লক্ষণ ও কারণ ঃ প্রাচীনকালে ডায়াবেটিস বা মধুমেহ রোগটিকে সংস্কৃতে মধুমেহ বলা হত৷ বহুমূত্র–ও বলা হত৷ তবে দু’টো এক নয়৷ বহুমূত্র মানে যে রোগে বারবার মূত্রত্যাগ করা হয়৷ মধুমেহ মানে মূত্রে শর্করার ভাগ বেড়ে যাওয়া৷ আসলে শর্করাযুক্ত বহুমূত্র রোগকে মধুমেহ বলা হয়৷ প্রাচীন বৈদ্যকশাস্ত্রে কোন পাত্রে মূত্র রেখে ওপরের অংশকে পৃথক করে, পৃথক ভাবে ওপরের অংশ ও নীচের অংশকে পরীক্ষা করা হত৷ তবেই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যেত রোগীর মধুমেহ বা ডায়াবেটিস আছে কিনা৷ তারপর নিশ্চিত ভাবে রোগ ধরা পড়ত যখন কোন প্রকাশ্য স্থানে মূত্র (গুহ্যনিষ্যন্দ) ঢেলে দেওয়া হত৷ যদি দেখা যেত যে কিছু সময়ের মধ্যে তাতে পিঁপড়ে এসে বসেছে, তাতে নিঃসন্দেহ হওয়া যেত যে রোগীর মধুমেহ রোগ হয়েছে৷
মণিপুর চক্রের দুর্বলতাই এই রোগের কারণ৷ এতে অগ্ণ্যাশয় (pancreas) ও যকৃতের সুস্থতার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে৷ বহুমূত্র/মধুমেহ রোগটি বুদ্ধিজীবীদের রোগ৷ যাঁরা শারীরিক পরিশ্রম করেন এ রোগ তাঁদের ক্কচিৎ দেখা যায়৷ ঙ্মবহুমূত্র রোগে চক্রাসন, ময়ূরাসন, জানুশিরাসন উপকারীক্।
ঔষধ ও পথ্য ঃ
(১) উচ্ছে
পরিচিতি ও প্রজাতি ঃ উৎস - কন্ + টা = উৎসিকা৷ যে তরকারীটি খেলে শরীরের বিভিন্ন উৎস থেকে লালা উৎসারিত হয়ে খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে তাই–ই উৎসিকা৷ উৎসিকা>উচ্ছিআ>উচ্৷ সে জন্যে উচ্ছে প্রথম পাতে খেতে হয়৷ আদিম অবস্থায় বা বন্য অবস্থায় উচ্ছে বাংলার পথে–ঘাটে এখনও জন্মায়৷ এই বুনো উচ্ছেগুলি আকারে খুব ছোট, অতিমাত্রায় তিক্ত ও ঔষধীয় গুণ এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী৷ দ্বিতীয় ধরনের উচ্ছে হ’ল চাষের উচ্ছে৷ বুনো উচ্ছেকে চর্চার দ্বারা উন্নীত করে চাষের উচ্ছের সৃষ্টি হয়েছিল৷ এই উচ্ছে আকারে কিছুটা বড়৷ তিক্ততা বুনো উচ্ছের চেয়ে কিছুটা কম৷ উত্তর ভারতে এই চাষের উচ্ছেকে বলা হয় ‘করেলী’৷ এই চাষের উচ্ছেকে চর্চার দ্বারা আবার বৃহদায়তন করলে যা হয় তাকে উত্তর ভারতে বলা হয় ‘করেলা’৷ বাংলায় বলা হয় ‘করলা’৷ চাষের উচ্ছের চেয়ে অনেক বেশী লম্বা, তিক্ততা কম, গুণও কম৷ সংস্কৃতে তিনটিকেই উৎসিকা বলা চলে৷ ইংরেজীতে বলে Bitter gaurd৷
বহুমূত্র / মধুমেহ রোগে ঃ ছোট উচ্ছে (বা বুনো উচ্ছে) ছেঁচে সেই রস সকালে খালি পেটে রোগীকে পান করানো হলে ভাল ফল পাওয়া যায়৷
(২) জাম
মধুমেহ রোগের ঔষধ ও প্রতিষেধক ঃ
ফলের মধ্যে জম্বুফল বা জাম সর্বগুণাধার৷ কিছুটা কষ থাকায় তা মধুমেহ রোগের প্রতিষেধক৷ মধুমেহের প্রতিষেধক রয়েছে জামের অস্থির (আঁটির) অন্তর্গত সারবত্তাতে (সার অংশে)৷ জামের (ফলের) ভিতরের অংশও (Pulp) মধুমেহের ঔষধ৷ জামফলের ক্ষীজ ভেঙ্গে তার ভেতরের শাঁস এক আনা পরিমাণ (সিকি চামচ) মধু সহ লেহন করে খেলে মধুমেহ রোগে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়৷
(৩) তেলাকুচা
মধুমেহ রোগের ও জণ্ডিস রোগের ঔষধ ঃ
তেলাকুচা (সংস্কৃতে ‘বিম্ব’) পাতার রস এক তোলা (১২ গ্রাম–দু’চামচের একটু বেশী) মধুসহ প্রত্যুষে লেহন করে খেলে এই রোগ প্রশমিত হয়৷ ডায়াবেটিস রোগের বাড়াবাড়ির সময় ছোলার ডাল–বাটা বা বেসনের সঙ্গে তেলাকুচা পাতা ফেটিয়ে বা ফেনিয়ে নিয়ে ছাঁকা তেলে ভাজলে যে বড়া বা ফুলুড়ি তৈরী হয় তা ডায়াবেটিস রোগে আহার ও ঔষধ দুই–ই৷
জন্ডিস বা ন্যাবা রোগে তেলাকুচো পাতা ও পেয়ারা পাতা জলে ভাল করে সেদ্ধ করে, ওই জল চায়ের মত করে এক কাপ দিনে ৩/৪ বার খেতে হয়৷ যদি জন্ডিসের ফলে যকৃতে ক্ষতের সৃষ্টি হয় তাহলে কাঁচা আমের খোসা জলে সেদ্ধ করে, তা শিলে বেটে নিয়ে, ওই জলে মিশিয়ে দিনে ৩/৪ বার সেব্য৷ একটি কচি আকন্দ পাতায় কিছুটা আখের গুড় মুড়ে নিয়ে চিবিয়ে ভক্ষণ করে নিলে জন্ডিস রোগে ভাল ফল পাওয়া যায় (খালি পেটে নয়)৷ কালমেঘ পাতার রস আধ কাপ পরিমাণ ১৫ দিন খেলেও এই রোগে সুফল পাওয়া যায়৷ জন্ডিসে মূলোর রস, আখের রস সুপথ্য৷ রোগের বাড়াবাড়ি অবস্থায় রোগীকে বিছানাতেই শুয়ে থাকতে হয়৷ এমনকি পায়খানা–প্রস্রাবও বিছানাতেই সারতে হয়৷ক্ষ
(৪) ওল গাছের পাতা বা পাতার বড়া মধুমেয় রোগের ঔষধ
(৫) নিমের রস (পাতা ছেঁচে) মধুমেহ রোগের ঔষধ (ভোরে খালি পেটে) নিয়মিত খেলে রক্তে শর্করার ভাগ কমাতে এ সাহায্য করে৷
(৬) টক আম মধুমেহ রোগে ঔষধের কাজ করে৷
(৭) (মধুমেহ) রোগীর ক্ষারধর্মী খাদ্য অধিক পরিমাণে ব্যবহার করা উচিত৷ রোগীকে লোভ সংবরণ করতে হবে ও উপবাস অভ্যাস করতে হবে৷
(শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের দ্রব্যগুণে রোগারোগ্য থেকে)