প্রাউট–প্রবক্তা মহান দার্শনিক ঋষি শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার ভাষাতত্ত্ব ও ব্যাকরণ বিজ্ঞানের ওপরও বহু অমূল্য পুস্তক রচনা করেছেন, যা কলকাতা, ঢাকা, কল্যাণী প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা অধ্যাপক সহ বিশিষ্ট ভাষাতাত্ত্বিক ও জ্ঞানী গুণীজনের দ্বারা বহুল প্রশংসিত৷ তাঁর রচিত ‘প্রভাতরঞ্জনের ব্যাকরণ বিজ্ঞানে’ (৩ খণ্ড) তিনি বহু প্রচলিত অনেক বাংলা বানানের ভুলত্রুটি বা অর্থবিচ্যুতি দেখিয়ে সে সবের সংস্কার সাধনেও সচেষ্ট হয়েছেন৷ এ ধরনের কিছু বাংলা বানান সম্পর্কে তাঁর অভিমত তাঁর ভাষাতেই প্রকাশ করা হচ্ছে ঃ ––––জ্ঞানভিক্ষু
কর্ষক ঃ এমনিতে যাঁরা চাষবাস নিয়ে থাকেন তাঁদের জন্যে সংস্কৃত ভাষায় বেশি প্রচলিত শব্দ দু’টি রয়েছে–কৃষীবল ও কর্ষক৷ ‘কর্ষক’ শব্দটি কৃষ ধাতু থেকে উৎপন্ন৷ যাঁরা এই কর্ষককে ‘কৃষক’ বানিয়ে ফেলেছেন তাঁরা না জেনেই এই ভুল করেছেন৷ আর যাঁরা আজও ‘কৃষক’ লেখেন তাঁরা ভুলকে ভুল না জেনেই লেখেন৷ আমরা ‘আকর্ষক’ ‘বিকর্ষক’ বলবার সময় ঠিক বলি কিন্তু কেন বুঝি না ‘কর্ষক’ বলবার সময় ভুল করে কৃষক বলে ফেলি৷
সর্জন ঃ তোমরা ভালভাবেই জান ’সৃজন’ শব্দটি ভুল৷ ‘সৃজ’ ধাতু ল্যুট করে পাই ‘সর্জন’–‘সৃজন’ নয়৷ কারও মধ্যে সৃজনী প্রতিভা থাকে না–থাকে সর্জনী–প্রতিভা৷ আমরা ‘উৎসর্জন’, ‘বিসর্জন’–এর ‘সর্জন’ শব্দটি ঠিকই ব্যবহার করি৷ কেবল শব্দটি উপসর্গ রহিত অবস্থায় থাকলে গোলমাল করে থাকি–বলে ফেলি ‘সৃজন’, ‘সৃজনী’৷ এবার থেকে ‘সৃজন’ শব্দটি ব্যবহার কোরো না৷
উপর্যুক্ত ঃ ‘উপরি উক্ত’–কে অনেকেই ভুল করে উপরোক্ত লেখেন, ভাবেন শব্দটা বোধহয় উপর উক্ত = উপরোক্ত৷ সংস্কৃতে ‘উপর’ বলে কোন শব্দ নেই–আছে ‘উপরি’৷ এই ‘উপরি’ ‘উক্ত’ = উপর্যুক্ত৷