বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

                   সেদিন বিজন সেতুর বুকে প্রকাশ্য দিবালোকে

                   অকস্মাৎ নেমে এসেছিল সূর্যহারা অরণ্যের অন্ধকার

                   শাসককুলের যত কুলাঙ্গার

                   ষড়যন্ত্রের নিশ্চিদ্র জাল করেছিল বিস্তার৷

                   মানব সেবায় নিবেদিত প্রাণ

                   সপ্তদশ অবধূত অবধূতিকা---

                   মিথ্যা গুজবের অপবাদ তাঁদের জীবন

                   গ্রাস করেছিল আগুনের লেলিহান শিখা৷

                   কী যন্ত্রনা, কী নিষ্ঠুরতা, সাহায্যার্থে

                   চউত্রিশ হাতের আকুল আবেদন হল নিষ্ফল৷

                   পিশাচের অট্টহাসি, নরঘাতকের দল---

                   তখন জড়বাদীদের জমানা,

                   ওরা ‘ধর্মেন হীনা’ তাই ‘পশুভিসমানা’৷

                   মনে পড়ে মহাভারতের সেই কলঙ্কিত অধ্যায়?

                   দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ

                   নারী নির্যাতন?

                   সভায় উপস্থিত রথী মহারথী বীর পুঙ্গব

                   বড় বড় যোদ্ধারা

                   দ্রৌপদীর কাতর কান্নায় কারো বিবেক কাঁপেনি৷

                   দুর্র্যেধনের পৈশাচিক অট্টহাসি

                   ত্রস্ত বিহঙ্গরা শুধু ডানা ঝাঁপটেছিল

                   যন্ত্রণায় লজ্জায়

                   আর বীর যোদ্ধারা ভয়ে মূক৷

                   রাষ্ট্র মাঝে মাঝে দেশকে এমনিভাবে দমিয়ে রাখে৷

                   শুভবুদ্ধিকে পাঠায় কবরে৷

                   কী দরকার ছিল জরুরী অবস্থার?

                   আসলে দরকার ছিল একমাত্র স্বৈরতন্ত্র কায়েম,

                   নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ভোগ৷

                   সেদিনও দেশের গণমান্য দেশ বরেণ্যরা

                   রাষ্ট্রের ভয়ে বাক্যহারা৷

                   দেশের চারিদিকে পাহাড়,

                   সমুদ্র মরুভূমি

                   যেন লুপ্ত,

                   শুধু কারাগার, বিচারহীন অন্ধকার আর হাহাকার৷

                   সেই ধারাবাহিকতারই চিত্ররূপ বিজন সেতু,

                   ছিল না কোন যুক্তিগ্রাহ্য হেতু

                   তথাপি আধিভৌতিক, আধিদৈবিক আধ্যাত্মিক

                   সমস্যা-সমাধানকল্পে সরল মনের চলমান

                   সপ্তদশ সন্ন্যাসী সন্ন্যাসিনীর

                   অগ্ণিদহনে হল অসময়ে মর্মান্তিক মৃত্যু৷

                   সাহায্যার্থে সেদিনও কেউ আসেনি এগিয়ে

                   ভীতচিত্ত সুশীল সমাজ আতঙ্কে নিশ্চুপ৷

                   মুখে কুলুপ,

                   নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান, জানলা দরজা বন্ধ৷

                   শাসকের রক্ত চক্ষুর তির্যক দৃষ্টিতে ত্রাস

                   তাই প্রতিবাদ করেছিল শুধু রাস্তার কয়েকটি কুকুর,

                   প্রহারের ভয় না পেয়ে পশু হয়ে ও

                   পাশবিকতার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল---ঘেউ ঘেউ

                   তথাপি অন্ততঃ তাদের দেখেও এগিয়ে আসেনি কেউ৷

                   আর মুখ্য প্রশাসক ও

                   রাজ দণ্ড ধূলায় লুন্ঠিত, রাজ ধর্মচ্যুত দলদাস৷

                   অমানবিকতার চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত৷

                   ভালমানুষের নকল ভাবমূর্ত্তির ঘেরাটোপে

                   চর্ব-চোষ্য-লেহ্য-পেয় সহযোগে আরামে দিনযাপন

                   উনি না হাসেন, না কাঁদেন---নির্বিকার৷

                   শোণরে ভণ্ড যত পাষণ্ড তোদের দণ্ড অনিবার্য৷

                   সন্ন্যাসী হত্যাকারীর বংশে কেউ থাকবে না বাতি দিতে

                   এ নয় আমার নিদান

                   এ শাস্ত্রের বিধান৷