ঞ ঃ (১) ‘এ্’ (ইঁ) একটি সুপ্রাচীন ধাতু৷ ধাতুটি বিভিন্ন অর্থে প্রচলিত৷ ‘ঞ’ ধাতুর একটি অর্থ ‘জ্বল্ জ্বল্ করা’৷ পৃথিবী থেকে আমরা যে, জ্যোতিষ্কগুলিকে দেখি তাদের মধ্যে শুকতারা সবচেয়ে বেশী জ্বল্ জ্বল্ করে৷ সন্ধ্যা রাত্তিরে এই শুকতারাকে ৰলি ‘সন্ধ্যাতারা’ আর শেষ রাত্তিরে ৰলি শুকতারা৷ আসলে এটি তারাই নয়, সূর্যের একটি গ্রহ.....শুক্রগ্রহ venus) ৷ শুক্র> শুক্ক> গুক৷ মনে রাখা দরকার যে ‘শুকতারা’য় ব্যবহৃত ‘শুক’ শব্দটি তৎসম নয়, তদ্ভব৷ সংস্কৃতে ‘শুক’ শব্দটির অর্থ ‘যে পাখী কথা ৰলে’৷ তাই জ্বল্ জ্বল্ করা অর্থে ‘ঞ’ ধাতু+ ‘ড’ প্রত্যয় করে আমরা ‘ঞ’ শব্দটি পাচ্ছি যার মানে ‘শুক্রগ্রহ’৷ জ্যোতিষিক মতে জড়জগতে ও প্রাণীজগতে শুক্র গ্রহের যে প্রভাব পড়ে সেই প্রভাবকেও ‘ঞ’ ৰলা হয়৷
২) ‘ঞ’ ধাতুর দ্বিতীয় অর্থ হ’ল ‘গুঁতিয়ে দেওয়া’৷ যে জন্তটিকে দেখে মানুষ গুঁতো খাবার ভয়ে ভীত হয় তাকেও ‘ঞ’ ৰলা হয়৷ মানুষ ষাঁড়েব গুতোকেই বেশী ভয় পায়৷ তাই এই অর্থে ‘ঞ’
ধাতুর উত্তর ‘ড’ প্রত্যয় করে যে ‘ঞ’ শব্দটি পাচ্ছি তার মানে ‘ষাঁড়’৷ (৩) ‘ঞ’ ধাতুর আরেকটি ‘অর্থ হ’ল অর্থহীনভাবে হৈ-হল্লা করা’৷ যে ওইভাবে হৈ-হল্লা করে তাকে এই অর্থে ‘ঞ’ ধাতু+ ‘ড’ প্রত্যয় করে ‘ঞ’ ৰলা যায়৷ আবার কোন একটা হাটের* ভেতরে গেলে শুণৰে বিভিন্নধর্মী ধবনি-- যেমন ‘এক সের পটোল দাও গো’, ‘তোমার বেগুনগুলো কানা’, ‘এই ফুলকুপিগুলো ফেটে গেছে’, ‘ও গুলোতে চচ্চড়ি ছাড়া কিছুই হবে না’ কিন্তু হাট থেকে একটু দূরে গেলেই সব রকমের ধবনি মিলেমিশে এক মিশ্র ধবনি উৎপন্ন হয়.......কতকটা হৈ হৈ-এর মত৷ এই হৈ হৈ ধবনিকে যেমন ‘ঞ’ ধাতু+ ‘ড’ প্রত্যয় করে ‘ঞ’ ৰলা হয় তেমনি ‘হাটকে’ ও ‘ঞ’ ৰলা হয়৷ (৪) ‘ঞ’ ধাতুর আরেকটি অর্থ হ’ল ‘গান গাওয়া’৷ তাই ‘ঞ’ ধাতু+‘ড’ প্রত্যয় করে ‘ঞ’ শব্দের দু’টো মানে দাঁড়ায়৷ একটা মানে ‘গান’,দ্বিতীয় মানে ‘গায়ক’৷ এক্ষেত্রে ‘ঞ’ শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ রূপ ‘ঞ’ যার মানে হচ্ছে ‘গায়কী’ (‘গায়িকা’ শব্দটি ভুল)৷ (৫) ‘ঞ’ ধাতুর আর একটি অর্থ ‘পথভ্রষ্ট হওয়া’, ‘বিপথগামী হওয়া’ ‘ধর্মত্যাগ করা’ অথবা ‘পশুত্বের অনুধাবন করা’৷ এই অর্থে ‘ঞ’ ধাতু+ ‘ড’ প্রত্যয় করে যে ‘ঞ’ শব্দ পাই তার মানে হচ্ছে তাই পথভ্রষ্ট, বিপথগামী, ধর্মত্যাগী অথবা পশুস্বভাবের মানুষ৷ (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে সংগৃহীত)