সদ্য সমাপ্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিউইয়র্ক শহরের ৬০টি নির্বাচন কেন্দ্রে ব্যালট পেপারে বাংলা স্থান পেয়েছে৷ নিউইয়র্ক শহরে প্রায় ২০০-এর মত ভাষার মানুষ বাস করেন৷ বাংলাভাষী মানুষের সংখ্যা ১লাখেরও বেশী৷ নিউইয়র্কের বোর্ড অব ইলেকশনের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর জে. রায়ান জানান আইন মেনেই বাংলা ভাষাকে ব্যালটে স্থান দেওয়া হয়েছে৷ এশিয়ার চারটে ভাষা ব্যালটে স্থান পেয়েছে৷ সেই চারটে ভাষার একটি বাংলা৷
পরিতাপের বিষয় যেখানে সুদুর মার্কিনযুক্ত রাষ্ট্রে সংখ্যাধিক্যের জোরে আইন মেনে নির্বাচনী ব্যালটে বাংলা স্থান পায়৷ সেখানে নিজ দেশে নিজের প্রদেশে বাংলা অবহেলিত উপেক্ষিত৷ এখানেও আইন আছে, সাংবিধানিক অধিকার আছে৷ এই আইন ও অধিকার মেনে অনেক রাজ্যেই স্থানীয় ভাষা শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷ কিন্তু স্বাধীনতার ৭৭বছর পরও পশ্চিমবঙ্গের কোন শাসকই বাংলা ভাষার প্রতি দৃষ্টিপাত করেনি৷ কারণটা বোধহয় বিরাট সংখ্যক হিন্দী ভাষীর ভোট হারাবার ভয়ে বাঙলার বাঙালী শাসকেরাই বাংলাকে অবহেলা করে চলেছে৷ বর্তমান শাসকদল ২০১৭ সালে প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত সরকারী বেসরকারী সমস্ত বিদ্যালয়ে বাংলা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল৷ কিন্তু তারপর অজ্ঞাত কারণে আর বেশীদূর এগোয়নি৷ কারণ সম্ভবত সেই একই--- অবাঙালী ভোট হারাবার ভয়৷
‘আমরা বাঙালী’র দীর্ঘদিনের আন্দোলনে দাবী ছিল সরকারী, বেসরকারী ও বোর্ড নির্বিশেষে রাজ্যের সমস্ত স্কুলে বাংলাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে৷ অবিলম্বে প্রথম শ্রেণী থেকে দশমশ্রেণী পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত কার্যকরী করতে হবে৷ ২০১৭ সালে বর্তমান রাজ্য সরকার আমরা বাঙালীর দাবী মেনে ঘোষণা করে এ ব্যাপারে বিধানসভায় বিল আনা হবে৷ রাজ্যসরকার দেরী করে হলেও এই নীতি গ্রহণ করায় আমরা বাঙালী স্বাগত জানিয়ে প্রশ্ণ তোলেন--- কিন্তু কেবল দশম শ্রেণী পর্যন্ত কেন, একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণীতেও এই নীতি কার্যকর করা উচিত৷
অন্যান্য অনেক রাজ্যে, বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতে স্কুলে ওই রাজ্যের ভাষা পড়ানো বাধ্যতামূলক, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এতদিন কোন সরকার তা করেনি৷ অনেক বেসরকারী স্কুল ও সর্বভারতীয় বোর্ড পরিচালিত স্কুলে বাংলা পড়ানোই হয় না৷ বাংলাকে নামমাত্র ঐচ্ছিক ভাষা হিসাবে রেখে দিয়েছে৷ এতে এরাজ্যের অনেক ধনী ও তথাকথিত শিক্ষিত বাঙালী পরিবারের ছেলে-মেয়েরাও তাদের মাতৃভাষাটাই ঠিক ভাবে বলতে বা লিখতে পারে না৷ ইংরাজী ভাষায় বা বাংরেজী (বাংলা+ ইংরাজী মিশ্রিত) ভাষায় কথা বলতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে৷ ফলে বাংলা ভাষার প্রতি --- মাতৃভূমির প্রতি তাদের শ্রদ্ধা ও ভালবাসার অভাব দেখা দিচ্ছে৷ তাছাড়া, বাঙলার বাইরে থেকে অনেকে এখান এসে এখানে পড়াশোণা করে স্থানীয় ছেলে-মেয়েদের বঞ্চিত করে এখানকার চাকুরী ক্ষেত্রগুলি দখল করে বসেছে, এখানকার প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষাগুলিতেও অনেক ক্ষেত্রে তারা ভাল ফল করছে৷ এখানে বাংলা পড়া ও পাশ করা বাধ্যতামূলক হলে বাইরের ছাত্র এসে এখানকার স্কুলগুলির আসন দখল করার প্রবণতাও কিছুটা কমবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন৷
এরাজ্যে অনেক আগে থেকে--- এখানকার সমস্ত স্কুলে বাংলা শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা উচিত ছিল৷ এজন্যে ‘আমরা বাঙালী’ দল অনেক দিন থেকে আন্দোলনও করে আসছে৷ শুধু তাই নয়, তাদের দাবী এরাজ্যের সমস্ত সরকারী বেসরকারী কাজ-কর্মে , দোকানের সাইনবোর্ডে ও হিসাবরক্ষার কাজে বাংলার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে৷ বিগত সরকারগুলি বিভিন্ন সময় নীতিগতভাবে এ দাবী মেনে নিলেও আজও বাস্তবে সে দাবী মানা হচ্ছে না৷ রাজ্য সরকার এ ব্যাপারে এখনও কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছেন না, যা অবিলম্বে করা উচিত৷ বাংলা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার ঘোষণা ঘোষণাই থেকে গেছে৷ আরও একটা নির্বাচন পেরিয়ে গেছে সরকার পরিবর্তন হয়নে, তাহলে ঘোষণা বাস্তবায়নে অনিহা কেন?
- Log in to post comments