে প্রায়শঃ ‘এবং’ শব্দটির ব্যবহার করে থাকেন৷ কিন্তু ‘এবং’ মানে ‘ও’ নয়৷ ‘এবং’ বাংলা শব্দও নয় এটি একটি সংসৃক্ত শব্দ, যার মানে ‘এইভাবে’, ‘এইরকমে’৷ যেমন, ‘এবং কুরু’ মানে এইভাবে করো৷ সুতরাং ‘ও’–র পরিবর্ত্তে ‘এবং’ প্রয়োগ করলে চলক্ষে না৷ পরিবর্ত্তে ‘ও’ বা ‘আর’ লিখলেই ভাল হয়৷

সরব/সোচ্চার–আজকাল বহু শিক্ষিত মানুষও ‘সরব’ (প্সন্তুত্রপ্ত) ৰোঝাতে গিয়ে ‘সোচ্চার’ কথাটা প্রায়শঃ লিখে থাকেন বা ৰলে থাকেন৷ শব্দটা আগাপাস্তলা ভুল৷ উচ্চারূণঞ্চঔচ্চার৷ ‘উচ্চার’ মানে ‘বিষ্ঠা’৷ ‘ঔচ্চার’ মানে ‘বিষ্ঠা সম্বন্ধীয়’৷ উচ্চারেণ সহ ইত্যর্থে ‘সোচ্চার’ (তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস) যার মানে হচ্ছে যিনি মলত্যাগ করেছেন কিন্তু এখনও জলশৌচ করেননি৷ মলত্যাগকালে কোঁথ দেওয়াকেও ‘উচ্চার’ ৰলা হয়৷ অতএব ‘সোচ্চার’ শব্দের আরেকটি মানে হ’ল যে মলত্যাগ করবার জন্যে কোঁথ দিচ্ছে৷ কেবল সংসৃক্ত বা ৰাংলা ব্যাকরণেই নয়, ৰাংলা ভাষায় অন্য ভাষার যে সব শব্দ আছে সেগুলো একটু মানে ক্ষুঝে ব্যবহার করলে ভাল হয়৷

মুদ্রাঙ্কিত/মুদ্রিত–ছাপ মারার ফারসী হচ্ছে ‘মোহর’, সংসৃক্তে ‘মুদ্রাঙ্কন’৷ ৰই ছাপানোটাও কাগজে ছাপ মারা৷ তাই ৰই ছাপানোকেও ৰলতে হবে ‘মুদ্রাঙ্কন’, বা পুস্তক ‘মুদ্রাঙ্কিত’ হয়েছে৷ সংসৃক্ত ‘মুদ্রিত’ মানে ‘মোদা’ বা ৰোজা বা ‘ৰন্ধ করা’৷ পুস্তক ‘মুদ্রিত হয়েছে’ মানে ৰইটাকে ৰন্ধ করা হয়েছে৷ অনেক ৰইয়েতে লেখা থাকে–‘‘অমুক প্রেস থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত৷’’ এরূপ না লেখাই উচিত৷ লেখা উচিত ‘‘অমুক প্রেস থেকে মুদ্রাঙ্কিত ও প্রকাশিত’’৷

অভিজাত/সম্ভ্রান্ত–অনেকে বনেদি বা অভিজাত অর্থে ‘সম্ভ্রান্ত’ শব্দটি প্রয়োগ করে থাকেন৷ আসলে ‘সম্ভ্রান্ত’ মানে ‘সম্যক রূপে ভ্রান্ত’৷ মানে, যে বড় রকমের ভুল করে ফেলেছে৷ তাই অভিজাত অর্থে ‘সম্ভ্রান্ত’ শব্দের ব্যবহার রহিত হওয়া বাঞ্ছনীয়৷

ভৌতিক–‘ভুত’ (ghosts) সংক্রান্ত অর্থে ‘ভৌতিক’ শব্দ ব্যবহার না হওয়াই বাঞ্ছনীয়৷ বাংলায় যাকে ভুত বলি তার সংসৃক্ত হচ্ছে ‘প্রেত’৷ প্রেত থেকে ‘প্রৈতিক’ শব্দ আসতে পারে যদিও তার ব্যবহার খুবই সীমিত৷ ন্ধড়প্সব্দব্ধ অর্থে ‘ভুত’ শব্দটা যদি রাখতেই হয় তাহলে তার বিশেষণ হোক ‘ভুতুড়ে’–ভৌতিক নয়৷ সংসৃক্ত ‘ভূত’ শব্দের ‘ঠ’ ক্ বা ‘ষ্ণিক্’ প্রতয়্যান্ত বিশেষণ ভৌতিক’ (Physical)৷