সেদিন বিজন সেতুর বুকে প্রকাশ্য দিবালোকে
অকস্মাৎ নেমে এসেছিল সূর্যহারা অরণ্যের অন্ধকার
শাসককুলের যত কুলাঙ্গার
ষড়যন্ত্রের নিশ্চিদ্র জাল করেছিল বিস্তার৷
মানব সেবায় নিবেদিত প্রাণ
সপ্তদশ অবধূত অবধূতিকা---
মিথ্যা গুজবের অপবাদ তাঁদের জীবন
গ্রাস করেছিল আগুনের লেলিহান শিখা৷
কী যন্ত্রনা, কী নিষ্ঠুরতা, সাহায্যার্থে
চউত্রিশ হাতের আকুল আবেদন হল নিষ্ফল৷
পিশাচের অট্টহাসি, নরঘাতকের দল---
তখন জড়বাদীদের জমানা,
ওরা ‘ধর্মেন হীনা’ তাই ‘পশুভিসমানা’৷
মনে পড়ে মহাভারতের সেই কলঙ্কিত অধ্যায়?
দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ
নারী নির্যাতন?
সভায় উপস্থিত রথী মহারথী বীর পুঙ্গব
বড় বড় যোদ্ধারা
দ্রৌপদীর কাতর কান্নায় কারো বিবেক কাঁপেনি৷
দুর্র্যেধনের পৈশাচিক অট্টহাসি
ত্রস্ত বিহঙ্গরা শুধু ডানা ঝাঁপটেছিল
যন্ত্রণায় লজ্জায়
আর বীর যোদ্ধারা ভয়ে মূক৷
রাষ্ট্র মাঝে মাঝে দেশকে এমনিভাবে দমিয়ে রাখে৷
শুভবুদ্ধিকে পাঠায় কবরে৷
কী দরকার ছিল জরুরী অবস্থার?
আসলে দরকার ছিল একমাত্র স্বৈরতন্ত্র কায়েম,
নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ভোগ৷
সেদিনও দেশের গণমান্য দেশ বরেণ্যরা
রাষ্ট্রের ভয়ে বাক্যহারা৷
দেশের চারিদিকে পাহাড়,
সমুদ্র মরুভূমি
যেন লুপ্ত,
শুধু কারাগার, বিচারহীন অন্ধকার আর হাহাকার৷
সেই ধারাবাহিকতারই চিত্ররূপ বিজন সেতু,
ছিল না কোন যুক্তিগ্রাহ্য হেতু
তথাপি আধিভৌতিক, আধিদৈবিক আধ্যাত্মিক
সমস্যা-সমাধানকল্পে সরল মনের চলমান
সপ্তদশ সন্ন্যাসী সন্ন্যাসিনীর
অগ্ণিদহনে হল অসময়ে মর্মান্তিক মৃত্যু৷
সাহায্যার্থে সেদিনও কেউ আসেনি এগিয়ে
ভীতচিত্ত সুশীল সমাজ আতঙ্কে নিশ্চুপ৷
মুখে কুলুপ,
নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান, জানলা দরজা বন্ধ৷
শাসকের রক্ত চক্ষুর তির্যক দৃষ্টিতে ত্রাস
তাই প্রতিবাদ করেছিল শুধু রাস্তার কয়েকটি কুকুর,
প্রহারের ভয় না পেয়ে পশু হয়ে ও
পাশবিকতার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল---ঘেউ ঘেউ
তথাপি অন্ততঃ তাদের দেখেও এগিয়ে আসেনি কেউ৷
আর মুখ্য প্রশাসক ও
রাজ দণ্ড ধূলায় লুন্ঠিত, রাজ ধর্মচ্যুত দলদাস৷
অমানবিকতার চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত৷
ভালমানুষের নকল ভাবমূর্ত্তির ঘেরাটোপে
চর্ব-চোষ্য-লেহ্য-পেয় সহযোগে আরামে দিনযাপন
উনি না হাসেন, না কাঁদেন---নির্বিকার৷
শোণরে ভণ্ড যত পাষণ্ড তোদের দণ্ড অনিবার্য৷
সন্ন্যাসী হত্যাকারীর বংশে কেউ থাকবে না বাতি দিতে
এ নয় আমার নিদান
এ শাস্ত্রের বিধান৷
- Log in to post comments